জুমাদাস সানী মাসে করণীয়

জুমাদাস সানী মাসে করণীয়
আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক
আরবী বছরের ষষ্ট মাসের নাম ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘জুমাদাল আখিরা’ অথবা ‘জুমাদাস সানিয়াহ্’ সংক্ষেপে জুমাদাস সানী।অবশ্য আমাদের এই উপমহাদেশে ‘জুমাদিউস সানী’নামে উক্ত মাস সমধিক পরিচিত। জুমাদা শব্দটি‘জুমুদ’থেকে এসেছে। জুমুদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো,স্থির,কঠিন,জমাটবদ্ধ ইত্যাদি। সানী অর্থ দ্বিতীয়। সুতরাং জুমাদাস সানী অর্থ হল,দ্বিতীয় শুকনো ভূমিখন্ড অথবা দ্বিতীয় শীতকাল। এর আগের মাসের নাম জুমাদাল উলা বা প্রথম শীতকাল। জুমাদাস সানী মাস আরবের শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মকালের শুরুবলা যেতে পারে।
শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে পশু-পাখি নিরব হয়ে যায়,এমনকি পানি পর্যন্ত একদম জমে যায়,অপর দিকে গ্রীষ্মকালে অত্যাধিক গরমে পানি শুকিয়ে যায়। তাই এই মাসকে জুমাদাস সানী বলা হয়। ইমাম আবু হানিফা(রহঃ) বলেন,উভয় মাসকে‘জুমাদা’করে নাম রাখার কারণ,নামকরণের সময় আরবে শীতকাল ছিল,এ মাসের ফযীলত সম্পর্কে বাজারে অনেক চটি বই পাওয়া যায়। তাতে এই ভাবে আমল করুন বা এই এই আমল করুন অতঃপর সেখানে লম্বা ফযীলত বর্ণনা করা হয়। অথচ বাস্তবতা হলো,এ মাসের বিশেষ কোন আমল কুরআন সুন্নায় প্রমাণিত নয়।
তাই মনগড়া কোন আমলে লিপ্ত হওয়া কিছুতেই কাম্য নয়। আবার হায়াতের ছোট্ট এই যিন্দেগীতে আমলবিহিন সময় কাটানো বড়ই বোকামী। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেছেন,আমার উম্মতের গড় আয়ু ৬০ থেকে ৭০বছর হবে। (সুনানে তিরমিযী,হাদিস নং ২৩৩১) সুতরাং সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ ও সুন্নাতের পাবন্দি করা আবশ্যক। কারণ নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্টমন্ডিত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, “ওয়া মা খালাক্বতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লিয়া’ বুদূন ‘অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি,যাতে তারা আমার এবাদত করে।(সূরাঃ যারিয়াত,আয়াতঃ ৫৬) সমস্ত পৃথিবীর ¯্রষ্টা আল্লাহ তায়াল মানুষকে যে এক বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তা উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে।
তাই মুমিনের যিন্দেগীকে সহীহ ও সুন্দর আমলের মাধ্যমে সাজানো উচিত। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন,সাথে সাথে ইচ্ছা অনিচ্ছার ক্ষমতাও দিয়েছেন। তাই খোদাপ্রদত্ত ইচ্ছা যথার্থ ব্যয় করে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। পক্ষান্তরে এই ইচ্ছার অসদ্ব্যবহার করে আল্লাহর নাফরমানী করা,মহাশত্রæ শয়তানের স্বরূপ না বুঝে দংশনোদ্যত সাপের মুখে চুমো খাওয়ার পরিণতির মতোই। চিরশত্রæ ইবলিস তার তীক্ষè বড়শীর মুখে দুনিয়ার লোভনীয় টোপ গেঁথে আমাদের শিকার করতে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে স্বয়ং মহান মালিকের সামনে,সেই যুদ্ধ মোকাবেলায় মুমিন ব্যক্তিকে জয়ী ও সফলকাম হতেই হবে।
এর উপায় হচ্ছে সর্ব ক্ষেত্রে শয়তানের বিরুদ্ধাচারণ এবং আল্লাহর আনুগত্য করা। দুনিয়ার প্রতি আসক্তি এবং পার্থিব আশা-আকাংক্ষার মোহে না পরা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার শরীর স্পর্শ করে বললেন,পৃথিবীতে এমনভাবে দিনযাপন কর,যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির।
আর তুমি নিজেকে কবরবাসীদের অন্তভর্‚ক্ত মনে কর। হযরত মুজাহিদ (রাহঃ)বলেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন,‘তুমি সকালে উপনীত হয়ে বিকেলের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না এবং বিকালে উপনীত হয়ে সকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে করো না। আর অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তোমার সুস্থতার এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাও।
কেননা,হে আল্লাহর বান্দা! তুমি তো জান না,আগামীকাল তুমি কি নামে অভিহিত হবে”(মৃত না জীবিত)। (সুনানে তিরমিযী,হাদিস নং ২৩৩৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,“কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা তখন আমাদের একটি কুঁড়েঘর মেরামত করছিলাম।
তিনি প্রশ্ন করলেন,এটা কি করছ? আমরা বললাম,এটা নড়বড়ে হয়ে গেছে, তাই ঠিকঠাক করছি। একথা শুনে তিনি বললেন,আমি তো দেখতে পাচ্ছি সেই ব্যাপারটি (মৃত্যু) এর চেয়েও দ্রæত এসে যাচ্ছে”।(সুনানে তিরমিযী,হাদিস নং২৩৫৩) আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে, আর তোমাদের প্রতিদান তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় কেয়ামতের দিনেই দেওয়া হবে।
তখন যাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রান দেওয়া হবে এবং জান্নাতে দাখেল করা হবে, সেই হলো সফলকাম, আর পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ১৮৫) আসুন যেহেতু এমাসে বিশেষ কোন আমল নেই তাই বেশি বেশি নফল ইবাদত করি।
নির্বোধের মতো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চাকচিক্য ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের ধোঁকায় বিমোহিত হয়ে পরকাল সম্পর্কে উদাসীন না হওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
(শব্দঃ ৫৮০)