সুপ্রভাত বগুড়া (জাতীয়): বাঙালীদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম ১২২ মিটার পাইল স্থাপন, ১৫ টন ওজনের ৯৮৭২৫ কিলো নিউটন ক্ষমতা সম্পন্ন ফিকশন প্যান্ডিলাম বেয়ারিং ব্যবহার ও নদী শাসনের সর্বোচ্চ ১.১ বিলিয়ন (প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ কোটি) টাকা টাকার চুক্তি নিয়ে এই তিন রেকর্ড। কোটি মানুষের আকাঙ্খার পদ্মা সেতু স্বপ্নের দোরগোড়ায়। তবে, সেতুর যাত্রা পথ বহু চ্যালেঞ্জের। অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, বন্যা, অত্যাধিক পলি, ঘন কুয়াশা, নদীর তলদেশে মাটির গঠন ভিন্নতা, নানামূখি জটিলতা।
সব দিক থেকেই যেন পদ্মা সেতু করতে প্রকৃতির বাঁধা। এসব প্রতিকূলতা জয় করতে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে যা বিশ্বে বিরল। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, এমন নদীর সাথে তুলনা চলে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর সাথে। ঝঞ্ছা বিক্ষুব্ধ নদীর এই পরিবেশের সাথে মানাতে না পেরে অনেক দেশি বিদেশী প্রকৌশলী চলেও গেছেন।
তারপরও থামেনি মানুষের প্রচেষ্টা। এরপর আবার বাঁধা পড়ে পদ্মা সেতুর কাজ। ২০১৭ সালের শেষের দিকে দেখা দেয় পাইলিং জটিলতা। সেতুর ২২টি পিলারের জায়গাতে নদীর তলদেশে শক্ত মাটির জায়গায় কাদামাটি পাওয়া যায়। সমাধান পেতে লেগে যায় প্রায় এক বছর। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন জানান, প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতুতে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে।
এই প্রকল্পে শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর চ্যালেঞ্জ নেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা এখন বাংলাদেশের সক্ষমতার বহি:প্রকাশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্ট্রিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসাবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭-৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু দৃশ্যমান হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।