অবশেষে হিমালয়ের দেশের ‘চূড়ায়’ উঠল বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা

অবশেষে হিমালয়ের দেশের ‘চূড়ায়’ উঠল বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা

অবশেষে হিমালয়ের দেশের ‘চূড়ায়’ উঠল বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অধরা ট্রফি জিতল বাংলাদেশ। গতকাল ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এর আগে সাফে তিনবার সেমিফাইনাল ও একবার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ।

এবারই দেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে সেরা সাফল্য পেয়েছে মেয়েরা। দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি জানিয়েছেন, এটিই তার জীবনের সেরা দিন।

Pop Ads

এদিকে, সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বীর নারীদের এই জয়ে পুরো জাতি আজ গর্বিত। এই অদম্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে কৃষ্ণা রানী (জোড়া গোল) ও শামসুন্নাহারের গোলে নতুন ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। ২০১০ সাল থেকে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিনশিপের পথচলা শুরু। গত টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এবার তারা নেপালের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৪৫ ধাপ এগিয়ে থাকা নেপালকে (১০২) হারিয়ে শিরোপা জিতল বাংলাদেশ (১৪৭)।

ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাত্তাই পেলেন না হিমালয়কন্যারা। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এর পর এই প্রথম সাফের শিরোপা পেল বাংলাদেশ। দেশের পুরুষ ফুটবল যখন তলানিতে, তখনই আলো ফুটেছে নারী ফুটবলে।

টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্ব থেকেই দুরন্ত ছিল মেয়েরা। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে যাত্রা করে তারা। এর পর দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশের মেয়েরা। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৫৮ নম্বরে থাকা শক্তিশালী ভারতকেও ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। টানা তিন ম্যাচ জিতে সর্বোচ্চ ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন সাবিনারা।

শেষ চারের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পাননি ভুটানিরা। বাংলাদেশ ৮-০ গোলে ভুটানকে হারায়। ফাইনালে ওঠা নেপালকে ঘরের মাঠে হতাশ করে স্বপ্নের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে সেমিফাইনালের দল নিয়েই মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে ওঠা সিরাত জাহান স্বপ্নাকে ঘিরে শঙ্কা ছিল। শঙ্কাই সত্যি হয়।

খেলা শুরু হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই স্বপ্নাকে মাঠ থেকে তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ। তার বদলি হিসেবে মাঠে নেমে কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। ১৩ মিনিটে তার গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। মনিকা চাকমা ক্রস থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করেন ডি বক্সে থাকা শামসুন্নাহার। এর পর গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠেন নেপালের মেয়েরা।

কিন্তু কোনো আক্রমণেই সফল হতে পারেননি তারা। বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানায়। সফলও হন তারা। ৪১ মিনিটে সাবিনা খাতুনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে কৃষ্ণা রানী সরকার গোল করেন। প্রতিপক্ষের বাধা পেরিয়ে তার নেওয়া জোরালো শট কোনোভাবেই ঠেকাতে পারেননি নেপালের গোলরক্ষক। তার দুর্দান্ত ফিনিশিং দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে! প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে ৭০ মিনিটে অনিতা বাসনেটের গোলে স্কোর লাইন ২-১ করে নেপাল।

কিন্তু স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ৭৭ মিনিটে আরও একটি গোল উপহার দেন তিনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। এতে নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে যায় নেপালের দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবধান ধরে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটনের শিষ্যরা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন সাবিনা খাতুন। ৮ গোল করেন তিনি।

ম্যাচশেষে তিনি জানান, এক যুগের বেশি সময়ের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। যে ট্রফি জিতেছেন তারা, সেটি সারাদেশের মানুষের জন্য। বাংলাদেশ নারী দলের সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার সফল কোচিংয়েই দেশের জন্য বড় সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন অদম্য মেয়েরা।

এদিকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, গৌরবময় এ অর্জন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত করল নতুন মাইলফলক। দলের খেলোয়াড়, কোচসহ বাফুফের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান স্পিকার।

এ ছাড়া সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনীপ্রধান এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

পদত্যাগ করলেন নেপাল কোচ
বাংলাদেশের কাছে হেরে নেপাল নারী দলের কোচ কুমার থাপা পদত্যাগ করেছেন। থাপার পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছে গোল নেপালডটকম। সেখানে কোচ বলেছেন, ‘নেপাল জাতীয় নারী দলের কোচের দায়িত্ব থেকে আমি পদত্যাগ করছি। যদি কেউ সাফল্য না পায়, তার এই পদে থাকা উচিত না।’