আজব প্রেম!

আজব প্রেম!-এম রাসেল

সুপ্রভাত বগুড়া (এম রাসেল আহমেদ): প্রেম তো প্রেমই! আজব হয় কি করে? আজকে বসন্তের দ্বিতীয় দিন সারা বিশ্বে ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু এটা কয়জন ভাবে যে ভালোবাসার দিবসটিতে কে কতটা খুসি।আসলে ভালোবাসার কোন দিবস হয় বলে আমি মনে করিনা। যেভাবে ভালোবাসা উৎপাদন হচ্ছে তাতে এক সময় ভালোবাসা বলে কিছু থাকবেনা। সব কিছুর শেষ বলে একটা জিনিস আছে। টিনেজ বসয়ে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অতিরিক্ত হরমোনের বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যায়।যার জন্য আজকের লেখা আজব প্রেম।

দেখতে দেখতে প্রায় সব বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেল এমন কি যে ছেলে প্রেমিক পুরুষ নামে পরিচিত তারও বিয়ের পর দুইটা মেয়ে জন্ম নিল। সে কথা বলার কারন হচ্ছে যার কথা বলছি তার বয়স কতোটা হলো সেটাই প্রমাণ করছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে শফিক নামে ছেলেটিকে সবাই বলে বিয়ে কবে করছিস? আমিতো বারবার মিরাক্কেলের গানের সুরে বলি“ মুরব্বিরা গাছ তলাতে বসে আছে কেনে… মুরব্বিরা গাছ তলাতে বসে আছে ধ্যানে… তোর বিয়ে হচ্ছেনা কেনে.. ও তোর বিয়ে হচ্ছেনা কেনে..” এভাবে অনেক গান। তবুও তার সরম নাই, তার বিয়ে হচ্ছেনা। তার মুখ থেকে বিভিন্ন মেয়ের গল্প শুনি, আমি অনেক বুঝি তার ব্যপারে কিন্তু অবুঝ হই। শত শত মেয়েকে ফাকি দিয়েছে ,বিয়ের কথা বলে ধোকায় ফেলেছে অবশেষে সে মেয়েরা বাচ্চার মা হচ্ছে আর সে ফোম সেভ করে একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছে প্রেম লীলা।

Pop Ads

আমি নিজে থেকে অনেক মেয়েকে বোন বানিয়েছি তার জন্য, কিন্তু ধর্য্য না থাকার কারনে সফল হতে পারেনি কেউ। আমি যেখানে সেখানে বোন পয়দা করছি আর সে করছে প্রেমিকা। অবশেষে তাকে চাপ দিলে বলে ,ভাল মেয়ে হলে বিয়ে করতাম, তবে কি যাদের সাথে প্রেম লীলা করলো এতোদিন তারা ভাল ছিলনা? ভাল মানে কি আমি তার কথায় বুঝতে পারিনি।

আমায় বলে আমার এক সালি আছে তাকে বিয়ে করবে, এমন করে বলে এখন দিলে এখন করবে। আচ্ছা আমার বোনতো নয় যে এখন বিয়ে দিব, আমার কিছু করার থাকেনা। কয়েকবার সালির বাড়ি নিয়ে গেছি, সালি যদি কোনদিন বলতো ছেলেটি কে? কি পরিচয়? যা যা বলার তা বিস্তারিত নাই বললাম। কিন্তু না, সালির দিক থেকে কোন সারা শব্দ নাই, কিন্তু এ বেচারা মন খারাপ করেছে, আমি নাকি কিছু করছিনা। কিন্তু এটা সবার জানা উচিৎ আমি কি করতে পারি? সালির একটা বয়ফ্রেন্ড আছে কয়দিন আগে জানলাম।

আমি সবার খবর রাখি, সময় করে সবার বাড়ি যাই, কারো বাড়ি দুরে হলে মোবাইলে কথা বলি। এর খবর একটু বেশি নেয়, আমার কথার অবাধ্য হয়না বলে। কয়দিন আগে আমার কাছে দুজন মা ও মেয়ে আসে, আমায় আগে থেকেই চিনে সেটা তাদের মুখ থেকে শোনা কথা। আমায় মেয়ের মা বলল আমার ব্যপারে অনেক শুনেছে তাই ভাল ছেলের খবর চায়। আমি বললাম খবর দিব। অনেক কথা, এতো না বলে মুল আলোচনায় চলে যাই। মেয়ে পক্ষের এক কথা ছেলেকে অবশ্যই চাকুরী জীবি হতে হব।

আমি বেশি না ভেবে শফিক কে মেয়ে ছবি পাঠালাম অনলাইনে। তার থেকে শুনতে চাইলাম পছন্দ অপছন্দের ব্যপার। সে একবার দেখেই বলল আমার পছন্দ। অনেক কথা হলো আমি মেয়েকে শফিকের পুরা ঠিকুজি কুষ্টি সহ সব খুলে বললাম। তাদের মধ্যে কথা হলো, সেতো প্রেমিক পুরুষ, মেয়ে দেখলেই গলে যায়, এটাকেও পটিয়ে নিল। মেয়েটি আমায় বলল ছেলেকে পছন্দ হইছে, দেখা করতে বলল। আমি কিছু বলার আগেই জাহিদ বলল তার সাথে দেখা হবে আমি সহ। কিন্তু সব ঠিক ঠাক চাকুরী থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে তার মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে। কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে একজনের অসুস্থতার কথা বলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।

