জমি দলিল হওয়ার সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি

জমি দলিল হওয়ার সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি

জমি দলিল হওয়ার সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি করার মাধ্যমে জনগণের হয়রানি লাঘবে ‘জমি রেজিষ্ট্রেশন ও নামজারি কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের প্রস্তাব’ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা বিভাগের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘এই অনুমোদনের ফলে নতুন জমির ক্রেতা সর্বোচ্চ ৮ দিনের মধ্যে মিউটেশন, পর্চা এবং নামজারি সম্পন্ন করতে পারবে।’

Pop Ads

তিনি বলেন, ‘এর রেকর্ড কারেকশনের দায়িত্ব এসি ল্যান্ডের ওপর বর্তাবে। এ ব্যাপাারে এসি ল্যান্ড প্রতি মাসেই তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পেশ করবে, কতগুলো মিউটেশন হলো এবং কতগুলো রেকর্ড কারেকশন হলো।’

সচিব বলেন, ‘আজকের বৈঠকে এ সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাকে একটি যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত বলা যেতে পারে। এটা দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবাইকে বড় রকমের একটা পরিত্রাণ দেবে। ফলে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হলো এবং এর ফলে মামলা মোকদ্দমাও অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, মানুষের হয়রানি রোধকল্পে জমি রেজিষ্ট্রেশন এবং মিউটেশনের বিষয়গুলোকে আরো স্বস্তিদায়ক করতে এবং জটিলতা নিরসন করে এ বিষয়ে সময় কমিয়ে আনতে অনেক দিন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রচেষ্টা চলছিল।’

সচিব বলেন, বর্তমান নিয়মে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন হয় আইন মন্ত্রণালয়ের অধিনে থাকা সাব রেজিষ্টার অফিস এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা সার্কেল ভূমি অফিস থেকে। দুইটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এখানে সব সময় সমন্বয়সাধনটা কষ্টকর ছিল। এ কারণে একটি দীর্ঘসূত্রিতা থাকার পাশাপাশি রেজিষ্ট্রেশনেও একটা অস্পষ্টতা ছিল।

তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়মে সাব রেজিষ্টার অফিস এবং এসি ল্যান্ড অফিসের মধ্যে একটি ইন্টারকানেকটেবল সফটওয়্যার থাকবে। এই যোগাযোগের ফলে একজন আরেকজনের ডাটাবেজে ঢুকতে পারবে। আর দলিল করার আগেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি বা এসি ল্যান্ড) কার্যালয় থেকে জমির তথ্য জেনে নেবেন সাব রেজিস্টার। একইভাবে দলিলের পর সেই তথ্য এসি ল্যান্ডকে জানিয়ে দেবেন। তখন এসি ল্যান্ড নামজারি করবেন।’

যিনি দলিল করতে যাবেন তাকে ৩টি দলিল করতে হবে, (আগে ছিল দুইটি) একটা সাব রেজিষ্টারের কাছে থাকবে, একটি আবেদনকারি পাবে অপরটি এসি ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। কজেই এসি ল্যান্ড অটোমেটিকালি সফটওয়্যারের মাধ্যমে মিউটেশন সম্পন্ন করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, এখন দেশের ১৭টি উপজেলায় এই কাজ চলছে। তারা আশা করছেন, পর্যায়ক্রমে এক বছরের মধ্যে সারা দেশেই এটি হয়ে যাবে। এর ফলে মামলা ও অনিয়ম কমার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বণ্টন ও নামজারির কাজটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। তবে এই কাজ শুরু হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সম্পত্তি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যেন ঠিকমতো পান, সেটি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৈঠকে আবারও মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় বলে জানান মন্ত্রিপষিদ সচিব। এছাড়া, ‘টেসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ।

কুয়েতের সদ্য প্রয়াত আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল- জাবের আল-সাবাহ-এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে গত ৪-৫ অক্টোবর ২০২০ইং তারিখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কুয়েত সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ এবং বাংলাদেশ গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন-এর আঞ্চলিক অফিস স্থাপন সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।- বাসস