জয়পুরহাটে ভিজিডির উপকারভোগীদের থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

259

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাটঃ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে প্রতি মাসে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভিজিডির চাল বিতরণের আগে দুইশ টাকা করে সঞ্চয় দেয়ার সময় ইউপি চেয়ারম্যান মো. বোরহান উদ্দিন তার লোকজন দিয়ে অতিরিক্ত ১৫ টাকা করে আদায় করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান কয়েক বছর ধরে প্রতিমাসে ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছে এ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছিলেন। ক্ষেতলালের ইউএনও ইশতিয়াক আহাম্মেদ (১৩ জুন) সোমবার বিষয়টি জানার পর ভিজিডির চাল বিতরণে উপকারভোগীদের কাছে আর অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়নি। উপকারভোগীরা তাদের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরতের দাবি করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মো. বোরহান উদ্দিনও ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছে অতিরিক্ত পনের টাকা করে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

Pop Ads

সোমবার (১৩ জুন) বেলা ১২টায় বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. বোরহান উদ্দিন নিজে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের ভিজিডির চাল বিতরণ করছিলেন। ইউপি কার্যালয়ের বারান্দায় দুইজন নারী উপকারভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকা আদায় করছিলেন। ভিজিডির চাল বিতরণে দেখভালের দায়িত্বে থাকা কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।

বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে ৪৩৯ জন ভিজিডি উপকারভোগী রয়েছে। তাদের প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। উপকারভোগীদের নামে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক পাঠানপাড়া শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। উপকারভোগীদের প্রতিমাসে চাল বিতরণের সময় সঞ্চয়ের দুইশ টাকা করে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। এজেন্ট ব্যাংকের লোকজন ইউনিয়ন কার্যালয়ে এসে সঞ্চয়ের টাকা আদায় করে তা উপকারভোগীদের ভিজিডির বইয়ে টাকার অংক লিখে দেন।

৫০-৬০ জন উপকারভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১২ সালে মো. বোরহান উদ্দিন বড়তারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এরপর ২০১৭ সালে  নির্বাচনে তিনি আবারও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুই মেয়াদেই চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পনেরো টাকা করে আদায় করে আসছিলেন। প্রতিমাসে ৪৩৯ জন উপকারভোগীর কাছে ৬ হাজার ৫৮৫ টাকা আদায় করেন।

তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার ভয়ে উপকারভোগীরা প্রতিবাদ করতেন না। সম্প্রতি কয়েক ইউপি সদস্যের সঙ্গে চেয়ারম্যানের মনোমালিন্য হয়। তারা সোমবার (১৩ জুন) ভিজিডির চাল বিতরণের আগে পনেরো টাকা করে আদায়ের বিষয়টি ইউএনও ইশতিয়াক আহাম্মেদকে জানান। এ কারণে সোমবার চাল বিতরণের সময় চেয়ারম্যান লোকজন পনেরো টাকা করে আদায় করেননি।

ভিজিডির উপকারভোগী মেহের নিগার ও মোছা রুবিনা বলেন, প্রতিমাসে ভিজিডির চাল দেয়ার সময় আমাদের সবার কাছে ২১৫ টাকা করে নেয়া হয়। ভিজিডির বইয়ে দুইশ টাকা করে লেখে দেয়া হয়। দুই বছর পর আমরা লাভসহ জমাকৃত টাকা ফেরত পাব। অতিরিক্ত ১৫ টাকা করে কেন নেয়া হয় তা আমরা জানি না। যদি ভাতার বই বাতিল করে এই ভয়ে জিজ্ঞাসাও করতে যাইনি। সোমবার (১৩ জুন) ভিজিডির চাল বিতরণের আগে ২১৫ টাকা দিয়েছিলাম। আমাদের ১৫ টাকা ফেরত দিয়েছে। তাহলে আগে কেন ১৫ টাকা করে আদায় করা হল। আমরা আগে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দাবি করছি।

ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি নাহার বানু ও কনি আখতার বলেন, আমরা ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে চাল বিতরণের সময় দুইশ টাকা করে সঞ্চয় আদায় করি। এই টাকা উপকারভোগীর নিজ নামে হিসেবে জমা করা হয়। দুই বছর পর তারা লাভসহ এ টাকা ফেরত পাবেন। আমাদের পাশেই চেয়ারম্যান তার লোকজন বসিয়ে উপকারভোগীদের কাছে ১৫ টাকা করে আদায় করেন। এই টাকা কেন নেয়া সেটি আমরা জানি না। তবে আজকে চেয়ারম্যানের লোকজন পনেরো টাকা করে আদায় করেনি।

বড়তারা ইউপির পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল গফুর বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন লোকজন দিয়ে ভিজিডির উপকারভোগীর কাছে পনেরো টাকা করে আদায় করেন। আগের মেয়াদেও একইভাবে উপকারভোগীদের কাছে টাকা আদায় করেছিলেন। চেয়ারম্যান এ টাকা কি করেন সেটি জানি না। ভিজিডির উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা নিতে আমরা (সদস্যরা) বারণ করেছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের পাত্তা দেননি।

বড়তারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. বোরহান উদ্দিন ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৫ টাকা করে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পরিষদ চালাতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয় সেই টাকার কোনো বরাদ্দ থাকে না। আর সরকারিভাবে ভিজিডির চাল পরিবহনের খরচা পাওয়া গেলেও খাদ্যগুদাম থেকে লোড-আন লোডের টাকা পাওয়া যায় না। আগে চালের বস্তা বিক্রি করে খরচ মেটানো হতো। এখন বস্তা বিক্রি করা যায় না। একারণে ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে নেয়া হয়। ইউএনও বলার পর আজকে থেকে টাকা নেয়া হয়নি।

ভিজিডি বাস্তবায়ন করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। ক্ষেতলালের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান বলেন, ভিজিডি উপকারভোগীদের দুইশ টাকা করে সঞ্চয় বাধ্যতামূলক। উপকারভোগীরা দুই বছর লাভসহ সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পাবেন। কেউ অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবেন না। বড়তারা ইউনিয়নে ১৫ টাকা নেওয়ার ঘটনাটি আজকেই জেনেছি।

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার  ইশতিয়াক আহাম্মেদ বলেন, ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে নেয়ার বিষয়টি জানার পর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আজকে চাল বিতরণের সময় টাকা নেয়া হয়নি বলে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান ভিজিডির উপকারভোগীদের কাছে কোনো টাকা নিতে পারবেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুপ্রভাত বগুড়া/ এম রাসেল আহমেদ