তারপর তাকে বলা হয় এখানে পাশের বাড়িতে এক বিবাহ যোগ্য মেয়ে আছে দেখে আসি। প্রেমিক পুরুষ নাচতে নাচতে সে বাড়িতে হাজির, তারপর মেয়ে দেখানো হলো বেচারা দেখলো। পরিবারের লোকজনের মধ্যে একজন সেই মজলিশে বলে উঠল, বাবা মেয়েটি কেমন দেখলে, পছন্দ হয়েছে? সে সবার সামনে কি বলবে বলল হ্যাঁ পছন্দ হইছে। তারা মাশাআল্লাহ্ ,আলহামদুল্লিাহ বলে বলল কাজি ডাক আজকেই বিয়ে।প্রেমিক পুরুষ ভাবছে আমি কেন এলাম, তার সাথে দেখা করতে যাওয়াই ভালো ছিল।

এদিকে যার সাথে দেখা করার কথা সে অপেক্ষায় আছে। এখন কি করার আছে পরিবারের সবার কথা ভেবে বিয়ের কাজটা শেষ করতে হলো কিন্তু বাঁকি প্রেমিকা গুলোর কি হবে? আমি জানতাম ভদ্র ছেলে এমনিতেই বিয়ে হচ্ছেনা কিন্তু না প্রেম করতে তো আর টাকা লাগেনা এমনি হয়ে যায়। বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক খরচ কিন্তু এই আজব প্রেম খরচ বাঁচে।

যাইহোক,তার প্রেমিকার সিরিয়ালে ক্লাস নাইন টেনে পড়া এক মেয়ে আছে। সেতো এর এক কাটি উপরে। সোজাসুজি ওয়ারনিং দিয়েছে হয় আমাকে বিযে কর নয় তোমার নামে চিঠি লিখে মরে যাব যে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী শফিক । বেচারা কি করবে চিন্তায় পরেছে এরই মাঝে পরিবারের সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে সে।

এই প্রেমিক পুরুষ জীবনে একটা কাজ করেছিল আর তা হলো এক বন্ধুকে ধোকা দিয়েছে। বন্ধুর পরিবারের লোক একে বিশ্বাস করে, তার পরিবার এর কাছ থেকে জানতে চায় বন্ধুর বিয়ের ব্যপারে কিন্তু সে বলে দেয় তাকে মেয়ে দেখালে সে বিয়ে করবেনা আপনারা পারলে সব আয়োজন করে বিয়ে দিয়ে দেন কারন সে আপনাদের খুব ভালবাসে। এই ভালবাসার দিনে ভালবাসা দিয়ে খেলা করা কতোটা যৌক্তিক বলে মনে করেন। বন্ধুটি না দেখে বিয়ে করেছিল।

আমি আছি বরাবর মানুষের সুখ দুখের পাশে, কোথায় কে বিপদে পরেছে আমাকে সেখানে হাজির হতেই হবে। কোথায় কে এক্সিডেন্ট করেছে কোথায় রক্ত লাগবে, কার সংসারে আগুন লেগেছে ,কার ঘর ভাঙ্গতে বসেছে তাই নিয়ে। যেহেতু তার টিনেজ গার্লফ্রেন্ড সুইসাইডের হুমকি দিচ্ছে এখন তার পিছনে লাগছি, কি করে সুইসাইড থেকে ফেরানো যায়।

আমায় বলেছে অলরেডি তার বয়ফ্রেন্ডের ছবি সহ ঠিকানা একজনকে দিয়েছে শায়েস্তা করতে কিন্তু কিভাবে সব ঠিক করা যায় সেটা নিয়ে তুমুল কথা হচ্ছে। সবার মাঝে একটা আশ্বাস দিচ্ছি আমি মনে হয় পারবো যদি আল্লাহ তার হায়াত দিয়ে থাকেন আর না হলে কারো কপার পড়তে বসেছে। আর এদিকে তার কথা দেওয়া মেয়ে আমার কাছে হাজির। আমি সোজা সাপ্টা বলে দিলাম কিছু করার নেই ছেলেটি মাইনকা পিায় পরেছে।

তবে শেষ কথা হচ্ছে এইসব আজব প্রেম থেকে দুরে থাকার অনুরোধ করছি কারন ভালবাসার দিন সবার জন্য ভালবাসা বয়ে আনেনা, কারো কারো ক্ষেত্রে দিনটি বিষাদময়। নিশ্বার্থ ভালবাসুন জীবনে ভালবাসার অভাব পড়বেনা, এসব নোংড়ামি থেকে সবাই বেচেঁ থাকুন এই কামনায় আজকের মতো বিদায়।
লেখক/প্রবন্ধিক:                                                                                                             এম রাসেল আহমেদ।