সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য পদসোপান এর প্রস্তাবনা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে দু’টি কথা

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য পদসোপান এর প্রস্তাবনা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে দু'টি কথা

মোঃআব্দুল মালেক রতন

সিনিয়র শিক্ষক(জীববিজ্ঞান) বগুড়া জিলা স্কুল,বগুড়া

মুজিব শতবর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা, প্রথমেই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাংগালী স্বাধাীন বাংলাদেশের স্থপতি সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ধারণকারী বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন ভিশন-২০২১ ; বিশ্বব্যাংকের মানদন্ডে ২০২১ সালের পূর্বেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশিষ্ট সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা করা হয় ভিশন-২০৪১।

Pop Ads

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও শিক্ষিত দক্ষ জনগোষ্ঠি। দক্ষ জনবল তৈরির গুরু দায়িত্ব ন্যাস্ত এদেশের মেধাবী শিক্ষক সমাজের উপর। তাই মানসম্মত শিক্ষা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশ গড়ার কারিগর খ্যাত শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রয়োজন। মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর হলো শিক্ষা ব্যবস্থার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়নে মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

এজন্য জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০এ মাধ্যমিক শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ সেটাই বলা আছে। এর মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে উল্লিখিত শিক্ষানীতির বিশেষ সুপারিশগুলো হলো-
১. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করতে হবে। কাজেই এ থেকে বলা যায়-মাধ্যমিক শিক্ষাকে যুগপোযোগী করা ও সুষ্টু ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন অতীব জরুরী।
২. শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মেধা,দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হবে। কাজেই এ থেকে বলা যায়-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার জন্য এন্ট্রি পদ ৯ম গ্রেডসহ একটি পূর্নণাঙ্গ পদ সোপান বাস্তবায়ণ অতীব জরুরী।
৩. শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বকে জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে কর্মকর্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। জেলা শিক্ষা অফিসারের পদটিকে জেলার অন্যন্য কর্মকর্তাদের সাথে সুসামঞ্জস্য করতে হবে।এ থেকে বলা যায়-জেলা শিক্ষা অফিসার পদটিকে ৬ষ্ঠগ্রেড থেকে ৫ম গ্রেডে(কারণ অধিকাংশ জেলা কর্মকর্তার পদটি ৫ম গ্রেডের) থাকা যুক্তিযুক্ত। একই সাথে সমমানের প্রধান শিক্ষক /শিক্ষিকা পদটিও ৫ম গ্রেডে উন্নীত করা আবশ্যক।একই সাথে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা পদকেও ৯মগ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করা জরুরী।
৪. মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের কাঙ্খিত মানের শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি বাড়ানোর নিমিত্তে প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের অফিস স্থাপন করা হবে।একই সাথে একাডেমিক তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণ জোরদারের জন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যানুপাতে বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি করতে হবে। এ থেকে বলা যায়-সংশিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগদানের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা জরুরী; যার ফলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের এসকল পদে পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তবে পরিতাপের বিষয়, এখনও মাধ্যমিক শিক্ষকদের সেই সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয় নাই।বাংলাদেশের ঊষালগ্ন থেকেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিভিন্নভাবে বঞ্চনার স্বীকার হয়ে আসছে। একই পদে দীর্ঘকাল চাকুরী,পদোন্নতির অনিশ্চয়তা, কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সুবিধা না পাওয়া ইত্যাদি কারণে শিক্ষকগণ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত।

মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল পরিবার ভিত্তিক। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন মাদ্রাসা ও টোল গড়ে ওঠে।ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বৃটিশরাই ভারতীয়দের শিক্ষার বিস্তার, মানোন্নয়ন ও বিকাশের জন্য ১৮২৪ সালে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থা “General Commitee of Public Instruction(GCPI)” প্রতিষ্ঠা করেন।সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় Directorate of Public Instruction (DPI)। দীর্ঘদিন (১৯৫৪-১৯৮১) প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১মার্চ,১৯৮১ তৎকালীন Directorate of Public Instruction ভেঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা,কারিগরি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে Directorate of Secondary & Higher Education(DSHE) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা নিয়ে Directorate of Primary &Mass Education গঠিত হয়। অত:পর জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে ২০১৫ সালে DHSE থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আলাদা করে একটি পৃথক অধিদপ্তর “Directorate of Madrasha Education” গঠন করা হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ Directorate of Secondary & Higher Education(DSHE) ভেঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য Directorate of Secondary Education এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য Directorate of Higher Education & Research গঠনের কথা বলা আছে।

