ঈমানের তাৎপর্য ও শাখা-প্রশাখা

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ঈমান বলে। ঈমান হচ্ছে সমস্ত আমলের বুনিয়াদ-ভিত্তি। যার ঈমান নেই তার কোন আমল আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। ঈমান ছাড়া আমল অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,“যারা কাফের (যাদের ঈমান নেই) তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকার ন্যায়,যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে”।… (সূরাঃ নূর, আয়াতঃ৩৯)।

Pop Ads

উক্ত আয়াতে ঈমানের গুরুত্ব বুঝা গেল যে,আমল কবুল হওয়া ঈমানের উপর নির্ভশীল। ঈমানের আলোচনা করলে,ঈমানদারদের সোহবত-সাহচর্য গ্রহণ করলে এবং ঈমানের শাখাগুলোর উপর আমল করার দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ঈমানের মধ্যে নূর পয়দা হয় এবং ঈমান মজবুত হয়।

ঈমানের ৭৭টি শাখা-প্রশাখা রয়েছে।  ৭৭টি শাখার মধ্যে ৩০টি অন্তরের সাথে,৭টি জবানের সাথে আর ৪০টি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আমলের সুবিধার জন্য সংক্ষেপে সবগুলোর বর্ণনা পেশ করা হল।

অন্তর দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়-

(১)আল্লাহর উপর ঈমান আনা।

(২)আল্লাহ চিরন্ত ও চিরস্থায়ী,তিনি ব্যতীত সবকিছু তাঁর মাখলুক একথা বিশ্বাস করা।

(৩)ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা।

(৪)আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা।

(৫)আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরের প্রতি ঈমান আনা।

(৬)তাকদীরের উপর ঈমান আনা।

(৭)কিয়ামতের উপর ঈমান আনা।

(৮)বেহেশতের উপর ঈমান আনা।

(৯) দোযখের উপর ঈমান আনা।

(১০)আল্লাহর সঙ্গে মহব্বত রাখা।

(১১)কারও সঙ্গে আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর সন্তুটির জন্যই কারও সঙ্গে দুশমনী রাখা।

(১২)রাসূল (সাঃ)-এর সঙ্গে মহব্বত রাখা।

(১৩)এখলাস (অর্থাৎ সবকিছু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করা)।

(১৪)তওবা অর্থাৎ কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তা পরিত্যাগ করা এবং ভবিষ্যতে তা না করার জন্য সংকল্প করা।

(১৫)আল্লাহকে ভয় করা।

(১৬)আল্লাহর রহমতের আশা রাখা।

(১৭)আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।

(১৮)হায়া বা লজ্জা থাকা।

(১৯)শোকর আদায় করা।

(২০)অঙ্গীকার রক্ষা করা।

(২১)ধৈর্য ধারণ করা।

(২২) বিনয় ন¤্রতা ও বড়দের প্রতি সম্মানবোধ।

(২৩)¯েœহ মমতা ও জীবের প্রতি দয়া।

(২৪)তাকদীরের উপর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর রাজী থাকা।

(২৫)তাওয়াক্কুল করা।

(২৬)নিজেকে বড় এবং ভাল মনে না করা।

(২৭)হিংসা-বিদ্বেষ না রাখা।

(২৮)রাগ না করা।

(২৯) কারও অহিত চিন্তা না করা,কারও প্রতি কু-ধারণা না করা।

(৩০)দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করা।

জবানের দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়-

(১) কালিমায়ে তাইয়্যেবা পড়া।

(২)কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা।

(৩)ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা।

(৪)ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া।

(৫)দুআ বা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।

(৬)আল্লাহর জিকির করা।

(৭)বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাযত করা।

বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যেগুলো সম্পন্ন হয়-

(১) পবিত্রতা হাসিল করা।

(২)নামাযে পাবন্দী করা।

(৩)ছদকা,যাকাত,ফিতরা,দান-খয়রাত,মেহমানদারী ইত্যাদি।

(৪)রোজা রাখা।

(৫)হজ্ব পালন করা।

(৬)এ’তেকাফ (শবে কদর তালাশ করা এর অন্তর্ভুক্ত)।

(৭)হিজরত করা অর্থাৎ,ঈমান রক্ষার্থে দেশ,বাড়ি ত্যাগ করা।

(৮)মান্নত পুরা করা।

(৯)কছম করলে তা পূরণ করা আর কছম ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেয়া।

(১০) কোন কাফফারা থাকলে তা আদায় করা।

(১১)ছতর ঢেকে রাখা।

(১২)কুরবানী করা।

(১৩)জানাযা ও তার যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজের ব্যবস্থা করা।

(১৪)ঋণ পরিশোধ করা।

(১৫)লেনদেন ও কায়-কারবার সততার সঙ্গে জায়েয তরীকা মোতাবেক করা।

(১৬)সত্য সাক্ষ্য প্রদান করা,সত্য জানলে তা গোপন না করা।

(১৭)বিবাহের দ্বারা হারম কাজ থেকে বিরত থাকা।

(১৮)পরিবার-পরিজনের হক আদায় ও চাকর-নওকরদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

(১৯)মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

(২০)ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা।

(২১)আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

(২২)উপরওয়ালার অনুগত হওয়া,যেমন-চাকরের প্রভুভক্ত হওয়া।

(২৩)ন্যায় ও নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করা।

(২৪)মুসলমানদের সাথে থাকা ও হক্কানী জামাতের সহযোগিতা করা, তাদের মত পথ ছেড়ে অন্যভাবে না চলা।

(২৫)শরীআত-বিরোধী না হলে শাসনকর্তাদের অনুসরণ করা।

(২৬)লোকদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ হলে তা মিটিয়ে দেয়া।

(২৭)সৎ কাজে সাহায্য করা।

(২৮)আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার করা তথা সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া।

(২৯)জিহাদ করা,সীমান্ত রক্ষা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।

(৩০)হদ তথা শরীআত নির্ধারিত শাস্তি কায়েম করা।

(৩১) আমনত আদায় করা। গনীমতের (এক পঞ্চামাংশ বায়তুল মালে জমা করা এর অন্তর্ভুক্ত)।

(৩২)অভাবগ্রস্থকে কর্জ দেয়া।

(৩৩)প্রতিবেশির হক আদায় করা ও তাদেরকে সম্মান করা।

(৩৪)লোকদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

(৩৫) অর্থের সদ্ব্যবহার করা।

(৩৬)সালামের জবাব দেয়া ও সালাম প্রদান করা।

(৩৭)যে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।

(৩৮)পরের ক্ষতি না করা।

(৩৯)খেল-তামাশা,ক্রীড়া-কৌতুক ও নাচ-গান থেকে দূরে থাকা।

(৪০)রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা।(আহকামে যিন্দেগী)