বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তিন সতীনের প্রচারণা

বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে তিন সতীনের প্রচারণা। ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব বগুড়া শাজাহানপুর প্রতিনিধি): গল্প, উপন্যাসে ‘সতিন’ মানেই খল চরিত্র, ঝগড়াটে বা বিপরীতমুখী মনোভাব প্রকাশ পায়।  কিন্তু বাস্তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মাজেদা বেগম সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর জয়ের জন্য তার সতিনেরা দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারী ওই এলাকায় গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। আর তিন সতিন একই সঙ্গে ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ায় বিষয়টি ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ে যখন সতিনদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত হয় না, তখন এক সতিনের জয়ের জন্য আরও দুই সতিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোট চাওয়ার বিষয়টি একটি দৃষ্টান্ত।

Pop Ads

জানাযায়,পৌর এলাকার  বন্তেঘরী মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ এর বর্তমানে ৪ স্ত্রী। এর মধ্যে ৩ সতীন মিনু বেগম, বেনু বেগম ও মাজেদা বেগম। কদিন আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাদ তাঁর এই ৩ স্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। সিদ্ধান্ত নেন, যে কোনো এক স্ত্রীকে দিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাবেন।

এতে স্থির করা হয় তৃতীয় স্ত্রী মাজেদা বেগম বয়সে কম এবং তাদের মধ্যে যোগ্য মনে হওয়ায় তাকে প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এটাও সিদ্ধান্ত হয় বিজয় ছিনিয়ে আনলে সুবিধা সকলেই পাবেন। এজন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে কাজ করে তাদের সতীন মাজেদা বেগমের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।

তাই এ বিজয় ছিনিয়ে নিতে তিন সতিন এক সঙ্গে ভোটারের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোট চাইছেন। মাজেদা বেগম ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন ভোরে তাঁরা তিন সতিন মিনু বেগম, রেনু বেগম ও মাজেদা বেগম স্বামী আব্দুস সামাদকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। গভীর রাত পর্যন্ত জয়ের আশায় ওয়ার্ডের এ-বাড়ি থেকে ও-বাড়ি ক্লান্তিহীনভাবে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন।

বন্তেঘরী গ্রামের ভোটার ফজলুর রহমান (৪৫) বলেন, তাঁদের এই তিন সতিনের প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে আলাদা একটা উৎসাহ নিয়ে এসেছে। বিধায় মাজেদা বেগম এখন এ পৌরসভার আলোচিত প্রার্থী।’
সতীন মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা হাঁড়ি। কিন্তু সবাই আপন বোনের মতো । শুধু ভোট নয়, সকল সুখে-দু:খে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াই।’

প্রাথী মাজেদা বেগম বলেন, ‘সতিন মানেই মনে করা হয় শত্রু। কিন্তু আমি ভাগ্যবান। সতিনরা আমার কাছে বোনের মতো। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবো।’ আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীদের নিয়ে আমি খুশি। তাঁরা সব সমস্যাকে মিলেমিশে মানিয়ে নিতে পারে। আর তাঁদের এই মধুর সম্পর্কের কথা ভোটারেরা জানতে পেরে সকলেই খুশি।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুস সামাদের চার স্ত্রীর। এরমধ্যে বড় স্ত্রী সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। মাজেদা বেগম বর্তমানেও ওই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। গতবারেও একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে তাঁরা ভোটারদের মন জয় করেছিলেন।