শুধু করোনাকালে নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী কোন ধরণের ত্রাণ পায়নি ঠাকুরগাঁওয়ের যে গ্রাম

সুপ্রভাত বগুড়া (আলমগীর হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি): দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৮ বছর পেড়িয়ে গেলেও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৮ নং রহিমানপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হাজীপাড়া গ্রাম ও ৫ নং ওয়ার্ডের হজকটুপাড়ার অধিবাসিরা আজ পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণ পায়নি বলে দাবি করেছে।

তাদের দাবি দেশে অনেক দূর্যোগ-মহামারি হয়েছে কিন্তু কোন সরকারের আমলেই তারা সরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। আজ শুক্রবার (১ মে) বিকেলে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে এমনি অভিযোগ করে এলাকাবাসি।

বয়োজ্যেষ্ঠ আমেনা খাতুন (৬৫) জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার বহু বছর পেরিয়ে গেছে, দেশে বহু দূর্যোগ-মহামারি পেড়িয়ে গেছে, বহুবার সরকার বদল হয়েছে কিন্তু আজ অবধি আমাদের গ্রামে কোন ধরণের সরকারি সহায়তা আমরা পাইনি। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বলেও কোন লাভ হয়নি।

ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মাঝ বয়সী এক নারী অভিযোগ করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গত এক মাস যাবৎ আমার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে অথচ আমরা আজ পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে থেকে দিন যাপন করছি।

আলতাফুর নামে এক গ্রামবাসি জানান, আমাদের গ্রামটি ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে ও পৌরসভার কাছাকাছি হওয়ায় কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নিতে আসে না। বার বার এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। তারা আজ দিবো, কাল দিবো বলে শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়ে রাখছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা শেখ সামসুল হক জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার আমাদের ঘরে আটকায় রাখছে, কিন্তু আমাদের কোন খাবার দেয় না। আমরা কোথায় যাবো, বাইরে গেলে করোনার ভয়, আর বাড়ীতে বসে থাকলে না খেয়ে মৃত্যু !

ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইদ্রিস আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি গত সপ্তাহে পেয়েছি ৯টা এবং আগামীকাল আমার বরাদ্দ আছে ১২টি। এই সীমিত সংখ্যক ত্রাণ দিয়ে আমি কিভাবে এলাকাবাসিকে সহযোগিতা করবো।

একই সুরে কথা বলেন ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদেকুল ইসলাম, তিনি জানান আমি এ পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছি ৪০-৪২টি, আমার এলাকায় ২৮০০জন বাসিন্দা। এরমধ্যে আশিভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের। ত্রাণের বরাদ্দ না পেলে আমি কিভাবে তাদের ত্রাণ সামগ্রী দিবো।

এ বিষয়ে জানতে ৮নং রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসান মো: আব্দুল হান্নান হান্নু’র সাথে শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা ক্রমাগতভাবে ত্রাণ পাওয়া সাপেক্ষে বিতরণ করে চলেছি।এরমধ্যে দু’এক জায়গায় মিসিং হতে পারে।তবে পরবর্তীতে ত্রাণ পেলে ওই এলাকাটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দূ:খজনক। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। আজ পর্যন্ত ওই এলাকায় কেনো ত্রাণ পৌঁছায়নি তা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here