এই প্রথম দেশেই তৈরী হলো রকেট, উৎক্ষেপণের অপেক্ষা !

এই প্রথম দেশেই তৈরী হলো রকেট, উৎক্ষেপণের অপেক্ষা !

মহাকাশ যাত্রার আধুনিক দ্রুতগতি প্রযুক্তির মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে রকেট। ইতোমধ্যেই রকেটের সহযোগিতায় কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশেই প্রথম রকেট তৈরি সম্পন্ন করেছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল রহমান। গাইবান্ধা জেলায় বেড়ে ওঠা তরুণ নাহিয়ান আল রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু সুন্দরগঞ্জের আবদুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে।

এরপর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেন। স্কুলজীবন শেষে ভর্তি হন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। তবে ছোটবেলা থেকেই তার মনে রকেট তৈরির ভাবনা ছিল। সেই ভাবনা থেকেই কলেজজীবনে এসেই প্রথম রকেট তৈরি করতে মনোনিবেশ করেন। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ধাপে ধাপে রকেট তৈরির কাজে এগোতে থাকেন নাহিয়ান আল রহমান।

Pop Ads

দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে শেষে ২৮ বছর বয়সে তৈরি করেন বাংলাদেশের প্রথম রকেট। ইতোমধ্যে ধূমকেতু-১ ও ধূমকেতু-২ নামের চারটি রকেট তৈরি সম্পন্ন করেন তিনি। এখন রকেটগুলো মহাকাশে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। রকেট তৈরি ও উৎক্ষেপণের বিষয় নিয়ে আরটিভি নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন নাহিয়ান আল রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক আলম

আরটিভি নিউজ : রকেট বানানোর চিন্তা কীভাবে এলো?

নাহিয়ান আল রহমান : ছোটবেলায় টেলিভিশনে রকেট ওড়ানোর দৃশ্য দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছে জাগে, রকেট আমরাও তৈরি করতে পারব। সেই ইচ্ছে থেকে ২০১২ সালে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম সেমিস্টার থেকেই কয়েকজন বন্ধু মিলে রকেট তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু রকেট তৈরিতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই কাজটি প্রায় ১ বছর বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে অনেকে কলেজ শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন। আমি চাকরিতে যোগ না দিয়ে রকেট তৈরি করতে থাকি। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বের হওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে মূলত রকেট তৈরির কাজ শুরু হয়।

রকেট তৈরির টিমে কতজন আছেন এবং তারা কীভাবে সহযোগিতা করছেন?

নাহিয়ান আল রহমান : রকেট তৈরির টিমে মোট ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। তবে সবাই সমানতালে সময় দিতে পারেননি। মূলত, ২০১৮ সাল থেকে ৫ থেকে ৭ জন রকেট তৈরির কাজ করেছেন। করোনা মহামারির কারণে মাঝে কাজ বন্ধ ছিল।

ধূমকেতু-১ ও ধূমকেতু-২ নামে চারটি রকেট তৈরিতে কতদিন সময় লেগেছে?

নাহিয়ান আল রহমান : দুই মডেলের চারটি রকেট তৈরিতে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ বছর সময় লেগেছে।

 

রকেট তৈরির অর্থ কোথায় পেলেন?

নাহিয়ান আল রহমান : ব্যবসার কাজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রকেট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট পড়াই। প্রাইভেট পড়ানোর বেতন ও শিক্ষার্থীদের কাছ টাকা তোলা হয়েছে। সবকিছু মিলে চারটি রকেট তৈরিতে অর্থের জোগান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, অর্থ ছাড়া রকেট তৈরি সম্ভব নয়।

এই রকেট বিদেশে বা অন্য দেশের কোনো রকেটের সঙ্গে তুলনা করা যায় কিনা?

নাহিয়ান আল রহমান : অন্যদেশের সঙ্গে এই রকেটের আপাতত তুলনা করা যাবে না। কারণ, এসব রকেট পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। রকেট উৎক্ষেপণে অনুমোদন ও পরীক্ষায় সফলতা পেলে বড় রকেট তৈরি করা হবে। এটি প্রথম ধাপ। সফলতা পেলে বড় রকেটে মহাকাশে মানুষ প্রেরণ করা সম্ভব হবে।

রকেটের আয়তন ও লম্বা কতটুকু?

নাহিয়ান আল রহমান : ধূমকেতু-১ ও ধূমকেতু-২ নামে দুটি মডেলের চারটি রকেট তৈরি করা হয়েছে। ধূমকেতু-১ লম্বা ৮ ফুট করে দুটি মিলে ১৬ ফুট লম্বা। আর ধূমকেতু-২ প্রতিটি ৬ ফিট করে, দুটি মিলে ১২ ফিট লম্বা রকেট। আর আয়তনের দিক থেকে বড় রকেট ৬ ইঞ্চি এবং ছোটটি ৪ ইঞ্চি।

সহযোগিতা বা অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে?

নাহিয়ান আল রহমান : রকেট তৈরিতে টিম তৈরি এবং ফান্ড সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় টিম তৈরি ও নিজের কাছে থাকা অর্থ দিয়ে রকেট তৈরির কাজ শুরু করা হয়।

কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?

নাহিয়ান আল রহমান : মহাকাশ জয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে রকেট। আর এই রকেট বাংলাদেশে এখন কেউ তৈরি করেনি। এত বড় ঝুঁকির দিকে সহজেই কেউ এগোতে চায় না। সেজন্য রকেট তৈরি করতে গিয়ে অনেকের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। রকেট তৈরির কথা শুনে প্রথম দিকে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকরা ভয় পেয়েছেন, ভয়ের কারণে এ ধরনের প্রযুক্তি তৈরিতে সাহস দিতে পারেননি। এখন শিক্ষকসহ সবার সহযোগিতা ও উৎসাহ পাওয়া যাচ্ছে।

 

আকাশে উৎক্ষেপণের জন্য অনুমতি পেতে কোন প্রক্রিয়ায় এগোনো হচ্ছে?

নাহিয়ান আল রহমান : রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতি পেতে দুই সপ্তাহ আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে কবে নাগাদ রকেট উৎক্ষেপণের অনুমোদন আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। কারণ, সরকারের অনুমোদন ছাড়া রকেট উৎক্ষেপণ সম্ভব নয়।

রকেট উৎক্ষেপণে সফলতার বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?

নাহিয়ান আল রহমান : রকেট উৎক্ষেপণে সফলতার হার খুবই কম। নাসা ১৫ বার রকেট উৎক্ষেপণের পর সফলতা পেয়েছে। সেদিক থেকে আমরা আশাবাদী, আমাদের চারটি রকেট উৎক্ষেপণে সফলতা আসবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই রকেট উৎক্ষেপণ সফল হলে নিজের দেশে রকেট বানানো সম্ভব হবে। ধূমকেতু-১ ও ধূমকেতু-২ রকেট উৎক্ষেপণে সফল হলে সরকারি এবং বেসরকারি সহযোগিতা পাবেন বলে মনে করেন নাহিয়ান আল রহমান।