দেশের গবেষকদের উদ্ভাবিত তরমুজের নতুন দু’টি জাত উদ্ভাবন !

দেশের গবেষকদের উদ্ভাবিত তরমুজের নতুন দু'টি জাত উদ্ভাবন । ছবি-সংগৃহীত

সুপ্রভাত বগুড়া (কৃষি সংবাদ): দেশের গবেষকদের উদ্ভাবিত তরমুজের দুটি জাতের বীজ চাষীদের জন্য অশেষ সম্ভাবনার আলো নিয়ে এসেছে। চাষীরা প্রতি বছর হাইব্রিড জাতের বীজ কেনার ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবে। এর অঙ্কুরোদ্গম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। বীজ সংরক্ষণ করা যাবে সহজে। একবারের পরিবর্তে বছরে চাষ হবে তিনটি। তরমুজের আকার-ওজন নিয়েও তেমন বিঘ্ন হবে না। বরং তরমুজ মিলবে লালের পাশাপাশি হলুদ রঙ। স্বাদও হবে বেশি। সর্বোপরি তরমুজ বীজ আমদানিনির্ভরতা বন্ধ হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে প্রতি বছর অন্তত চার শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। উপরন্তু বীজ রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এরই মধ্যে পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জাত দুটির মাঠপর্যায়ের চাষে সফল হয়েছেন। বর্তমানে চলছে অনুমোদন প্রক্রিয়া। এরপরই বীজ দুটির নামকরণ শেষে তা বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তরমুজ বরাবরই গ্রীষ্মের রসালো ফল হিসেবে পরিচিত। চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও যথেষ্ট লাভজনক হওয়ায় গত কয়েক বছরে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ চাষের ব্যাপক প্রসার হয়েছে।

Pop Ads

কিন্তু তরমুজ চাষের প্রসার বাড়লেও এর বীজ পুরোটাই আমদানিনির্ভর। তরমুজের বীজ সংগ্রহ খাতেই চাষীদের অর্থের একটি বড় অংশ বিনিয়োগ করতে হয়। বীজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে ইচ্ছেমতো দাম আদায় করে। চাষীরা রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়ে। আর আমদানি করা বীজ হাইব্রিড হওয়ায় উৎপাদিত তরমুজ থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। প্রতি বছর চাষীদের বীজ কিনতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর আলাদা আলাদা জাতের হাইব্রিড জাতের বীজ আমদানি করায় চাষীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। সঠিক সময়ে এর অঙ্কুরোদ্গম হয় না। পরিচর্যার বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

আবহাওয়া ও পরিবেশে খাপ না খেলে পুরো চাষ মাঠে মারা যায়। এ অবস্থায় দীর্ঘ গবেষণায় পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ সহিষ্ণু তরমুজের দুটি নিজস্ব জাত উদ্ভাবন করেছে। ইতোমধ্যে লাল এবং হলুদ রঙের জাত দুটির সফলতাও মিলেছে। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, দেশের চাষীদের বীজের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর চীন, ভারত, জাপান এবং মালয়েশিয়া থেকে তরমুজের হাইব্রিড বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বিভিন্ন কোম্পানি এসব হাইব্রিড বীজ নানান নামে সংগ্রহ করে থাকে। ফলে উৎপাদিত তরমুজের জাতের মান ও ধারাবাহিকতা থাকে না।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র তরমুজের নিজস্ব জাত উদ্ভাবন নিয়ে কাজ শুরু করে। গত ২০১৫ সাল থেকে প্রায় পাঁচ বছর কেন্দ্রে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার ফলে তরমুজের দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাত দুটি ওপেন পলিনেটেড ভ্যারাইটি বা পরাগায়ন হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ থেকে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করতে পারবে এবং এতে যথাসময়ে অঙ্কুরোদ্গম হবে। ফলে কৃষকদের প্রতি বছর বীজ কিনতে অর্থ ব্যয় করতে হবে না। অনেক সময় দেখা যায় আমদানি করা বীজ অঙ্কুরোদ্গম হয় না।

তখন কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়। পাশাপাশি শুধু গ্রীষ্মকালেই নয়, এ জাত দুটি সারা বছর আবাদ করা যাবে। বিশেষ করে বছরে অন্তত তিনবার তরমুজ উৎপন্ন হবে। এতে সারা বছরই মানুষ তরমুজ খেতে পারবে। পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ ইদ্রিস আলী হাওলাদার এ বিষয়ে জানান, উদ্ভাবিত হলুদ এবং লাল রঙের তরমুজের বীজ পরাগায়ন হওয়ায় চাষীরা নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে এবং বীজ থেকে সহজেই চারা বের হয়ে আসবে। ফলে চাষীরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হবে। ভাল বীজের নিশ্চয়তা থাকবে।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে বিদেশ থেকে তরমুজ বীজ আমদানি করতে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। জাত দুটি অনুমোদন পেলে তরমুজের বীজ আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এ তরমুজ যেমন খেতে মিষ্টি হবে। তেমনি এর আকার-ওজন অনেকটা ফ্যামিলি সাইজের হবে। ভোক্তারা সহজেই এটি কিনতে আকৃষ্ট হবে।

কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত তরমুজের জাত দুটি বর্তমানে জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদনের পর পরই বীজ দুটির নামকরণ করা হবে। এরপর তা চাষীদের পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এর ব্যাপক চাষের মাধমে দেশের দক্ষিণ উপকূলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।