২০১৮ সালের ব্যানবেইজ তথ্যানুসারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন মোট ২৪৩৩৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৮৩৯ টি বিদ্যালয় যা মাধ্যমিক শাখার অধীনে এবং বাকি ৪৪৯৫টি কলেজ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যা কলেজ শাখার অধীনে।অর্থাৎ মাধ্যমিক শাখার অধীনে ৮২% এবং কলেজ ও উচ্চ শিক্ষার অধীনে মাত্র ১৮% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।অথচ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ৩৪ টি পদের মধ্যে মাত্র ৩টি পদ মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য এবং বাকি ৩১টি পদ কলেজ শিক্ষকদের জন্য।অর্থাৎ এক্ষেত্রে মাত্র ১১%পদ মাধ্যমিক শিক্ষকদের এবং ৮৯% পদ কলেজ শিক্ষকদের।

কাজেই অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা থেকেই মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের কর্মকর্তা/ শিক্ষকগণ বিশাল বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন; অধিকন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যে সকল প্রকল্প চালু আছে সে গুলোতেও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক/কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ রাখা হয় নাই।ফলে মাধ্যমিক শিক্ষায় বাস্তবজ্ঞান সমৃদ্ধ প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞ জনবল অধিদপ্তরে বা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে না থাকার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রাপ্যতা এবং সুষ্ঠু তদারকী ও তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; যার কারণে সার্বিকভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করা হয়। তাই মাধ্যমিক শিক্ষার মত একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ সঠিকভাবে সম্পাদন ও দেখ-ভালের জন্য এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকে যুগোপোযোগী ও গতিশীলতার জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ থাকা আবশ্যক। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে ” মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর “নামে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন ছাড়া সেই অভিষ্ট লক্ষ অর্জন সম্ভব নয়।

BCS(General Education) Composition & Cadre Rules1980 প্রনয়নের মাধ্যমে ১ জানুয়ারি, ১৯৮০ সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার গঠিত হয় যার সুফল সরকারি কলেজের শিক্ষকগণ ১৯৮৩ থেকে শুরু করে। School & Inspection Branch এর জন্য BCS Recruitrment Rules 1981তে ১৯৮১ সালে বিদ্যালয় পরিদর্শক, প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা,জেলা শিক্ষা অফিসার,সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা,সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার পদগুলোকে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কলেজে শিক্ষকদের জন্য গ্রেড-৯ থেকে গ্রেড-৩ পর্যন্ত ৫টি পদ সোপান তৈরি হলেও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মাত্র দুটি পদ সোপান -গ্রেড-৯ ও গ্রেড-৬ তৈরি করা হয় ;তাও আবার সীমিত সংখ্যক,কলেজ শিক্ষকদের মত ব্যপকতায় নয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে ১৯৮০ বিধিতে কলেজ শিক্ষকদের জন্য আর ৫ম গ্রেডের আর একটি পদ ” উপ-পরিচালক’ সন্নিবেশিত করা হয়। জানা গেছে বর্তমানে সিনিয়র প্রফেসর পদ সৃষ্টিসহ একটি পুর্ণাঙ্গ পদ সোপান বাস্তবায়নেরকাজ চলছে; অথচ মাধ্যমিক শিক্ষকগণ বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে।কলেজ শিক্ষকদের জন্য বিদ্যমান পদ সোপান-
১.প্রভাষক( ৯ম গ্রেড)
২.সহকারী অধ্যাপক(৬ষ্ঠগ্রেড)
৩.সহযোগীঅধ্যাপক(৫মগ্রেড)
৪.অধ্যাপক( ৪র্থ গ্রেড)
৫.সিনিয়র অধ্যপক(৩য় গ্রেড)-প্রস্তাবিত
অন্যদিকে , মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য রয়েছে কেবলমাত্র দুটি স্তর। যথা-
১.সহকারি প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার(৯ম গ্রেড)
২.প্রধান শিক্ষক/জেলা শিক্ষাঅফিসার/ বিদ্যালয় পরিদর্শক(৬ষ্ঠ গ্রেড)

সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পদ সোপান বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। একই সাথে School & Inspection branch এর নাম পরিবর্তন করে Secondary Education(মাধ্যমিক শিক্ষা) এবং BCS( General Education: School & Inspection branch) কে পৃথক করে BCS ( Secondary Education) নামে একটি নতুন ক্যাডার সার্ভিস গঠন অতীব জরুরী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে ২মে, ১৯৭৫ সহকারী শিক্ষক/শিক্ষকা পদটিকে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা দান করেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫এ জাতির জনকের নৃশংস হত্যাকান্ড এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও অস্থিরতার কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নাই। ঐ সময়ের সমমান পদ ও পারস্পরিক বদলী যোগ্য সকল পদই (থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার/পিটিআই ইনস্ট্রাকটর ইত্যাদি) প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হলেও মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পদটি ১০ গ্রেডের নন-গেজেটেড তৃতীয় শ্রেণির পদ হিসাবে রয়ে যায়।

