বগুড়ায় ১নং ফাপোঁর ইাউনিয়নে মেম্বার রানা ২২ মাসে আত্মসাৎ করলো ভুক্তভোগী ইসকেনার ৬৬০ কেজি ভিজিডি চাল !!

ফাপোঁর ইাউনিয়নের মেম্বার রানা ২২ মাসে ৬৬০ কেজি ভিজিডি চাল আত্মসাৎ করলো ভুক্তভোগী ইসকেনার !! ছবি-প্রতিবেদক

ফাপোঁর ইাউনিয়নে ভিজিডির চাল বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি !

সুপ্রভাত বগুড়া (গরম খবর): বগুড়া সদরের ১নং ফাপোঁর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: আনোয়ার হোসেন রানা এবং মহিলা মেম্বার রুলিফা বেগম ” মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্বতবায়িত” ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের মাসিক বরাদ্দকৃত চাল কার্ডধারী উপকারভোগীকে না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত ভিজিডি কার্ডের আওতায় ১নং ফাপোঁর ইউনিয়নে মোট ১৪২জন উপকারভোগীর নামের তালিকা থাকলেও অনেকের হাতেই পৌছেনি ভিজিডি কার্ড, মেলেনি বরাদ্দকৃত চাল। ভুক্তভোগীদের অনেকেরই অভিযোগ স্থানীয় মেম্বার রানা ও মহিলা মেম্বার রুলিফার যোগসাজোসে নিজেরাই এই চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসছে।

Pop Ads

এদিকে ১নং ফাপোঁর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চকদূর্গা গ্রামের শুকুর আলীর স্ত্রী ইসকেনা বেগম জানান,  ভোটার আইডি ও ছবি জমা নিয়ে কার্ডের জন্য ২২মাস ধরে ঘোরাচ্ছেন মেম্বার রানা। অবশেষে খোঁজ নিয়ে তিনিও জানতে পেরেছেন ২২মাস আগেই তার নামে ভিজিডি কার্ড ইাস্যু হয়েছে এবং চালও উত্তোলন হয়েছে ২২বার। কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হিসাবে ২২ মাসে চাল পাওয়ার কথা ৬৬০ কেজি অথচ, তালিকার ৪০নং উপকারভোগী হওয়া শর্তেও ইসকেনা বেগম এখন পর্যন্ত পাননি এক মুঠো চাল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু ইসকেনা বেগম নয়, রানা মেম্বারের নিজস্ব লোকজন ছাড়া এই তালিকার আওতায় কারো হাতেই কার্ড ও চাল মেলেনি। এলাকার কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলতে গেলেই মেম্বার রানা ও তার লোকজন তেরে আসে। এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে বা লোক জানাজানি করলে দেখে নেয়ারও হুমকী দেয়।

এদিকে গত কয়েকদিন যাবৎ উক্ত বিষয়ে এলাকার গোণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে শালিশি বৈঠকে বিষয়টি নিষ্পত্তি বা ধামা চাপা দেয়ার জন্য মেম্বার রানা ও মহিলা মেম্বার রুলিফা বেগম ভুক্তভোগী ইসকেনা বেগমকে ৪,০০০ (চার হাজার) টাকা দিয়ে সমাধানের প্রস্তাব দেন। এবং লোক জানাজানি যেন না হয় সে বিষয়ে হুশিয়ারি দেন। অথচ ২২ মাসে ইসকেনা বেগমের ৬৬০ কেজি চাল পাওয়ার কথা যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ১নং ফাঁপোর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার রানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুপ্রভাত বগুড়াকে জানান, ‘এই ধরণের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, যারা গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছেন। এবং মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে হেয়প্রতিপণ্য ও হয়রানি করার চেষ্টা করছেন।’

ভুক্তভোগী ইসকেনা ভিজিডির তালিকাভুক্ত হবার পরেও কেন চাল পেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো মেম্বার, আমি তো চাল বিতরণ করিনা, এটা ইউনিয়ন পরিষদ বলতে পারবে, এটা সচিব সাহেব বলতে পারবে, এটা চেয়ারম্যান সাহেব বলতে পারবেন। এই কার্ডগুলো জমা হয় পরিষদে তারপর অনুমোদন দেন চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই, বিতরণও করেন তিনি নিজেই, এই কার্ড কে নিয়েছে, কে খেয়েছে কিভাবে বলবো, তাছাড়া প্রতিমাসে বিতরণের সময় সচিব থাকে, চেয়ারম্যান থাকে, ট্যাগ অফিসার থাকে, ইউএনও মনোনিত অফিসার থাকেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন, সেখানে নিজে চাল তুলে নেয়ার তো কোন সুযোগ নেই’।

উপকারভোগীর ভিজিডি কার্ড মেম্বারের হাতে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ এটা কোন মেম্বারের কাছে থাকার কথা নয় আমার কাছে এধরনের কোন কার্ড নেই যারা অভিযোগ করছেন তাদের আমি জোর গলায় বলছি এবং চ্যালেঞ্জ করছি এই কার্ডের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তাছাড়া কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমান করতে পারে আমি পুরো ইউনিয়ন জুতার মালা পরে ঘুরবো। আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত।

এদিকে মহিলা মেম্বার রুলিফা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “কার্ডটি তার কাছেই রয়েছে। তিনি বলেন, অযথা রানা মেম্বার কে ফাঁসিয়ে লাভ নেই, ইসকেনা আমার পরিচিত আমি নিজেই ওর নাম ঠিকানা ও কাজগপত্র ব্যবহার করে পারসোনাল ভাবে ভিজিডি কার্ডটি ইস্যু করে আমার কাছে রেখেছি। সত্যি কথা ভাই আমি মহিলা মেম্বার, আমার তো এক্সট্রা কোন কামাই নাই। আমি গরিব মানুষ আমার নিজের প্রয়োজনে এই চাল তুলে নিয়েছি। তাতে আমার জেল হোক ফাঁসি হোক যা হয় হবে। কত চেয়ারম্যান মেম্বারই তো চাল চুরি গম চুরি করে খায়। আমি তো তা করিনি আমার নিজের প্রয়োজনে এটা করেছি। কার্ডটা এখনও আমার কাছেই আছে।”

এদিকে এলাকার সচেতন মহলের দাবি সরকারের বরাদ্দকৃত লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার চাল সাধারণ মানুষকে না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করে রানা মেম্বার ও মহিলা মেম্বার রুলিফা বেগম যে অপরাধ করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।