এতিমখানার জন্য বরাদ্দ খাটসহ সকল আসবাবপত্র  সরকারী কর্মকর্তার ঘুমঘর!

এতিমখানার জন্য বরাদ্দ খাটসহ সকল আসবাবপত্র  সরকারী কর্মকর্তার ঘুমঘর!। ছবি-এম রাসেল

সুপ্রভাত বগুড়া (এম রাসেল আহম্মেদ, জয়পুরহাট: অফিস জয়পুরহাটে। বাসা বগুড়ায়। রাত যাপন করেন অফিসের একটি বিশেষ কক্ষে। সরকারি এতিমখানার খাট, বালিশ ও চাদরে সাজিয়েছেন তাঁর ঘুমঘরটি। সরকারি গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন বগুড়া থেকে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আদেশও মানেন না তিনি। বদলির এখতিয়ার না থাকলেও তাঁর নির্দেশেই বদলি হতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

তাঁর রূঢ় আচরণের কারণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছয়জন কর্মকর্তা এরই মধ্যে স্বেচ্ছায় বদলি নিয়ে জয়পুরহাট ছেড়েছেন। এমন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই জয়পুরহাট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) ইমাম হাসিমের বিরুদ্ধে।

Pop Ads

অভিযোগে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক পদে যোগদান করেন ইমাম হাসিম। এর পর থেকে সরকারি এতিমখানার জন্য বরাদ্দ হওয়া খাট, চাদর ও বিছানাপত্র দিয়ে সাজানো অফিসের একটি কক্ষ আবাসিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। সরেজমিন তাঁর অফিসে গিয়ে অফিসকক্ষকে আবাসিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করার সত্যতা মেলে পাওয়া যায়।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা সদরে বাড়ি হলেও বগুড়া সদরের বারোপুর আবাসিক এলাকার নিজস্ব পাঁচতলা ভবনে থাকেন ইমাম হাসিম। তাঁর খারাপ আচরণের কারণে এরই মধ্যে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকসহ বিভিন্ন পদের ছয়জন কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলি হয়েছেন। বর্তমানে সহকারী পরিচালক পদে একজন নারী কর্মকর্তা যোগদান করলেও অন্য পদগুলো শূন্য পড়ে আছে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সমাজসেবার কার্যক্রম।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে গত বছরের ১২ নভেম্বর জয়পুরহাট সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান মণ্ডলাকে জয়পুরহাট সদর সমাজসেবা কার্যালয়ে বদলির আদেশ দেন। কিন্তু মহাপরিচালকের আদেশ অমান্য করে গত ২৩ নভেম্বর নিজ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জয়পুরহাট শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন সুলতানাকে জয়পুরহাট সদরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন উপপরিচালক। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান মণ্ডল।

এ ছাড়া গত ২০ জুলাই জয়পুরহাট সদর, কালাই ও আক্কেলপুর উপজেলায় বিভিন্ন পদে কর্মরত চারজন কর্মচারীকে কোনো অভিযোগ বা আবেদন ছাড়াই জেলার অন্য উপজেলায় তাত্ক্ষণিক বদলি করেন ডিডি। তাঁদের মধ্যে কালাই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বদলি করা ফিল্ড সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম ও কারিগরি প্রশিক্ষক মুনজের আলীর চাকরি আছে মাত্র এক বছর। চাকরির শেষ মুহূর্তে এসে কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি থেকে দূরে বদলি করায় চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘ডিডি ইমাম হাসিমের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জেলার সমাজসেবার কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। তিনি নিজে অফিসকে বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি। একই সঙ্গে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।’

ইচ্ছামতো কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বদলি করছেন—এ বিষয়টি অস্বীকার করে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) ইমাম হাসিম বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। আর করোনার মধ্যে তিনি অফিসে কিছুদিন থাকলেও তাঁর ব্যবহৃত কক্ষটি অফিসের নয়, ভবন মালিকের। তা ছাড়া অফিসের প্রয়োজনেই তিনি মাঝেমধ্যে গাড়ি নিয়ে বগুড়া যাতায়াত করেছেন।