বাংলাদেশে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম !

বাংলাদেশে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম ! প্রতিকী-ছবি

সুপ্রভাত বগুড়া (অর্থ ও বাণিজ্য): বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছেই। এটিকে নির্ভরযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে বুধবার স্বর্ণের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার দেশের বাজারে সোনার দাম পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলছে, নতুন দাম অনুযায়ী আজ থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ কিনতে ৭৪ হাজার ৬৫০ টাকা গুনতে হবে। ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেট — এই তিন মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চললেও করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিশ্ব জুড়ে এই ধাতু কেনার হার কিংবা চাহিদা কমেনি। মহামারিতে মানুষের আয় ও স্বাভাবিক বিনিয়োগ কমে গেলেও, এ সময়ে মূলত শেয়ারবাজার বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে স্বর্ণে বিনিয়োগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্বর্ণকে বলা হয় ‘সেফ হেভেন’, এর মানে হচ্ছে বড় ক্ষতির আশংকা ছাড়া বিনিয়োগ করা যায় যেখানে।

Pop Ads

স্বর্ণে বিনিয়োগ কি লাভজনক? :                                                                                      বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং সফল বিনিয়োগকারীদের কেউ হয়ত আদর্শ বিনিয়োগ বলতে প্রথমেই স্বর্ণের কথা বলবেন না। কিন্তু তারপরেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু মানুষ নিরাপদ ভেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বর্ণে বিনিয়োগ বেশ জনপ্রিয়, গয়না হিসেবে এবং স্বর্ণের বার—দুইভাবেই বাংলাদেশে এ বিনিয়োগ হয়।

তিনি বলেন, “এর বড় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তার কারণে মানুষের আস্থা অনেক কম। সে কারণে সাধারণ মানুষ স্বর্ণে বিনিয়োগ করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী অর্থাৎ স্বল্প আয়ের মানুষজনের কাছে স্বর্ণে বিয়োগের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তাতে আকাশ-পাতাল ফারাক হয় না। ফলে এটি ঝুঁকিমুক্ত।” বাংলাদেশে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ বার বাজারে স্বর্ণের দাম পরিবর্তন হয়েছে।

তার মধ্যে আটবার বেড়েছে, কমেছে ৬ বার, কিন্তু এই ওঠানামার মধ্যে দাম কখনোই অপ্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এছাড়া অল্প শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা মনে করেন পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্রের মত মুনাফার হারের দিকে নজর রাখার দরকার থাকে না স্বর্ণে বিনিয়োগের বেলায়। তার বাইরে প্রয়োজনে স্বর্ণের একটি ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে, সেটাও এ খাতে বিনিয়োগ জনপ্রিয় হবার আরেকটি কারণ।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, স্বর্ণের চাহিদা সবসময় থাকে। স্বর্ণে বিনিয়োগকে লাভজনক ও নিরাপদ বলে মনে করেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান। তিনি বলছিলেন এক্ষেত্রে স্বর্ণের গয়নার চেয়ে স্বর্ণের বার বা গোল্ডবারে বিনিয়োগ লাভজনক। “কারণ হচ্ছে স্বর্ণের গয়না বিক্রি করতে হলে ২০ শতাংশ মূল্য কেটে রাখা হয়, আর বদল বা পরিবর্তন করলে ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়।

কিন্তু গোল্ডবারে সেটা হবে না। অন্যদিকে, গোল্ডবার প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারের দর অনুযায়ী কেনাবেচা করা যায়।” সাধারণত গয়নার দোকানে গোল্ডবার কিনতে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৯জন বৈধ স্বর্ণ আমদানিকারক রয়েছেন, যাদের কাছ থেকে গোল্ডবার কেনা যায়।

স্বর্ণের দামে হেরফের: ২০২০ সালের ৬ই আগস্ট বাংলাদেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ দাম। সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৯৭১ সালে, সে বছর স্বর্ণের ভরি ছিল ১৬০ টাকা। সূত্র: বিবিসি বাংলা