বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আভাস, আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার !

বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আভাস, আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার !

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক বছর পার হলেও এখনো অনিশ্চয়তার মুখে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জ্বালানি ও খাদ্যের বাজার অস্থির। শুধু তাই নয়, অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারও। আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার, বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আভাস। গত এক বছর ধরেই দাপট দেখিয়ে আসছে মার্কিন ডলার। যে কারণে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। তবে ডলারের সেই আধিপত্য এবার শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। করোনা মহামারির ধকল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এ যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

Pop Ads

এক বছর ধরে এ সংঘাতে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই দেশের তিন লাখেরও বেশি সেনার মৃত্যু হয়েছে। বেসামরিক লোক হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামোর।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তার নজিরও বিশ্বে কমই আছে। ধনী দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা ওইসিডির তথ্যমতে, যুদ্ধে ২.৮ ট্রিলিয়ন তথা ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের ওপর। যুদ্ধ শুরুর পরপরই লাগামহীন হয়ে ওঠে মার্কিন ডলার। গত এক বছর ধরেই দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে আসছে এটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডলারের দর দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

ডলারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি, যা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম। খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির মূল্য হু হু করে বেড়ে গেছে। ফলে বেশ চাপে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। পাকিস্তান থেকে শুরু করে ঘানার মতো আমদানি নির্ভর ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য আরও জেঁকে বসেছে। ডলার সংকটে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে বহু দেশ।

তবে সম্প্রতি ডলারের আধিপত্য কমতে শুরু করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, গত এক বছর ধরে ডলার যে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে, তা শেষ হয়ে গেছে।প্রভাবশালী মুদ্রাটির পতন শুরু হয়েছে, যা কেবল শুরু হয়েছে; আগামী কয়েক বছর ধরে এ পতন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ডলারের আধিপত্য কমার কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার বৃদ্ধির সীমা শেষ হয়েছে। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুদ্রাগুলো শক্তিশালী হওয়ার পালা। কারণ ওইসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে।

মুদ্রাবাজার বিশেষজ্ঞ হেজ ফান্ড ‘কেটু অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে’র গবেষণা প্রধান জর্জ বুবুরাস বলেছেন, ডলারের উত্থানের দিন শেষ। সামনের দিনগুলোতে একটা দুর্বল ডলারই দেখা যাবে।’ ফলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।