সুপ্রভাত বগুড়া (রান্না-বান্না): রান্না নিয়ে নিরীক্ষা করার জন্য যখন হাতে রয়েছে অঢেল সময় তখন রান্না করতে পারেন গতানুগতিক পোলাও কিংবা বিরিয়ানি থেকে একটু আলাদা কিন্তু খেতে অসাধারণ একটি আইটেম হচ্ছে ‘উজবেক পোলাও।’ এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ উজবেকিস্তানের একটি আইটেম।
স্থানীয়ভাবে এটি সিগনেচার ডিশ হিসেবে পরিচিত এবং যে কোনও উৎসবে এটি থাকা আবশ্যক। উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দের বাসিন্দা বন্ধু আলিমোভার কাছ থেকে পাওয়া এই রেসিপিটি।
উপকরণ : বাসমতী চাল- ৩৫০গ্রাম, খাসি, গরু কিংবা ভেড়ার মাংস- ১ কেজি (৪ সেন্টিমিটার টুকরো করে কাটা) আস্ত দারচিনির টুকরা- ১টি, আস্ত জিরা- ১ টেবিল চামচ, আস্ত সাদা গোলমরিচ- আধা টেবিল চামচ
বড় কালো এলাচ- ২টি, ছোট এলাচ- ১২-১৪টি
গাজর- ২টি
কিসমিস- আধা কাপ
বাদাম- আধা কাপ (চীনা বাদাম বাদে)
চিকপিস বা চানার ডাল- কোয়ার্টার কাপ (সেদ্ধ করে রাখা)
বড় রসুন- ২টি
বড় পেঁয়াজ- ২টি
তেল/ঘি- পরিমাণ মতো
লবণ- পরিমাণ মতো
চিনি- ইচ্ছে মতো
প্রস্তুত প্রণালি : একটি বড় পাত্রে মাঝারি আঁচে ঘি কিংবা তেল গরম করে নিন। সয়াবিন তেলের বদলে ঘি ব্যবহার করলে ফ্লেভারটা সুন্দর আসে, চাইলে তেল এবং ঘি একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। তেল কিংবা ঘি গরম হয়ে আসলে কেটে রাখা পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বেরেস্তার কাছাকছি বাদামি রঙ ধারণ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অন্য একটি পাত্রে (কড়াই হলে ভালো) গরম মসলাগুলোকে সামান্য আঁচে রেখে ফ্লেভার ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মসলাগুলো যখন ফ্লেভার ছেড়ে দেবে সে সময় গ্রাইন্ডারে পিষে সেগুলোকে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
পেঁয়াজ বাদামি রঙ ধারণ করলে গুঁড়া করা এ গরম মসলাকে পাত্রের মধ্যে ঢেলে পেঁয়াজের সাথে কষাতে হবে। উজবেকি পোলাও রান্নায় যদিও আদা বাটা এবং রসুন বাটার ব্যবহার নেই তবে আপনি চাইলে আপনার স্বাদের সাথে সামঞ্জস্য করে আদা ও রসুন বাটা ব্যবহার করতে পারেন। মসলা কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে কেটে রাখা মাংসের টুকরোগুলো ঢেলে দিতে হবে। স্বাদমতো লবণ দিয়ে দশ থেকে বারো মিনিট মাংসের টুকরোগুলোকে ভেজে নিন।
মাংসের টুকরোগুলো যখন অনেকটা বাদামি রঙ ধারণ করবে, সে সময় দুই কাপ পানি দিয়ে পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে আরও পনেরো থেকে বিশ মিনিট রান্না করুন। যদি পোলাওয়ে একটু মিষ্টি স্বাদ চান তাহলে সে অনুযায়ী চিনি দিতে পারেন। গাজর জুলিয়ান স্টাইলে কেটে দিয়ে দিন। চাইলে এখানে আরও এক কাপ পানি ব্যবহার করতে পারেন গাজরের টুকরোগুলোকে সেদ্ধ করার জন্য। গাজর সেদ্ধ হয়ে আসলে এর মধ্যে আগে থেকে সেদ্ধ করে রাখা চিকপিস বা চানার ডালগুলো ঢেলে দিন।
একটি কড়াইয়ে ঘি কিংবা বাটার দিয়ে বাদাম ও কিসমিসগুলোকে ভেজে রাখতে হবে। চানার ডালের মতো সেগুলোকে যে পাত্রে মাংস সেদ্ধ করা হয়েছিল সে পাত্রে ঢেলে সেদ্ধ করা মাংস, গাজর, চানার ডাল, বাদাম ও কিসমিস বেশ কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। চাল এক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পানি ঝরিয়ে পাত্রের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।
অনুপাত হিসেব করলে এক কাপ চাল সেদ্ধ করার জন্য জন্য দুই কাপ পানি ব্যবহার করা শ্রেয়। পানি শুকিয়ে গেলে দুই টেবিল চামচ এলাচ ও দারুচিনির গুঁড়া চালের মধ্যে ছড়িয়ে দিন। দুইটি আস্ত রসুন (খোসা ছড়ানোর দরকার নেই) এ সময় পাত্রের ভেতর ঢেলে চাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর পাত্রের মুখ পুরোপুরি সিলগালা করে মিডিয়াম ও লো ফ্লেমের মাঝামাঝি আঁচে পাত্রটিকে দমে রাখতে হবে।
গ্যাসের চুলা হলে অনেক সময় তলায় পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে, এক্ষেত্রে আপনারা যেটি করতে পারেন একটি তাওয়া গরম করে তাওয়ার ওপর পাত্রটিকে রেখে দমের জন্য রেখে দিন। আর ওভেনে রান্না করতে চাইলে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৪০ মিনিট বেক করতে হবে। এভাবেই তৈরি হবে মজাদার উজবেক পোলাও।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া