ইলন মাস্কের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আগামীর বিশ্বে দুর্দিনের বার্তা দিচ্ছে

ইলন মাস্কের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আগামীর বিশ্বে দুর্দিনের বার্তা দিচ্ছে

বিশ্বের অর্থনীতির সামনে দুর্দিন দেখছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। এ পরিস্থিতিতে লোকসান কমাতে টেসলার দশ শতাংশ কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি টেসলার শীর্ষ নির্বাহীদের প্রতি ইলন মাস্কের করা ইমেইলের সূত্র ধরে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। শুক্রবার টেসলার কর্মকর্তাদের প্রতি পাঠানো ই-মেইলে এই লোক ছাঁটাইয়ের নির্দেশনা দেন তিনি।

সেখানে তিনি নির্বাহীদের প্রতি টেসলার সরাসরি বেতনভুক্ত কর্মীদের মধ্যে ১০ শতাংশকে বাদ দেয়ার কথা জানান।তার মতে টেসলার অনেক বিভাগেই এখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী রয়েছে। তবে একই সঙ্গে যেসব কর্মী সরাসরি গাড়ি নির্মাণ, ব্যাটারি তৈরি কিংবা সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Pop Ads

এর একদিন আগেই গত বৃহস্পতিবার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে নির্বাহীদের প্রতি অনতিবিলম্বে সব ধরনের কর্মী নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মাস্ক। এদিকে মাস্কের এ সব ই-মেইলের ঘটনা ফাঁস হওয়ার সাথে সাথেই ৯ শতাংশ কমে যায় টেসলার শেয়ারের দাম। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী টেসলা এবং এর অন্যান্য সাবসিডিয়ারিতে কাজ করছে মোট এক লাখ মানুষ।

টুইটার নয়, ইলন মাস্কের মনোযোগ এখন টেসলায়
টুইটারসহ অন্যান্য ইস্যুতে বেশি ব্যস্ত থাকায় ইদানিং টেসলার বিষয়ে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেননি মাস্ক। এ ব্যাপারে অনুযোগ ছিল টেসলার বিনিয়োগকারীদেরও। ধারণা করা হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতেই বর্তমানে তার মূল ব্রান্ড টেসলার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন মাস্ক।

কয়েকদিন আগেই টেসলার কর্মীদের কর্মস্থলে যোগ দেয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেন মাস্ক। টেসলার যে সব কর্মী এখনও হোম অফিস করছেন তাদের অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে সশরীরে যোগ দিতে বলেছেন তিনি। অন্যথায় তাদের চাকরি ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।বৃহস্পতিবার পাঠানো মেইলে মাস্ক বলেন, টেসলার কর্মীদের সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা অফিসে বসে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বাড়িতে থেকে কাজের নিয়মও বাতিল করেন তিনি। তিনি বলেন, যদি কেউ অফিসে না আসে তবে টেসলা ধরে নেবে তিনি পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে ইলন মাস্কের এই নির্দেশনাকে মাস্কের জন্য লাভজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে মাস্ক জানেন যে তার এই নির্দেশনার পর অনেক কর্মীই আর কাজে ফিরবেন না। অথচ তাদের ছাঁটাই করতে হলে তার খরচ অনেক বেশি পড়তো। লোক নিয়োগ নিয়ে মাস্কের সতর্কবাণীর আগেও ৫ হাজারের বেশি চাকরির সার্কুলার দিয়েছিল টেসলা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টোকিওতে সেলসম্যান নিয়োগ থেকে শুরু করে বার্লিনের গিগা ফ্যাক্টরিতে প্রকৌশলী নিয়োগ পর্যন্ত।

এছাড়া জুনের নয় তারিখে সাংহাইয়ে লোক নিয়োগের জন্য একটি অনলাইন ইভেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা ছিলো টেসলার। মাস্কের লোক ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ ইউরোপে ট্রেড ইউনিয়নের তরফে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসে টেসলার ইউরোপীয় হেড কোয়ার্টার অবস্থিত। সেখানকার এক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বলেন, ইচ্ছে হলেই ডাচ কর্মীদের বরখাস্ত করা যাবে না।

যে কোন ছাঁটাইয়ের আগে টেসলাকে ট্রেড ইউনিয়নের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে। এদিকে মাস্কের এসব কাটছাঁট পরিকল্পনার সাথে তার টুইটার কেনার বিষয়টি সাংঘর্ষিক কি না সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি ট্রাস্ট রেগুলেটর টুইটার বেচাকেনার ব্যাপারে তাদের সবুজ সংকেত দিয়েছে। এ খবরে দুই শতাংশ বেড়ে গেছে টুইটারের শেয়ারের দাম।

বিশ্ব অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে টেসলার কর্মী ছাঁটাই
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মন্দা নিয়ে আওয়াজ তুলছেন ইলন মাস্ক। পুরো বিশ্বই একটি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগুচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে নিয়োগ বন্ধ এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের নির্দেশনার মতন সরাসরি কোনো পদক্ষেপ এই প্রথম নিলেন তিনি।

অথচ অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের থেকে মুনাফা এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইস্যুতে অনেকটাই এগিয়ে আছে টেসলা। বিশেষ করে টেসলার বিক্রি এবং রাজস্ব দুইই বেড়েছে। তাই ইলন মাস্কের কথা ও কাজকে গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে বাণিজ্যের দুনিয়ায়। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মর্গান স্ট্যানলির এক প্রতিবেদনেও ফুটে উঠেছে বিষয়টি।

সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের অর্থনীতির ব্যাপারে ইলন মাস্কের অতুলনীয় পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে। তাই তার এসব বার্তার ব্যাপক এবং নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ততা রয়েছে। এ ব্যাপারে ইউরোপ ও জার্মানির অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক হ্যানোভার ভিত্তিক নর্ডএলবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময় পুরোপুরি খারাপ হওয়ার আগে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকতেই সম্ভাব্য সঙ্কটের প্রস্তুতি থাকা ভালো। সে হিসেবে ইলন মাস্কের এই নির্দেশনা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবাণী এবং উপদেশ হিসেবে দেখা উচিত।

মাস্কের আশঙ্কা প্রতিধ্বনিত হয় বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমোন এবং গোল্ডম্যান স্যাচসের প্রেসিডেন্ট জন ওয়ালড্রোনের কণ্ঠেও। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কটকে হারিকেন হিসেবে উল্লেখ করে ডিমন বলেন, ‘একটি হারিকেন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে।‘ সারা বিশ্বের মতই যুক্তরাষ্ট্রেও এই মুহূর্তে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।

সেখানে মূল্যস্ফীতি এই মুহূর্তে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে জীবন যাত্রার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মার্কিনিরা। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমানোর পদক্ষেপে আবার মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। এই দুইয়ের মধ্যে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।