বগুড়ায় জমজমাট সুদের ব্যবসা, নিঃস্ব সাধারণ মানুষ !

343

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব, শাজাহানপুর বগুড়া প্রতিনিধি): করোনা দৃর্যোগ কালীন মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বগুড়া সদর সহ সকল উপজেলায় চলছে জমজমাট সুদের ব্যবসা। পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ও ক্ষুদে ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লোভ দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে সুদ্রে উপর টাকা।

এই টাকা চক্রাকারে বৃদ্ধি হওয়ায় ফলে কর্ম জীবনে ঘুরে দাঢ়ানো তো দুরের কথা, দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে জড়িয়ে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে চলেছেন দাদন ব্যবসায়ীরা।

জেলা সদর থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া ও মহল্লার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মধ্যবিত্ত পরিবার এবং প্রায় প্রতিটি নিম্নবিত্ত পরিবার দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অবৈধ এ দাদন ব্যবসা সম্পর্কে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমনই ভয়াবহ তথ্য।

ক্ষুদ্র ঋণের নামে বিভিন্ন এনজিও এর দাদন ব্যবসার কাহিনী বেশ পুরনো। তাদেরই অনুসরণে এ ব্যবসা শুরু করে বিভিন্ন সমবায় সমিতি সহ বিভিন্ন সমিতি। সর্বশেষ, এনজিও এবং বিভিন্ন সমবায় সমিতিসহ বিভিন্ন সমিতির অনুসরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এ ব্যবসা শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যক্তি।

জামানত হিসাবে জায়গা-জমি বা গাড়ি-বাড়ির মালিকানা কাগজপত্র, ব্যাংক চেক ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চড়া সূদসহ নির্ধারিত দৈনিক কিস্তি পরিশোধের শর্তে বিভিন্ন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী, ফুটপাতের যেকোন ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও যেকোন ধরনের ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, বাসার কাজের বুয়া, রিকশাচালক, ভ্যান চালক সহ প্রভৃতি শ্রেণীর মধ্যবিত্ত লোকজনের মাঝেই এরা ক্ষুদ্র ঋণের নামে চড়া সুদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।

এরকম দাদন ব্যবসায়ী অনেকে। তারা সুদ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নামে লোন দিয়ে থাকে। সাইন বোর্ড বিহীন এসব প্রতিষ্ঠান। কয়েকজনে মিলে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে ও একত্রে টাকা গচ্ছিত করে সুদের উপর টাকা দিচ্ছে। তাদের দাম্ভিকতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ।

এইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা অনেক । সুদের টাকা আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন লোকজনের সাথে ঝগড়া বিবাদ নিত্ত নৈমিÍক ঘটনা। লোন নামীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন নামের শতাধিক সুদ ব্যবসায়ী রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

একইভাবে জেলার প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে এ ধরনের অনেক সুদ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগত সুদ ব্যবসায়ীর সংখ্যা সারা জেলায় কয়েক হাজারের বেশি হবে বলে এলাকাবাসি সুত্রে জানাগেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- এসব সুদ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ সবাই নিজেদেরকে সরকার অনুমোদিত বৈধ ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন।

অথচ, বৈধতার প্রমাণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এভাবে অবৈধ দাদন ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি ও বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনছেন দাদন ব্যবসায়ীরা।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, এসব সুদ ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে রয়েছে গভীর আঁতাত। ফলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও ভয় পায় সাধারন মানুষ। তারা জানান, বিচার প্রার্থী হয়েও লাভ নেই। যে লাউ সেই কদুই হবে। মাঝখানে শত্রুতা বাড়বে। ফলে এমন দুর্বৃত্তায়নের দাম্ভিকতায় দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে জড়িয়ে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।