বগুড়ায় ৫’শ বছরের পুরাতন  মসজিদ এখন বিলুপ্তির পথে !! 

বগুড়ায় ৫'শ বছরের পুরাতন  মসজিদ এখন বিলুপ্তির পথে !! 

শাফায়াত সজল, কাহালু থেকে ফিরেঃ কেউ বলেন ৫০০ বছর পুর্বের আবার কেউ বলেন ১ হাজার বছর আগের, আবার অনেকেই বলেন কত আগের হবে সেই সঠিক তথ্য দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমনই একটি মসজিদের সন্ধান মিলেছে বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোরতা গ্রামের পূর্ব পাশে সাবেক ঘুন্নিপাড়া নামক স্থানে। প্রাচীন এই মসজিদটি এখন রূপান্তরিত হয়েছে মস্ত বিশাল এক বটগাছে। দূর থেকে মসজিদ না দেখা গেলাও বটগাছই এখন কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সেখানে নামাজ পড়ার জন্য কোনো অবস্থা বা পরিবেশ না থাকলেও বোরতা ও সিন্দুরাইল গ্রামের মুসল্লীদের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে ১টি ঈদগাহ মাঠ। প্রাচীন এই মসজিদটির অদূরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি কবর। যেগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ থেকে ১৩ ফুট। এটি দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা। ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে একসময় মাত্র ৭ থেকে ৮ জন মুসল্লী নামাজ পড়তে পারতেন বলে ধারণা করা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে কথা বললে জানা যায়, প্রায় ৫০/৫৫ বছর আগে এখানে ঝোপঝাড় ছিল। শুধু বড় বটগাছটিই দূর থেকে দেখা যেত। তাদের বাপদাদারা বলতেন এই জঙ্গল ছিলো না। আশপাশে আগে লোকজন বাস করতো আর এখন যে জঙ্গল তার ভেতরে একটি মসজিদ আছে।

Pop Ads

পরে এলাকাবাসী ঝোপঝাড় পরিষ্কার করলে দেখা মেলে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই মসজিদটির। মসজিদটির দেয়ালে ৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এবং ২ ইঞ্চি প্রস্থের এক ধরনের ছোট ছোট ইট গাঁথা আছে চুন ও সুড়কি দিয়ে। বটগাছটির শেকড়ের কবলে ছেয়ে গেছে পুরোটা মসজিদ। তিনটি মিনারের মধ্য দুটি ঠিক থাকলেও একটি নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। ভেতরে ঢুকলে দেখা মিলবে কিছু রঙ্গিন আল্পনা ও নকশার। পুরনো হওয়ায় এখানে নামাজ পড়ার কোনো পরিবেশ নেই।

তবে এটিকে কেন্দ্র করে ২৩ শতক জায়গার ওপর হয়েছে ঈদগাহ মাঠ। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দুটি নামাজে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লীরা ছুটে আসেন এই ঈদগাহ মাঠে। এর দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট এবং প্রস্থ ১২ ফুট। ইমাম দাঁড়ানোর জায়গাটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদটি। লোকমুখে শোনা যায়, মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকের শতাধিক গজ পর্যন্ত যেকোনো স্থানে খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে পুরনো মাটির তৈরী সেসময়কার পানি রাখার বড় পাত্র সহ নানান ধরনের সামগ্রী।

সিন্দুরাইল গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন,”এই মাঠ ও মসজিদের জায়গা একজন ব্যক্তির ক্রয় সম্পত্তি ছিলো। সেই জায়গায় তারা কাজ করতে গেলে বিভিন্ন অঘটন ঘটতে থাকে। তাই তারা জায়গাটি আল্লাহর ওয়াস্তে দান করে দিয়েছেন। বোরতা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তার হোসেন বলেন, “মসজিদের পাশেই বড় একটি পুকুরে অনেক মাছ দেখা গেলেও পানি সেচে ফেলার পর কোনো মাছ পাওয়া যায় না। বটগাছের ডাল কিংবা ইট পাথর কোনোকিছুই কেউ নিয়ে যেতে পারে না। সন্ধ্যার পর কেউ যায় না।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক বেলাল হোসেন জানান, “এই মসজিদটি কত সালে তৈরী করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারবেনা। সবাই শুধু তাদের বাপ দাদাদের কাছে থেকেই শুনেছে। মসজিদের সম্মানে প্রায় ১৫ বছর আগে এইখানে ঈদগাহ মাঠ করা হয়েছে। আমরা দুই গ্রামের মানুষ এখন সেখানে ঈদের নামাজ পড়ি”। ধানের জমিতে কিটনাশক ছেটানোর কাজে ব্যস্ত রায়হান আলী নামের আরেকজন ব্যক্তির সাথে কথা হয়।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সরকার যদি এই মসজিদটির দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার করে তাহলে ইতিহাস আরো সমৃদ্ধ হবে, সবাই এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে, পর্যটক এটি দেখার জন্য আসবে। এতে করে আমাদের কাহালু উপজেলার সুনাম আরো বৃদ্ধি পাবে”। বগুড়া শহর থেকে দেখতে আসা ইঞ্জিনিয়ার রসুল খন্দকার এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারিভাবে মসজিদটি সংস্কার করা দরকার।

এছাড়া মসজিদটি বিশাল পাথারের মধ্য হওয়ায় মসজিদ থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি পাকা করে দিলে পর্যটকরা যাতায়াত করার জন্য সুবিধা পাবে, ইতিহাসের অনেক কিছু জানতে পারবে”। এব্যাপারে কাহালু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক পিএম বেলাল হোসেন বলেন,”মসজিদটি অনেক আগেই আবিস্কৃত করেছে স্থানীয়রা কিন্তু এটি নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন ওঠার কারণে আগেকার ইউএনও মহোদয় থাকতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। আর আমার ইউনিয়ন পরিষদেরও তেমন কোন বাজেট না থাকায় সংস্কার করাও সম্ভব হচ্ছে না”।

এব্যাপারে কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন,”আমি যেহেতু উপজেলায় নতুন এসেছি আর আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম সেহেতু খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে”। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, অতিদ্রুত মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে নিয়ে সংস্কার করে তা পর্যটকদের জন্য তৈরী করা হোক। এতে করে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারবে অপরদিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই প্রাচীন নিদর্শনটি। পর্যটকদের বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে আর ফিরতে হবেনা।