প্রিয় নবীর প্রিয় দশটি সুন্নাত

দশটি বিষয় নবীদের সুন্নাত

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দশটি বিষয় নবীগণের সুন্নাতের অন্তর্গত। (১) খতনা করা। (২) গোঁফ ছাটা। (৩) নখ কাটা। (৪) নাকের ছিদ্রের লোম কাটা। (৫) বগলের পশম উঠানো। (৬) নাভির নিচের লোম কামানো বা উঠানো। (৭) মিসওয়াক করা। (৮) আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধোয়া। (৯) ইস্তেঞ্জা করা (পানি দিয়ে শৌচ করা)।

রাবী বলেন, দশমটি আমি ভুলে গেছি। সম্ভবত তা “কুলি করা” হবে (মুসলিম)। অপর বর্ণনায় ‘খতনা’ করার স্থলে দাড়ি লম্বা করার রয়েছে।

Pop Ads

(১) খতনা করাঃ মুসলমানী করা ইসলামের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট ও প্রতীক। তাই এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। খতনা করানোর কোনো বয়স নির্ধারিত নেই। তবে বালেগ হওয়ার আগে খতনা করানো উচিত। বালেগ হওয়ার আগে যদি কারও খতনা না হয়ে থাকে বা কোন অমুসলিম বালেগ হওয়ার পর মুসলমান হয়, তাহলে বালেগ হওয়া সত্তে¡ও তাদের খতনা করার হুকুম বলবৎ থাকবে। এজন্য সতর খোলার অবকাশ রয়েছে।

(২) গোঁফ ছাটাঃ মোচ এ পরিমাণ কাটতে হবে, যেন উপরের ঠোটের প্রান্ত স্পষ্টভাবে দেখা যায়। মোচ ছেটে এত ছোট করা উত্তম, যেন তা মুন্ডানোর মত হয়ে যায়। মহিলার গোঁফ দাড়ি হলে মুন্ডানো মুস্তাহাব।

(৩) নখ কাটাঃ হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নাত। নখে অনেক ময়লা থাকে যা খাদ্যদ্রব্যের সাথে পেটে গিয়ে অসুখ হতে পারে। জুমার দিন নখ কাটা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সকল মসিবত হতে আল্লাহ তাকে হেফাযত করবেন। (মুসলিম) হাতের নখ কাটতে প্রথমে ডান হাতের শাহাদত (তর্জনী) আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ আঙ্গুল পর্যন্ত কাটা। এরপর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে শুরু করে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত কাটা।

সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ কাটা। নিয়মটি সহজে এভাবেও মনে রাখা যায় যে, উভয় হাত মুনাজাতের মতো ধরে ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল পর্যন্ত, তারপর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলের নখ। আর পায়ের নখ কাটতে ডান পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাপ পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা সুন্নাত। গোসল ফরয থাকা অবস্থায় নখ কাটা এবং দাঁত দিয়ে নখ কাটা মাকরূহ। মহিলাদের নখে মেহেদি লাগানো সুন্নাত।

(৪) নাকের লোম কাটাঃ নাকের ভিতরের পশম কাটা অর্থাৎ উপড়ানোর চেয়ে কাঁচি দ্বারা কাটা উত্তম এবং নাকে এভাবে পানি দেয়া যে, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাকের ভিতর পানি টান দিয়ে তা আবার ফেলে দেয়া। গবেষকদের মতে এতে মস্তিষ্ক সতেজ থাকে।

(৫) বগলের লোম উঠানোঃ বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলাই উত্তম, তবে কাটাও জায়েয।

(৬) যৌনকেশ কামানোঃ নাভির নিচের পশম পুরুষের জন্য কামানো উত্তম। আর নারীর জন্য উপড়ে ফেলা বা লোম নাশক ব্যবহার করা উত্তম। এই কামানোর সময় নাভির দিক থেকে শুরু করা নিয়ম। অন্ডোকোষ, তার নিচে ও মলদ্বারের আশেপাশের পশম দূর করা মুস্তাহাব। এখানে উল্লেখ্য যে, মোচ, বগলের পশম, নাভির নিচের লোম, নখ ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে কাটা উত্তম। আর চল্লিশ দিনের মধ্যে পরিষ্কার না করলে গোনাহ হবে।

(৭) মিসওয়াক করাঃ মিসওয়াক সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত। মিসওয়াক কনিষ্ঠ আঙ্গুল পরিমাণ মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা রাখা চাই। মিসওয়াকের ৭০টি উপকারিতা রয়েছে। সর্বনি¤œ উপকারিতা হলো, মৃত্যুর সময় কালেমা নসীব হয়। স্বাস্থ্য রক্ষায় মিসওয়াক অনেক বড় হাতিয়ার। হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মিসওয়াক করে নামায পড়লে সেই নামাযের সাওয়াব, মিসওয়াক ছাড়া নামাযের চেয়ে সত্তর গুণ বেশী। (বাইহাকী)

(৮) আঙ্গুলের গিরা ধোয়াঃ হাঁটুর গ্রন্থি, উরুসন্ধি, বোগলের নিচে, কানের প্যাঁচে নাভির ভিতরে এবং আঙ্গুলের ফাঁকসমূহ ভালোভাবে ধোয়া। কেননা, এ জায়গাসমূহে বহুত ময়লা জমে থাকে। হাদীসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে।

(৯) ইস্তেঞ্জা করাঃ পেশাব-পায়খানার পর মাটি, ঢিলা কিংবা টয়লেট পেপার দিয়ে মলমূত্র পরিষ্কার করার পর শৌচকার্যে পানি ব্যবহার করা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র বান্দাকে অত্যাধিক ভালোবাসেন।

(১০) দাড়ি রাখাঃ দাড়ি রাখা পুরুষের সার্বক্ষণিক সুন্নাতও বটে। দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ লম্বা রাখতে হবে। দাড়ি মুন্ডানো বা এক মুষ্ঠির চেয়ে কম রেখে ছাটা কবীরা গোনাহ। অবশ্য যদি মহিলাদের দাড়ি উঠে তবে তা মুন্ডানো জরুরি। (ইসলামী ফিকাহ্)