বিএনপি-জামাত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না জনগণ : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামাত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না জনগণ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণ কখনই বিএনপি-জামায়াত জোটকে আর ক্ষমতায় আসতে এবং তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। তিনি বলেন, ‘বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারি, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারি এরা কোনদিন এদেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

বাংলাদেশের মানুষ তাদের কখনো মেনে নেবে না।’প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

Pop Ads

তাঁর সরকার যে দেশের উন্নয়নে যে কাজগুলো করেছে সেগুলো ঘরে ঘরে মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ, তারা (বিএনপি-জামাত) মানুষের কাছে বার বার মিথ্যা বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই সত্য করতে চায়।

কিন্তু, তাদের আমলে মানুষ কি পেয়েছে- খাবার জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেছে, শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি চেয়েছিল বলে রমজান মাসে ২৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া, ১৮ জন কৃষক সার চেয়েছিল বলে তাদের হত্যা করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এগুলোই রেকর্ড, তারা এগুলোই করে গেছে। আর আজকে সারও কারো কাছে চাইতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি ও স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি, এখন থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র ডায়বেটিক রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিনও প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তবে, মানুষ ভাল থাকলে বিএনপি-জামাতীদের মনে কষ্ট হয় বলে তাঁর মনে হয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মনে রাখতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনিই এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই, তাঁর বাংলাদেশে কোন মানুষ অন্ন কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না,  শিক্ষার আলো বঞ্চিত থাকবে না- প্রত্যেকটি মানুষের জীবন মান উন্নত হবে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ এবং তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন তাঁর বাংলাদেশ সে ভাবেই বিশ্ব দরবারে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আওয়ামী লীগ এবং এর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও এডভোকেট আফজাল হোসেন সভায় বক্তৃতা করেন।

আরো বক্তৃতা করেন কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম সভাটি সঞ্চালনা করেন।

বিএনপির অপপ্রচারের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। এতো মিথ্যা কথা তারা পায় কোথায় থেকে? আমরা নাকি দেশের কোনই উন্নয়ন করিনি, সবকিছু ফোকলা ও ধ্বংস করে দিয়েছি! আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্টোরেল করেছি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি।

একদিনে একশ’ সেতু, একশ সড়ক নির্মাণ কোন সরকার করতে পেরেছে? এসব কি উন্নয়ন না। চোখ থাকতেও কেউ অন্ধ হয়ে থাকলে তাদের কিছুই চোখে পড়ে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি। দেশের উন্নয়ন না হলে এতোবড় বাজেট কিভাবে দিলাম?

গত ১৪ বছরে শিক্ষার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি, ২ লাখ ৫৩ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছি। বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, আমরাই প্রথম দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং আরও চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রত্যেক বিভাগেই আমরা একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করবো। দেশের যদি উন্নতি না হয় তবে এসব আমরা করছি কিভাবে?

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারাদেশে ইন্টারনেট, ওয়াইফাই হয়েছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এখন দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। এ কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো মানুষের খাদ্যের কোন অভাব আমরা হতে দেইনি। এসব কি উন্নয়ন নয়?