আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক
সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): যিকির মানে স্মরণ করা। আল্লাহর যিকিরের অর্থ হল, ওই সকল শব্দ উচ্চারণ করা, যে শব্দগুলো পড়ার ব্যাপারে কুরআন, হাদীসে উৎসাহ দান করা হয়েছে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহঃ) এর মতে , শরীয়ত মোতাবেক যে আমল করা হবে, তা যিকির হিসাবে গণ্য হবে। বেচাÑকেনা, লেনদেনও যদি ইসলাম মোতাবেক হয় তবে তাও আল্লাহর যিকির। মোটকথা, যিকির যেমন জবান দ্বারা হয়, তেমনি আমলের মাধ্যমেও যিকির হয় । যিকির না করা বড়ই নির্বুদ্ধিতা ।
কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেন, (প্রকৃত বুদ্ধিমান ) ঐসব লোকেরা যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে এবং চিন্তা, গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে’’। (সূূরাঃ আলÑইমরান,আয়াত, ১৯১) অর্থাৎ সেসব লোকই শুধু বুদ্ধিমান বলে আখ্যায়িত হওয়ার যোগ্য, যারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ও সৃষ্ট জগতের উপর চিন্তাÑফিকির করে উপলব্ধি করতে পারে যে, আসল কাজটি না মাটির , না পানি বা লোহার । বরং মাটি, পানি, বায়ু, লোহা ইত্যাদি থেকে যা কিছু হচ্ছে সব তাঁরই কাজ যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন ।
এভাবে আল্লাহর মাহাত্ম্য ও কুদরত সম্পর্কে অবগত হয়ে আল্লাহকে চেনবেন এবং সর্বাবস্থায় সর্বক্ষণ তাঁর যিকিরে নিয়োজিত থাকবেন। যিকিরের ফযীলত অসংখ্য। তন্মধ্যে এটাও একটি বিরাট ফযীলত যে, বান্দা যদি আল্লাহকে স্মরণ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তাকে স্মরণ করেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরাঃ বাকারা , আয়াত ঃ ১৫২)
হযরত আবু উসমান মাহদী (রহঃ) এক মজলিসে বলেন, আমি সে সময়টির কথা জানি, যখন আল্লাহপাক আমাদিগকে স্মরণ করেন। উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি তা কেমন করে জানতে পারেন? তিনি বললেন, তা এভাবে যে, কুরআন করীমের ওয়াদা অনুসারে যখন কোন মুমিন বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন আল্লাহ নিজেও তাকে স্মরণ করে। আর আয়াতের সারমর্ম হল এই যে, তোমরা যদি আমাকে আমার হুকুম ও আনুগত্যের মাধ্যমে স্মরণ কর, তাহলে আমিও তোমাদেরকে সওয়াব ও মাগফেরাত দানের মাধ্যমে স্মরণ করব। (মা’আরিফুল কুরআন )
হয়রত মু’ আয (রা) বলেন, আল্লাহর আযাব থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে মানুষের কোন আমলই যিকরুল্লাহর সমান নয়। (তিরমিজি) আল্লাহ তায়ালা বলেন, বেশি বেশি করে আপন রবকে স্মরণ করতে থাক আর সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।(সূরা আল-ইমরান,আয়াতঃ ৪১) আর যিকির থেকে গাফেলদের সম্পর্কে বলেন, যে ব্যাক্তি দয়াময় আল্লাহর যিকির থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। (সূরা যুখরুফ, আয়াত ঃ ৩৬) উদ্দেশ্য এই যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর উপদেশ থেকে জেনে বুঝে বিমুখ হয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই। সে দুনিয়াতেও তার সহচর হয়ে থাকে এবং পরকালেও যখন সে কবর থেকে উত্তোলিত হবে, তখন তার সঙ্গে থাকবে।
অবশেষে উভয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (কুবতুবী ) এ থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর যিকির বা স্মরণ বিমুখতার এতটুকু শাস্তি দুনিয়াতেই পাওয়া যায় যে, তার সংসর্গ খারাপ হয়ে যায় এবং মানুষ শয়তান অথবা জিন শয়তান তাকে সৎকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে অসৎকর্মের নিকটবর্তী করে দেয়। সে পথভ্রষ্টতার যাবতীয় কাজ করে, অথচ মনে করে যে, খুব ভাল কাজ করছে। এখানে যে শয়তানকে নিয়োজিত করার কথা বলা হয়েছে, সে সেই শয়তান থেকে ভিন্ন ,যে প্রত্যেক মুমিন ও কাফেরদের সাথে নিয়োজিত রয়েছে।
কেননা সেই শয়তান মুমিনের নিকট থেকে বিশেষ বিশেষ সময়ে সরেও যায়, কিন্তু এ শয়তান সদাসর্বদা জোঁকের মত লেগেই থাকে। (মা’ আরিফুল কুরআন) যিকিরের একটি বড় ফায়দা হল, যিকির দ্বারা মনের রোগ,ভয়,অস্থিরতা ও পেরেশানী দূর হয় এবং কলব শান্ত হয়,প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সূরাঃ রা’দ, আয়াত ঃ ২৮) যিকির দ্বারা আল্লাহর মুহাব্বত ও নৈকট্য লাভ হয়।
অন্তরের ময়লা ও মরিচা দূর করার জন্য যিকির শিরিশ স্বরুপ। যিকিরে আল্লাহর মা’রিফাত হাসিল হয় এবং আল্লাহর ভয় ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে জমে যায়। যিকিরের এরকম অগণিত ও অপরিসীম ফযীলত রয়েছে। আবার যিকির এত সহজ এবাদত যে, যিকিরের জন্য ওযু-গোছল তথা পাক-পবিত্রতাও জরুরী নয়।
লেখক/প্রাবন্ধীক: আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক।