করোনাকালে এই লকডাউনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন কেনাকাটায় ভার্চুয়াল বাজার

করোনাকালে এই লকডাউনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন কেনাকাটায় ভার্চুয়াল বাজার। প্রতিকী-ছবি

সুপ্রভাত বগুড়া (অর্থ ও বানিজ্য): শপিংমল বন্ধ, তাই বলে কি বন্ধ থাকবে কেনাকাটা? মোটেই না। এক্ষেত্রে অনলাইন কেনাকাটা হতে পারে ভার্চুয়ালি আনন্দের। চাইলেই আপনার মুঠোফোন, ল্যাপটপ হয়ে উঠতে পারে সেই মাধ্যম। পছন্দ করুন, ক্লিক করুন- পণ্য পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।  নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই এখন মিলছে অনলাইনে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, শাক-সবজি, গৃহস্থালি পণ্য এখন ঘরে বসেই কেনা যাচ্ছে।

সহজলভ্য হওয়ায় অনলাইনে কেনাকাটা দিনদিন বাড়ছে। করোনা মহামারির কারণে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘরবন্দি মানুষ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে  প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে অনলাইনে ঝুঁকছেন। ফলে অনলাইন ব্যবসা এখন বেশ জমে উঠেছে। করোনা ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আবদুর রশিদ হোম অফিস করছেন।

Pop Ads

সংক্রমণের আতঙ্কে কাঁচাবাজারে যাচ্ছেন না তিনি । ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনেই কিনছেন। তার মতো অনেকেই এখন ঘরে বসে পণ্য কিনছেন। করোনার কারণে এ কেনাকাটা কয়েকগুণ বেড়েছে। আবদুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে জানান, সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে হোম অফিস করছি। বাইরে যাওয়া হয় না। চাল, তেল ও ডিম লাগবে। অনলাইন প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমে সকালে অর্ডার করেছিলাম।

বিকেলে সব পণ্য দিয়ে গেছে। বাজারের দামে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পণ্য কিনলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খাস ফুডের চেয়ারম্যান হাবিবুল মোস্তফা আরমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন ঘোষণার আগের দিন থেকেই বিক্রির অর্ডার বেড়েছে। আগের ক্রেতাদের অর্ডারের পাশাপাশি নতুন অনেক ক্রেতা যোগ হচ্ছেন। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।

গত লকডাউনে আমরা প্রথমে পণ্য ডেলিভারি দিতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিল। প্রশাসনের লোকজন অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা করেছিল। কিন্তু এবার ওই ধরনের কোনো সমস্যা নেই। আমরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সব পণ্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দিচ্ছি। কোনো অফার দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন যে গ্রাহক অনলাইন কেনাকাটায় যুক্ত হচ্ছেন তাদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। লকডাউনে মানুষের ভোগান্তি না বাড়িয়ে পণ্য কেনা সহজ করছি।

পাশাপাশি আগামী রমজান উপলক্ষে ও বিশেষ সময়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্য ছাড় দিচ্ছি। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পণ্য কেনাবেচা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে তিনি জানান অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তার সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য বলছে, ২০২০ সালে অনলাইনে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।

এর আগের বছর ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা বেড়েছে কয়েক হাজার। নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিইও) জিয়া আশরাফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের সাধারণ ছুটির সময় আমাদের ক্যাপাসিটি বাড়ানো হয়। এরপর থেকে অনলাইনে বিক্রি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

গত দুই-তিনদিনে বিক্রির পরিমাণ আরও বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের ৭ হাজারের মত ক্রয়াদেশ হয়। গত তিনদিন ধরে এটি ৮ থেকে ৯ হাজারে উঠেছে। আমারা আশা করছি আগামীতে অর্ডার ১২ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছাবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। ডেলিভারি কর্মীর সংখ্যাও বাড়িয়েছি। তিনি জানান, এখন মোট ২১টি গুদামের (ওয়্যারহাউজ) মাধ্যমে ক্রেতাদের চাহিদামত পণ্য সরবরাহ করছি।

এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জে দুটি চট্টগ্রামে তিনটি ও যশোরে একটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও আমাদের সেবার আওতা বাড়াব। এখন ১১টা পর্যন্ত গ্রাহক অর্ডার দিতে পারবে জানিয়ে চালডালের সিইও বলেন, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডেলিভারি করেছি। এখন থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ডেলিভারি দিতে পারব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন আমরা রাত ১১টা পর্যন্ত পণ্যের অর্ডার নেবো আর সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পণ্য ডেলিভারি দেবো। আগের তুলনায় অনলাইনে বা ফোনে ক্রয়াদেশ বেড়েছে জানিয়ে সুপারশপ স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তিনটি অনলাইন মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা ও হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকি। এর মধ্যে রয়েছে স্বপ্ন ডটকম, ফোনে ফোনে বাজার ও পার্টনারদের মাধ্যমে বিক্রি অর্থাৎ ফুড পান্ডা, ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি।

লকডাউনে অনলাইনের সবগুলো মাধ্যমেই আগের চেয়ে পণ্য বিক্রি বেড়েছে। লকডাউনের আগে আমাদের স্টোরের পণ্য বিক্রি বেশি ছিল। সেখানে আগের চেয়ে বিক্রি কিছুটা কমেছে। তবে এখন অনলাইন ও হোমডেলিভারি আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় এখন অনলাইনে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। অনলাইনে নিত্যপণ্যের বিক্রি বাড়লেও ফেসবুকভিত্তিক ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের অনলাইন বিক্রি কমেছে।

ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত একাধিক উদ্যোক্তা জানান, অনলাইনে অধিকাংশ ফেসবুক পেজের উদ্যোক্তা নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেমে পণ্য পাঠাত। তবে লকডাউনে তারা ডেলিভারি দিতে পারছেন না। তাই তাদের কেনাবেচাও কমে গেছে। এদিকে অনলাইনে গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে প্রতারণার পরিমাণও। পণ্য কিনতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে এক ক্রেতা বলেন, কোনো পণ্য পছন্দ হলে বা প্রয়োজনে অনলাইনে পণ্য কিনি।

অনেক সময় অনলাইনের পণ্যের সঙ্গে বাস্তবের গরমিল পাওয়া যায়। একবার অর্ডার করেছিলাম চামড়ার তৈরি মানিব্যাগ পাঠিয়েছে রেক্সিনের মানিব্যাগ। বাচ্চার জামা কিনেও প্রতারিত হয়েছি একবার। এছাড়া অনেক সময় পণ্য ডেলিভারি দিতেও দেরি করে। যা খুবই বিরক্তিকর। এসব অনিয়ম-প্রতারণা বন্ধ করতে হবে। তাহলে অনলাইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে অনলাইন বাজার।