ভুল পথে জীবন -এম রাসেল আহমেদ

ভুল পথে জীবন-এম রাসেল আহমেদ

এম রাসেল আহমেদ

সুপ্রভাত বগুড়া (শিক্ষা সাহিত্য): বিটিভির যুগে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতো “ যতই চাপাচাপি করো কোন লাভ নেই” আসলে তাদের বিজ্ঞাপনের বিষয় বাদে অন্য বিষয় বলতে চাইছি। “কোদাল বুকের দিকে টানে” কোদাল দিয়ে কাজ করতে গেলে নিজের দিকে টানতে হবে নইলে কোন কাজই হবেনা। আমাদের গ্রামে একটা আঞ্চলিক প্রবাদ আছে যতই ঢাউপাউ করোনা কেন কোন লাভ নেই। আসলে রিজিকের মালিক কে? তুমি! আসলে রিজিকের মালিক আল্লাহ! যার রিজিক আল্লাহ যেভাবে লিখে রাখছে সে সেটাই পাবে অতিরিক্ত চাপের ফলে নয়।

পাকা রাস্তায় এটেল মাটিতে ভড়া যেন মনে হবে এ যেন মেঠপথ কিন্তু নয়।মেঠ পথের পাশেই বিশাল বিশাল অট্টালিকা তুলছে মানুষ, যেন তারা কোন দিন মারা যাবেনা। মানুষের অনেক টাকা হয়েছে আজকাল কিন্তু সুখ বিলিন হয়ে গেছে। কোথাও শান্তির ন নাই। মানুষ সুখ বেঁচে অসুখ কিনতে ব্যস্ত। সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে এই অট্টলিকা বানিয়ে কি লাভ হবে? একটা । এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পড়ন্ত বিকেলে গ্রাম্য পথে হেটে এসে ক্লান্ত সেই সাথে দেখতে পায় সামনে বিশাল নদী । নদী পারাপারের জন্য একটি মাত্র নৌকা ঘাটে বাধা। কাছে এসে দেখে মাঝি অবেলায় ঘুমাচ্ছে। ব্যবসায়ী মাঝির সাথে কড়া গলায় বলতে লাগে- মাঝি আমায় নদী পার করে দাও।

Pop Ads

মাঝির দিক থেকে কোন সারা শব্দ নাই সে ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছেই। ব্যবসায়ী দেখলো মাঝি ঘুমাচ্ছে তাই আরো জোরে চেচিয়ে বলতে লাগে আমায় পার করে দাও কিন্তু মাঝি ঘুমে বিভোর, কে শোনে কার কথা! এবার ব্যবসায়ী মাঝিকে ধরে ঝাকিয়ে তুলে বলে আমায় নদী পার করে দাও মাঝি। মাঝি চোখ ঘষতে ঘষতে বলে আমি পারবনা। আপনি অন্য উপায়ে চলে যান, আমি আজ আর নৌকা চালবনা। ব্যবসায়ীতো অবাক! মাঝি ছাড়া এই এলাকায় নদী পার করার কেউ নাই, তাই তাকে ধীরে সুস্থে বলে মাঝি ভাই আমায় দয়া করে আপনার নৌকায় নদী পার করে দিন।

মাঝি ব্যবসায়ীকে বলছে আমি আজ আর নৌকা চালাবনা, আজ আমি আরাম করব। ব্যবসায়ী আরো অনুনয় বিনয় করে বলছে মাঝি ভাই দয়া করে আমায় পার করে দিন আমার কাজের খুব তারা আছে, আমি দ্রæত না পৌছালে আমার অনেক ব্যবসায় ক্ষতি হবে। আর্থিক ভাবে লোকসান গুনতে হবে, আমাকে নদী পার করে দিন, আমি ভাড়া বাড়িযে দিব। মাঝি ব্যবসায়ীকে বলছে, আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমি আজ আর নৌকা চালাবনা, কারন আজ আমার যা ইনকাম করার কথা ছিল তা অনেক আগেই করেছি তাই এখন আমি আরাম করছি।

মাঝির কথায় ব্যবসায়ী অবাক! এ মাঝি বলেকি? আজ যা ইনকাম করার কথা তা করেছি! মাঝিকে বলে ভাই আপনার আজ যা ইনকাম করার তা করেছেন বলেই যে আর ইনকাম করবেনা না তা কেন? মাঝি বলে আমি এতো ইনকাম দিয়ে কি করবো? ব্যবসায়ীতো আরোও অবাক! এ মাঝি বলেকি? আমি সারাক্ষন ইনকামের পেছনে ছুটছি তবুও ইনকামের শেষ কোথায় দেখতে পাচ্ছিনা এর ইনকাম দিয়ে কি করবে নিজেই জানেনা।শান্ত হয়ে বলে, মাঝি ইনকাম করে তুমি আরো একটা নৌকা কিনতে পারবে। মাঝি বলে আমি আরো একটা নৌকা দিয়ে কি করবো? আমি একা মানুষ এটাই যথেষ্ট আমি আরেকটা নৌকা দিয়ে কি করবো?

