আগামী ১ আগস্ট থেকে শিল্প কারখানা খোলা থাকবে : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

391
আগামী ১ আগস্ট থেকে শিল্প কারখানা খোলা থাকবে : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

আগামী ১ আগস্ট থেকে শিল্প কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সব ধরনের শিল্প কারখানা খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন শিল্প কারখানার মালিকরা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপাের্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, সরকারের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে যেসব শ্রমিক ঢাকায় আছেন, তাদের নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতে চান তারা। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক শেষে শিল্প কারখানা খোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বলেন, ৫ আগস্টের আগে শিল্প কারখানা খোলা যায় কিনা সে বিষয়ে শিল্পপতিসহ অনেকেই সরকারকে অনুরোধ করেছেন।

Pop Ads

কিন্তু এই অনুরোধ সম্ভবত রাখতে পারছি না। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুর দেড়টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পুলিশ প্রধান, বিজিবি প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ঈদের পর থেকে প্রায় এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখনো আমাদের স্টকে এক কোটির উপরে ভ্যাকসিন আছে। দেশে করোনার মৃত্যু ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। এটা প্রয়োজনে সবাইকে বাধ্য করতে হবে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমার একটি প্রস্তাব হলো- কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন বা ভ্যাকসিন প্রদানের ওপর ডিপেন্ড করবে আরোপিত বিধিনিষেধ কার্যক্রম বর্ধিত করবেন কিনা। তিনি বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যেখানে ভ্যাকসিনেশন ৭০ বা ৮০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

সম্প্রতি ইউরো কাপের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি ইউরো কাপে হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে গ্যালারিতে খেলা দেখেছে। সেখানে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ তাদের ওখানে ৭০ বা ৮০ শতাংশ ভ্যাকসিনেশন দেওয়া হয়েছে। এখানে ভ্যাকসিন যদি ৮০ শতাংশ দেওয়া যায় এবং মাস্ক যদি সবাই পরে তাহলে আমরা মোটামুটি একটা ভালো অবস্থা তৈরি হবে।

পলক বলেন, এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলতে হবে যে, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে উনারা প্রতিদিন দুই লাখ ভ্যাকসিনেশনকে ১০ লাখে উন্নীত করতে পারবেন কিনা? এটার ওপর ডিপেন্ড করবে আপনি বিধিনিষেধ তুলবেন কিনা? সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা যে পরিমাণ কড়াকড়ি করেছি এর চাইতে আর বেশি কড়াকড়ি করা সম্ভব না। আমরা কতজনকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখব? এমনিতেই জেলখানা পরিপূর্ণ। আর সেখানে যদি করোনা ছড়িয়ে যায় তাহলে কী হবে?

তিনি বলেন, আমরা একটা বিষয় নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম যে ভারত কীভাবে কন্ট্রোল করবে? কিন্তু ভারত ভ্যাকসিন যেভাবে দিয়েছে সব কিন্তু কন্ট্রোল হয়ে গেছে। তাদের দেশে সংক্রমণ কিন্তু ২ শতাংশে নেমে এসেছে। সেই জায়গা থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে আরও কীভাবে গতিশীল করবেন সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। যে যাই বলুক এই লকডাউন কোনো সমাধান নয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই করা হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ জারি করে সরকার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গত ১৩ জুলাই জারি করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। কঠোর বিধিনিষেধের শর্তগুলো হলো- সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) এবং সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব ধরনের শিল্প কলকারখানা বন্ধ থাকবে, জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।