মানুষের সেবায় যে ডাক্তার নিজেকে বিলাবার বাসনায় রত; আজ তিনি পরিবার নিয়ে হাসপাতালে রোগীর শয্যায় !

সাধারণ মানুষের কাছে এক প্রিয় নাম ডা. শিবলী হায়দার :

সুপ্রভাত বগুড়া (রোবল লোদী): ডা. শিবলী হায়দার। এক প্রিয় নাম সাধারণ মানুষের কাছে। আজ থেকে বছর সতেরো আগে বুকে একটু ব্যাথা অনুভব করায় সবাই পরামর্শ দিলেন তাঁর কাছে যেতে। বগুড়ায় ভাইপাগলা মাজার সন্নিকটে একটা ক্লিনিকে তখন তিনি রোগী দেখেন।

আমি এক সন্ধ্যায় তাঁর স্মরণাপন্ন হই। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর আমার ডাক পড়ে। তাঁর কক্ষে ঢুকতেই তিনি আমাকে দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। বলেন,”আপনি? কখন এসেছেন?একটু জানাবেন না?বসেন বসেন।

এবার বলেন কেন এসেছেন?” আমি খুবই বিস্মিত হই। আমার মতো একজন অতি সাধারণ মানুষকে তার মতো এতবড় স্বনামখ্যাত চিকিৎসক এমন করে বলছেন কেন? আমি আমার সমস্যা বলি।

তিনি স্টেথিস্কোপ বুকে ধরেন,পালস দেখেন আরো কিছু খুঁটিনাটি দেখে হাসতে হাসতে বলেন ‘ইয়াংম্যান ভয়ের কিছু নেই। একটা ইসিজি করে আমাকে একটু দেখাবেন। চা খান।” ডাক্তারদের এমন আচরণে যদিও আমি ইতোমধ্যেই অভস্ত হয়ে উঠেছি।

দেশের বিখ্যাত নিউরো সার্জন ডা. আফজাল হোসেন, কোলকাতার স্বনামধন্য নিউরো সার্জন ডা.তৃষিত রায়, যার সিরিয়াল পেতেই লাগে অর্ধ বছর, ভারতের জগত বিখ্যাত চিকিৎসক ড. রাউথ এর অবাক করা ব্যাক্তিত্বে। আমি চা না খেয়ে কেটে পড়ার ধান্ধা করি।

উনি বলেন “আচ্ছা ঠিক আছে। আরেকদিন চা খেতে খেতে আড্ডা দেয়া যাবে। আপনি রুম থেকে বের হয়ে সোজা চলে যাবেন। আপনার কোন ভিজিট লাগবে না।” আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। শ্রদ্ধায় ভাললাগায় এক নিগুঢ় ভালবাসা তৈরী হয় আমার ভিতর।

আমি বের হবার দরজার হাতলে হাত রাখতেই তিনি আমায় পিছু ডাকেন “রুবল আপনি কিন্তু দারুণ অভিনয় কারেন। Keep it up.” আমি বিশাল অনুপ্রেরণা নিয়ে ক্লিনিক ত্যাগ করি। বুকের ভেতরের সব সমস্যাই উধাও হয়ে গেল। ইসিজি করার পর অপারেটর যখন বললেন আপনার রিপোর্ট ভাল আমি আর ডাক্তারকে বিরক্ত করিনি।

ডা.শিবলী হায়দারের কাছে সেই আমার প্রথম এবং শেষ যাওয়া। বরাবরই বেশি ব্যাস্ত মানুষদের অযথা বিরক্ত করতে দ্বিধা হয়। এমন কি টেলিফোন করতেও কেমন যেন ইতস্তত বোধ কিরি। তাঁদের কথা যে ভুলে যাই তা কিন্তু নয়।

আমার শ্রদ্ধা ভালবাসা স্নেহের জনেরা বাস করে আমার বুকের ভেতর। সেই প্রিয় ডাক্তার আজ কেন করোনা আক্রান্ত তা কাউকে বলে দিতে হবে না। তাঁর মতো মানুষ এই মানবিক দুর্যোগে ঘরে বসে থাকবার কেউ নন।

মানুষের সেবায় নিজেকে বিলাবার বাসনায় আজ তিনি পরিবার নিয়ে হাসপাতালে রোগীর শয্যায়। এ যে কতবড় কষ্ট আমার মতো অসংখ্য মানুষের যারা শিবলী হায়দায়কে একটু হলেও চেনেন।

কতকিছু করতে মন চাইছে তাঁর জন্য। এই অচেনা সময় তো সবকিছুর অন্তরায়। শুধু প্রার্থনা মহান রাব্বুল আলামীন যেন তাঁর পরিবার সহ তাঁকে পুর্ণ সুস্থতা দান করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here