ব্যবসায়ী মাঝির কথায় অবাক না হয়ে পারছেনা, এবার বলছে আরেকটা নৌকা ভাড়া দিবে আর একটা নিজে চালাবে। তার তার থেকে আরেকটা নৌকা হবে ,তারপর তার থেকে আরেকটা হবে এভাবে অনেক নৌকার মালিক হবে, তার পর সেই থেকে অনেক বড়লোক হয়ে যাবে একদিন। মাঝি ব্যবসায়ীর কথার উত্তরে বলেন বড়লোক হয়ে কি করবো? ব্যবসায়ী বলেন বড়লোক হয়ে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করবে। মাঝি এক কথায় উত্তর দেয়, এখন আমি কি করছি? আমিতো পায়ের উপর পা তুলে আরাম ই করছি।

মোট কথায় আসি মাঝি কিন্তু ভবিষ্যতের আরামের চাইতে বর্তমানের আরামের মুল্য দিচ্ছে। আমরা যারা বড়লোক হতে চাচ্ছি পায়ের উপর পা তুলে আরাম করতে তারা কিন্তু আদোও আরাম করতে পারেনা। বর্তমান চিন্তা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, হটাৎ করেই মানুষ ,মারা যাচ্ছে। আগের মানুষ খেতে পারতোনা কিন্তু অনেক দিন ধরে বাঁচতো, কিন্তু এখন মানুষ খেযেই মরছে। ভবিষ্যতের চিন্তায় বর্তমানকে বিক্রি করে কোন কাজের কাজ হয়না।

ঐ যে মানুষ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে , মাটি ফেলে রাস্তা নষ্ট করে করছে, রাস্তার যায়গা দখল করছে ড্রেন বন্ধ করছে তারাও একদিন বুঝবে মানুষের অধিকার নষ্ট করার ফল এই রাস্তা তার একার নয় এ সম্পদও কারো চিরস্থায়ী নয়। একদিন মাটির কবরেই তাকে থাকতে হবে। আজ যা নিজের নিজের ভাবা হয় একদিন তা অন্যের। নিজের দাদা ও একদিন বলতো এই সম্পদ আমার ,বাবাও বলতো কিন্তু তারা কেউ এই সম্পদ নিয়ে যেতে পারেনি কবরে। কেউ মারা গেলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসতো কিন্তু এখন নিজের পোষা প্রাণি মারা গেলে যে কষ্ট কয় সে কষ্ট হয়না নিজের কেউ মারা গেলে।

মানুষ একবার মারা গেলে যে আর ফেরৎ আসেনা তারা কিন্তু এটার তোয়াক্কা করছেনা। মানুষ পশুর চাইতেও কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমি হবিগঞ্জ গেছি কিছুদিন আগে, গিয়ে দেখি এক মুরব্বির ১০ টা বাচ্চা , ৯ জন ছেলে এক জন মেয়ে। মুরব্বি এখনো জীবিত লাঠি ছাড়া হাটে। ছেলেরা কেউ বিল্ডার্স, মেজর, ফার্মাসিস্ট, প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার সহ কিছু না কিছু করছে। ছেলে মেয়েদের একেক জনের ২-৩ টা করে ছেলে মেয়ে কিন্তু যা দেখলাম সবাই একত্রে যৌথভাবে বাস করছে। কে কোথায় ঘুমায় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাসের অযোগ্য।

আমি তাদের বাড়িতে অতিথী হিসাবে আছি, গোসলের পর লুঙ্গী শুকাতে দিয়েছি কিন্তু তুলতে গিয়ে দেখি আমার লুঙ্গী নাই, কাউকে বলিনি লুঙ্গী কোথায় জানি আছে কোথাও, পরে দেখি অন্য একজন পরে আছে আমার লুঙ্গী। বলতে পারিনি তাদের যে আমার লুঙ্গী এটা পরে রাতে দেখলাম কে কোথায় ঘুমাচ্ছে বলা মুসকিল। আমি তাদের একত্রে বসবাস আজীবন মনে রাখব। তারা চাইলে আলাদা হয়ে নিজেদের সংসার গোছাতে পাতো কিন্তু তা করছেনা। করন, তাদের কাছে বর্তনানের সুখ দামী। আলাদা হয়ে সংসার করলে তাদের ছেলে মেয়ে তাদের বৃদ্ধ বয়সে আলাদা করে দিবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

