ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ এবং কঠোরতর

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ এবং কঠোরতর। প্রতিকী-ছবি

আলহাজ্ব হাফেজ মাওঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ধর্ষণ এক ঘৃণ্য, কুৎসিত ও মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এই অমানুষদের কাছে আমাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা কারও সম্ভ্রমই নিরাপদ নয়। ধর্ষণ এমন অপরাধ যা অন্যান্য অপরাধের তুলনায় সমাজকে অধিক নষ্ট ও কুলষিত করে। আজ ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে গোটা দেশে। বিশেষকরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বীভৎস ও নিষ্ঠুর নারী নির্যাতনের ভিডিও কেহই মানতে পারছেন না। ধর্ষণ নামক পৈশাচিক নিপীড়ন প্রতিরোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে উত্তাল দেশ। লোমহর্ষক নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক হয়ে সকল জনগণ স্থায়ী প্রতিকার চাইছেন।

কিভাবে হবে চির সমাধান ? এ প্রশ্নে মতামতের অন্ত নেই। কেহ চান মৃত্যদন্ড, কেউবা বর্তমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ। কারও মতে, ধর্ষণকারীর এমন কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা কার হোক যেন তারা প্রতিটি মূহুর্তে নিজেদের মৃত্যু কামনা করে এবং সেই ভয়াবহতম শাস্তি কার্যকরের দৃশ্য টেলিভিশনের চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হোক,যেন প্রত্যেকটা সম্ভাব্য ধর্ষক শিউরে উঠে। কেহ বলছেন, প্রকাশ্যে তাদের বিশেষ অঙ্গটি কেটে ফেলা হোক এবং এসব শাস্তি প্রয়োগে মানবাধিকারের কোন মায়াকান্না আমরা শুনতে চাই না ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু যে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন । নশ্বর এই পৃথিবীতে চলার পাথেয় হিসেবে দিয়েছেন অবিনশ্বর কালাম।

Pop Ads

হেদায়েতের সেই আলোকবর্তিকা কুরআনের কথা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। কুরআনের জীবন-ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে উভয় জগতের কামিয়াবির গ্যারান্টি। ধর্ষণ নামক ভাইরাসের একমাত্র কার্যকর ও অব্যর্থ প্রতিষেধক ‘আল্লাহর বিধান’। ইসলামী আইনে বিবাহিত অবস্থায় যেনা তথা ধর্ষণ করলে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যদি তারা বিবাহিত হয় তাহলে তাদের পাথর মেরে হত্যা কর’(মুসলিম)। অবিবাহিত অবস্থায় ধর্ষণ প্রমাণিত হলে ধর্ষকের শাস্তি একশ বেত্রাঘাত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর।

আল্লাহ বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা-আননূর,আয়াত-২) আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইসলামের এই কঠোরতর শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেহ যেন দয়াপরবশ হয়ে শাস্তি অকার্যকর কিংবা হ্রাস না করে। দয়া ও ক্ষমা সর্বত্র প্রশংসনীয়,কিন্তু ধর্মের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধান কার্যকর করণে অপরাধীদের প্রতি দয়া করা মানে সমগ্র মানবজাতির প্রতি নির্দয় হওয়া। আয়াতে আরও জানা গেল যে, ধর্ষককে প্রকাশ্যে জনসম্মক্ষে শাস্তি দিতে হবে এবং মুসলমানদের একটি দলকে তথায় উপস্থিত থাকতে হবে প্রত্যক্ষ করার জন্য। ধর্ষণ একটি চারিত্রিক বিষ।

এর বিষাক্ত প্রভাবে মানুষ চরিত্রভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং ভালমন্দের পার্থক্য লোপ পায়। এ কাজটি অতি অশ্লিল ও নির্লজ্জ। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা ধর্ষণের কাছে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লিল কাজ এবং মন্দপথ। (সূরা-বনী ইসরাঈল,আয়াত-৩২)। মানুষের মধ্যে লজ্জা-শরম না থাকলে মনুষ্যত্ব থাকে না, থাকে পশুত্ব। তখন সে যা খুশি তাই করতে পারে। ঘটায় এরকম অশ্লিল ঘটনা। এজন্যই নবীজি (সাঃ) লজ্জাকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সাব্যস্ত করেছেন। ধর্ষণের অশুভ পরিণাম কখনো পুরো কওমকে ধ্বংশ করে দেয়।

ইহলৌকিক ও পরলৌকিক সাফল্য পেতে যৌনাঙ্গ হেফাজত করা অত্যাবশ্যক। ধর্ষণ একটি মহাপাপ এবং অনেক অপরাধের সমষ্টি, তাই ইসলামী আইনে এর সাজাও সর্বোচ্চ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সাত আসমান ও জমীন বিবাহিত যেনাকারদের প্রতি অভিসম্মাত করে। জাহান্নামে এদের লজ্জাস্থান থেকে এমন দুর্গন্ধ ছড়াবে যে,জাহান্নামীরাও তা থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। আগুনের আযাবের সাথে সাথে জাহান্নামে তাদের লাঞ্জনাও হতে থাকবে। (মাআরিফুল কুরআন)।

কুৎসিত এ কাজে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন, ফলে দুনিয়াতে বিপর্যয় দেখা দেয়। হযরত আমর (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে জাতির মধ্যে যেনা-ব্যভিচার ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করবে , ওই জাতি দূর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটনে পতিত হবে। অপর বর্ণনায় আছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।(মিশকাত) ইসলামী আইনে ধর্ষণ দূরে থাক কারও প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দিলে তাকে এই অপবাদের জন্যই আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারিত করেছে।

নির্লজ্জ এ বিশ্রী কাজ দমনে ইসলাম মেয়েদের জন্য পর্দা ও পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত রাখার আদেশ দিয়েছে। তাছাড়া যেসব কথা শুনলে, যে পরিবেশে গেলে, যা কিছু দেখলে কিংবা যা পড়লে অথবা যা চিন্তা করলে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বা যেনার মনোভাব জাগ্রত হয় সেসব থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের এমন জঘন্য অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। – আমিন।