প্রস্টেট সমস্যা থেকে হতে পারে ক্যানসার!

প্রস্টেট সমস্যা থেকে হতে পারে ক্যানসার!

সুপ্রভাত বগুড়া (স্বাস্থ্য চিকিৎসা ): বাবারা সন্তানদের খেয়াল রাখেন। পুরো পরিবারের খেয়াল রাখেন। কেবল খেয়াল রাখেন না নিজের। তাঁরা ‘সাইলেন্ট সাফারার’। বাবারা সবচেয়ে বেশি ভোগেন প্রস্টেটের সমস্যায়। ডা. এন কে নাতাশার সঞ্চালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এ বিষয় নিয়ে। অনুষ্ঠানটি প্রথম আলো ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের ফেসবুক পেজে সরাসরি সমপ্রচারিত হয়েছে।

প্রস্টেট কী? এর কাজ কী?
মূত্রায়শের নিচে থাকে প্রস্টেট। দেখতে অনেকটা সুপারির মতো আকৃতির। এটি একটা যৌনাঙ্গ, কেবল পুরুষদের আছে। এটি প্রজননকালীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এটি সময়ের সঙ্গে বড় হয়ে যায়। ৪০ বছর বয়স থেকে প্রস্টেট বড় হতে থাকে। ৬০–৬৫ বছর বয়সে যথেষ্ট বড় হয়ে যায়। এটা একসময় কঠিন সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেক সময় প্রস্রাবের গতি ধীর হতে হতে বন্ধও হয়ে যায়। এমনকি প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ভেতরে ক্যানসারও সৃষ্টি করতে পারে। প্রাথমিকভাবে নল দিয়ে প্রসাব বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। অনেকের অপারেশনের দরকার হতে পারে।

Pop Ads

প্রস্টেটের সমস্যার উপসর্গ :
১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২. প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা পুরোপুরি না হওয়া
৩. প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া
৪. রাতে ঘুম ভেঙে বারবার প্রস্রাব করতে যাওয়া
৫. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও আসতে পারে

কী ধরনের পরীক্ষা করা হয় :
অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম প্রটেস্ট গ্ল্যান্ডে হাত দিয়ে কী ধরনের অনুভূতি হচ্ছে, তা জানতে চান। তিনি বলেন, এর উত্তরের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা। স্পর্শ করে দেখা হয় প্রস্টেট বড় হয়ে গেছে কি না বা কত বড় হয়েছে। এরপর দেখা হয় আশপাশের এরিয়ায় কোনো অস্বাভাবিক কিছু আছে কি না। টিউমারজাতীয়। যদি চাকা চাকা কোনো কিছুর অস্তিত্ব মেলে, তাহলে ক্যানসার পরীক্ষা করা হয়। প্রস্রাবের গতি পরীক্ষা করা হয়। তা ছাড়া কিছু ইউরিন টেস্ট বা ব্লাড টেস্টও করা হয়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ভেতরের অবস্থা দেখা হয়। সেটার ভিডিও রেকর্ড করে বিশ্লেষণ করা হয়। এসব সাধারণ পরীক্ষায়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা ধরা পড়ে। আরও কিছু সূক্ষ্ম পরীক্ষা আছে।

চিকিৎসাপদ্ধতি :
উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। আন্দাজে বললে হবে না যে প্রচুর পানি পান করুন। তাতে সেরে যাবে। কেননা যার প্রস্রাবে সমস্যা, তাকে যদি আরও পানি পান করতে বলা হয়, তাহলে পানি থেকে উৎপন্ন সেই প্রস্রাব বের করা আরও কঠিন হয়ে যাবে। প্রস্রাবের চাপে তাঁর জীবন দুর্বিসহ হয়ে যাবে। তাই আমরা প্রাথমিকভাবে প্রস্টেটের যেকোনো সমস্যায় পানি পান কমিয়ে দিতে বলি। এতে রোগী যথেষ্ট আরাম পান। এই গেল প্রাথমিক চিকিৎসা।

গ্রেট ওয়ানের জটিলতায় আমরা জীবনযাপন পদ্ধতি বদলাতে বলি। গ্রেড টু-এর সমস্যায় আমরা কিছু ওষুধ দিই। সাধারণ কিছু ওষুধ আছে। সেগুলো নিরাপদে খাওয়া যাবে। তবে এই ওষুধগুলোতে ব্লাড প্রেশার কমবে। তাই যাদের ব্লাড প্রেশার লো, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সতর্কভাবে খাবেন। গ্রেড টুতে এন্ডোস্কোপিক অপারেশন করা হয়। যে অংশটা বেশি আক্রান্ত, সেটি আমরা ড্রেজিং করে দিই। ফলে প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যায়। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে প্রস্টেট ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, প্রস্টেট ক্যানসারও নিরাময়যোগ্য। তবে তা শর্তসাপেক্ষে। প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতেই ধরা পড়লে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু শরীরে ছড়িয়ে পড়লে খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে প্রস্টেট ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার পরও ১০ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। আর এই সম্ভাবনা প্রায় ৮০ ভাগ। তবে আধুনিক এই চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

প্রস্টেটের সমস্যা এড়াতে যা করবেন:
১. দুই লিটার থেকে কমিয়ে এক বা দেড় লিটার পানি খেতে হবে। জলীয় খাবার কম খেতে হবে।

২. রাত আটটার ভেতরে রাতের খাওয়া সারতে হবে। রাতে খাওয়ার পর পানি বা পানিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যেমন শোয়ার আগে দুধ খাওয়া যাবে না। ডিনারের সঙ্গে খেয়ে ফেলতে হবে। অনেকগুলো ওষুধ থাকলে সব কটি একসঙ্গে খেয়ে ফেলতে হবে। যাতে কিছুক্ষণ পরপর পানি খাওয়া না হয়। আর পানিটাও কম খাওয়া হয়।

৩. বয়সকালে একটি রেগুলার চেকআপ করিয়ে নিলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। বড় জটিলতা থেকেও বাঁচা যায়।
প্রেস্টেট নিয়ে বাবাদের সতর্ক থাকতে হবে। সন্তানদেরও সতর্ক থাকতে হবে। বাবার বয়স পঞ্চাশের বেশি হলেই ইউরোলজিস্ট দেখিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। বছরে একবার দেখালে অনেক বড় জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।