আমি যাদের রোগ সাড়াই তাদের এই ধরনের কেস দেখলে বলি আপনি আপনার যৌবন কালে ঠিক এই কজটিই করেছেন যা আজ আপনার উপর পতিত হলো এই শেষ বয়সে। ছেলে মেয়ে দেখতে পারেনা, কথা শোনেনা ,উশৃংখ্যল এসব তাদের দোষ নয় বরং আপনারই দোষ এটা সীকার করুন। আমি এই একত্রে বিশ্বাস করি আজীবন , নিজে বাবা মায়ের ৪ নাম্বার সন্তান হয়েও আজ বর্ণনার সব কিছু ফলো করি। আমার ভাইয়েরা আলাদা হয়ে গেল কিছুদিন আগে, নতুন ফ্লাট বাসা নিজের মতো সংসার ,উন্নয়নের বন্যা কিন্তু বাবা মায়ের খবর রাখেনা তাতে লাভ কি? যে ভাবি সারাদিন অসুস্থতার বাহানা করতো নতুন বাড়িতে আজ সে রোগ মুক্ত।

সমস্থ কাজ পরে রইলেও আজ আর কোন কাজ পরে থাকেনা । তাদের একটা তিন বছরের ছেলে আছে ,তার জন্য নাকি তাদের অনেক ভাবনা । সেই ছেলে কি বড় হযে এই পিতা মাতার কথা মনে রাখবে? অবশ্যই রাখবেনা কারন প্রকৃতির নিয়ম ,প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দেয়না। তারাও তো পিতা মাতা ,তাদের জীবন ধারা বহমান , বৃদ্ধ হতেই হবে যদি আল্লাহ হায়াত দিয়ে থাকে তবে আমিও দেখতে চাই তাদের এই পরিনতি,তাদেও অনেক আয়ু দিন আল্লাহ। আমার বাবা পুত্র শোকে বার বার অজ্ঞান হয়েছে, সংসার বিমুখ হয়েছে আজ, আমি সে দিনের অপেক্ষায় যেদিন তারা বাবার বয়সী হবে।

দুনিয়া শান্তির যায়গা নয় তবে কিছু শান্তির ছিটে ফোটা যদি থেকে থাকে তবে আছে বাবা মাযের কাছে, যাদের বাবা মা নাই তারাই শুধু বুঝে জান্নাত তাদের থেকে কতো দুরে অবস্থান করছে। যা আগে বলেছিলাম অট্টলিকার কথা, আসলে এই অট্টলিকা তৈরী করছে মানুষ তারা কি সেখানে আরাম করে থাকতে পারবে? তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি এই কষ্টের মুল্য দিবে? কিসে তাদের এই লোভের দিকে ঝুকে দিল? আজ বাংলার পথে ঘাটে জমিতে মাটি কাটায় ব্যস্ত সবাই বাড়ি করবে বলে। বাড়ির দরকার আছে তবে এই বাড়ি নয় যে বাড়ি মানুষের শান্তি নষ্ট করে। প্রতিটা মানুষের বাড়ি হোক নিরাপদ বাসস্থান।

আমার পাশের এক ব্যক্তি শহরে একজনের দেওলিয়া হয়ে যাওয়া বাড়ি কিনে নেয় নিজের সমস্থ জমি বিক্রি করে কিন্তু দেনার দায়ে তারা আজ বাড়ি ছাড়া, জমি ছাড়া। তাই যেটা বারবার বলতে চাই কোদাল নিজের দিকেই টানে, যতই চাপাচাকি করা হোকনা কেন কোন লাভ নেই। এক কানাডিয়ান সিগারেট কোম্পানির মালিক ৬১ বছর বয়সে কোটি ডলার রেখে এক জঙ্গলে গিয়ে হার্টএটাকে মারা যান কিন্তু অপর এক ব্যক্তি ৯১ বছরে মারা যান , মৃত্যুর পর তার কাছে এক ডলার পরিমাণ সম্পদ ছিল না।

সফল ব্যক্তি কাকে বলবেন? সম্পদের পিছনে জীবনে আসল সময়টুকু শেষ করে কি লাভ সেটা কাকে বুঝাব?
কাউকে যদি বলা হয় জীবনের প্রতিটি দিন তোমাকে এক লক্ষ্য টাকা দেওয়া হবে তুমি কি করবে? এই টাকা যেভাবে খুশি খরচ করতে পার, চাইলে যাকে খুশি দান করতে পার। প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন খরচ করতে না পারলে কেটে নেওয়া হবে আবার এক লক্ষ টাকা যোগ হবে ক্যালেন্ডারের তারিখ বদল হতেই।

এই টাকা তুমি কিভাবে খরচ করবে? এই টাকা খরচ করতে এতো বেশী ব্যস্ত হবে যা প্রামাণের অবকাশ রাখেনা কিন্তু জীবনে এই অমুল্য সময় পার করছি তার হিসাব রাখিনা। আমরা যে টাকা রোজগার করি তাকি খরচ করে যেতে পারব? যদি তা না পারি তবে কেন এই টাকার জন্য এতো কিছু? আমাদের আবার নতুন করে ভাবা উচিৎ।

লেখক/সাহিত্যিক :                                                                                                        এম রাসেল আহমেদ

এম রাসেল আহমেদ