কাবুলের অতি সুরক্ষিত গ্রিনজোনে বিক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ ও শক্তিশালী বিস্ফোরণ; শহরটি দখলে মরিয়া তালেবান

কাবুলের অতি সুরক্ষিত গ্রিনজোনে বিক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ ও শক্তিশালী বিস্ফোরণ; শহরটি দখলে মরিয়া তালেবান

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বড় আকারে বোমা হামলা চালিয়ে শহরটি দখলে নিতে লড়াই শুরু করেছে তালেবান। কাবুলের অতি সুরক্ষিত গ্রিনজোনে বিক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধের পর শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। অঞ্চলটিতে সরকারি ভবন ও বিদেশি দূতাবাস রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মাদির বাসার কাছেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে। হামলার পর মন্ত্রীর পরিবারকে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর দুই ঘণ্টারও বেশি সময় আগে আরেকটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Pop Ads

বুধবার (৪ আগস্ট) তালেবান এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে কাবুল শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে লড়াই শুরু হলো। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনা লঙ্ঘন করেছে তালেবান। এভাবে চালিয়ে যেতে থাকলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি জেলা প্রদেশ দখলের পর এবার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া তালেবান জঙ্গিরা। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে হেরাত প্রদেশে অবস্থান করছে তারা। বুধবার (৪ আগস্ট) প্রদেশটিতে তালেবান সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন আফগান সেনারা।

এর আগে হেলমান্দের প্রাদেশিক রাজধানী লস্কর গাহ’র অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জবাবে রাতভর তালেবানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন ও আফগান বাহিনী। হেরাত প্রদেশে সাম্প্রতিক সংঘাতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এখনো হাসপাতালগুলোতে অনেক রোগী ভর্তি আছে। কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন তালেবানের আধিপত্য জোরালো হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে সংঘর্ষের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। লস্কর গাহতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কয়েক লাখ বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাড়িঘরের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা ও হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের চলমান সহিংসতা মধ্য এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে হিসেবে আফগান সীমান্তবর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী উজবেকিস্তানের সেনা সদস্যদের নিয়ে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে রাশিয়া।

পাঁচদিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণে দুই দেশের দেড় হাজার সেনা অংশ নেবে বলে জানায় মস্কো। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্যই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এদিকে তালেবানের হামলার ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের তৃতীয় কোনো দেশ বিশেষ করে তুরস্কে পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে আঙ্কারা।

তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়াশিংটনের এ ধরনের পরিকল্পনা অঞ্চলটিতে অভিবাসন সমস্যা তীব্রতর করবে। আফগানিস্তানে ২০ বছরের আগ্রাসন শেষে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশটি থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর। গেল মে মাসে এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অভিযান জোরদার করে তালেবান।