শাজহানপুরে গোপনে বাল্যবিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান মেম্বার ! প্রতিরোধ করবে কে ?

288
শাজহানপুরে গোপনে বাল্যবিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান মেম্বার ! প্রতিরোধ করবে কে । ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর,বগুড়া প্রতিনিধি): রক্ষক যখন ভক্ষক হয় বিচারের বাণী তখন নিভৃতে কাঁদে। তেমনি দায়িত্ব পালনে অংগীকারাবদ্ধ হয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করা তো দুরের কথা, আরও নিজ ব্যবস্থাপনায় বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জাম্যান অটল তার ভাতিজি খাদিজাকে ১৩ বছর বয়সে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করেছেন।

খাদিজা উপজেলার বড় নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী এবং ইউপি চেয়ারম্যান অটলের বড়ভাই রাজারামপুর গ্রামের মোঃ দুলু আকন্দের মেয়ে। সোমবার ৬ জুলাই রাজারামপুর গ্রামের লোকজন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা বলেন, অতি গোপনে এই বাল্যবিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। চেয়ারম্যান অটল এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার দুপুরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, খাওয়া-দাওয়া ও বর-কণের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে আশির্বাদ করে তিনি বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। বিয়েতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ শহীদও দায়িত্ব পালন করেন।

খাদিজার চাচা ইসমাইল আকন্দ জানান, বগুড়া শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ বাংড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে ছাব্বিরের সাথে খাদিজাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভাল ছেলে পাওয়ায় সকলের পরামর্শে কয়েকদিন আগে কোর্টে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এখন শুধু বরের হাতে কণেকে তুলে দেওয়া হলো। এতে দোষের কি। চেয়ারম্যান অটল ও ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মামুনুর রশিদ শহীদ সহ সকলেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। সকলেই খাওয়া-দাওয়া শেষে আশির্বাদ করে গেছে।

তবে কোর্ট ম্যারেজ বিয়ের কাগজ, জন্ম নিবন্ধন এবং কোন কাজী এই বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন তা দেখতে ও জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এসব দেখাতে আমরা বাধ্য নই। তবে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, ভুয়া তথ্য এবং ভুয়া জন্ম সনদে বয়স গোপন করে বাল্যবিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বীরদর্পে সম্পন্ন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এ এলাকায় বাল্যবিয়ে অতি গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। কাজীদের চাহিদা মত টাকা দিলে সব ব্যবস্থা করে দেয়। বিয়ে রেজিষ্ট্রির বই কাজীদের কাছে কয়েকটা থাকে। তারা আইনি জটিলতা এড়াতে বাল্য বিয়েগুলো খসড়া খাতায় লিখে রাখে। কেউ জানলে অস্বীকার করে আর না জানলে কিছুদিন পর প্রকৃত রেজিষ্ট্রারে লিখে।

তারা আরও জানান, বাল্য বিয়ে বন্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও চেয়ারম্যানের ভাতিজি হওয়ায় বীরদর্পে এই বাল্যবিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ইউনিয়নে এরকম আরও অনেক বাল্য বিয়ে হলেও বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ দেখা যায়না।

আর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ শহীদ বলেন, মেয়েটি চেয়ারম্যানের ভাতিজি হওয়ায় আমি কোন কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। শুনেছি, কয়েকদিন আগেই কোর্টে এই বিয়ে হয়েছে। চেয়ারম্যান এবং তার ভাই আমাকে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিল তাই বিয়েতে গিয়েছিলাম। বিয়ের সব দায়িত্ব চেয়ারম্যান পালন করেছে।

এদিকে চেয়ারম্যান হয়ে নিজ ভাতিজিকে বাল্য বিয়ে দেয়ার কারন জানতে চাইলে আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল জানান, বিয়ের দাওয়াত খেয়েছি। এখন অনেক কাজ আছে। পরে কথা হবে।
অপরদিকে এই বাল্যবিয়ে সম্পর্কে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা পারভিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।