অবশেষে ১৫মে, ২০১২ জাতির জনকের কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঘোষণার মাধ্যমে পিতার দেয়া সেই দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা (বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে) ফিরিয়ে দেন। পরবর্তিতে ৩ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে ৯ম গ্রেড (নন- ক্যাডার)এর সিনিয়র শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয় যা কর্মচারি নিয়োগ বিধিমালা-২০১৮তে সন্নিবেশন করা হয়। উক্ত পদে সহকারী শিক্ষকের মোট পদের ৫০% হিসাবে ৫২৪২জন সিনিয়র শিক্ষকের পদায়নের কাজ কিছুদিন পূর্বে সম্পন্ন হয় । উল্লেখ্য ,৯ম গ্রেড (ক্যাডার)এর সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা,সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার পদগুলো পূর্ব থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। এর পরবর্তী ৬ষ্ঠ গ্রেডের পদোন্নতিযোগ্য পদ হলো- প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা ও জেলা শিক্ষা অফিসার। তারপর মাধ্যমিক শিক্ষকদের আর কোনো পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। অন্যদিকে সিনিয়র শিক্ষক থেকে পরবর্তি পদোন্নতির অবস্থা কেমন হবে তার সুনির্দিষ্ট বিধি বিধান এখনও তৈরি হয় নাই। এমতাবস্থায় সম্ভাব্য সিনিয়র শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ পদোন্নতিও অনিশ্চিত।

এছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের পদটি ৯ম গ্রেড ক্যাডারভুক্ত,আবার সিনিয়ির শিক্ষকের পদটিও ৯ম গ্রেড ,ননক্যাডার। ফলে সিনিয়র শিক্ষকগণ পদোন্নতি পেয়ে ঐ পদে পদায়ন লাভ করলে মর্যাদা ও আর্থিক সুযোগ কোনোটিই বৃদ্ধি হবে না: বরঞ্চ পূর্বের নিয়োগ বিধি অনুসারে সুযোগ সংকোচিত হবে অথাৎ সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের জন্য যেখানে নুন্যতম চাকুরী সীমা ১০ বছর ছিল,,সেখানে সিনিয়র শিক্ষক হয়ে ঐ পদে যেতে আরও বেশি সময় প্রয়োজন ।

এমন পরিস্থিতিতে সিনিয়র শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদ গুলোকে একীভূত করে বিসিএস(সাধারণ শিক্ষা: স্কুল ও পরিদর্শন শাখা) করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সামাজিক মর্যাদা ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে ।এতে রাষ্ট্রের আর্থিক ব্যয়ও বৃদ্ধি হবে না।পদোন্নতি প্রাপ্য পদের সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সিংহভাগই পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে এবং আবারও পদোন্নতির বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হবে। তাই পদোন্নতির প্রক্রিয়া নিয়মিতকরণের জন্য সরকরি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়েও কলেজের মত কয়েকটির পদস্তর/সোপান তৈরি হওয়া উচিত।
যেমন- ১.সহকারী শিক্ষক (Assistant Teacher)
২.সিনিয়র শিক্ষক(Senior Teacher)
৩.নির্বাহী শিক্ষক(Executive Teacher)
৪. সিনিয়র নিবার্হী শিক্ষক(Senior Executive Teacher)

এই লক্ষ্যেই বিদ্যমান জনবল(সংখ্যা) ঠিক রেখে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি পদ সোপান উপাস্থাপন করা হলো-
মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও বিসিএস(মাধ্যমিক শিক্ষা) ক্যাডার গঠনের লক্ষ্যে

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর সকল দিক বিবেচনাপূর্বক বর্তমান সরকারের দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার গৃহিত পরিকল্পনা ‘ভিশন -২০৪১’ বাস্তবায়নে একটি দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ‘ নামে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন জরুরী। সেজন্য সর্বাগ্রে দক্ষ জনবল কাঠামো তৈরি ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ পদ সোপান বাস্তবায়নপূর্বক বিসিএস ( মাধ্যমিক শিক্ষা) ক্যাডার সার্ভিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন অতীব প্রয়োজন।

তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় সুদক্ষ উন্নত দেশ গড়ার আত্মপ্রত্যয়ী বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা- সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পদ সোপান বাস্তবায়নপূর্বক শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমাজ বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত ভিশন-২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।
জয় বঙ্গবন্ধু।

জয় হউক সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমাজের।
সকলকে ধন্যবাদ।


মোঃআব্দুল মালেক রতন
সিনিয়র শিক্ষক(জীববিজ্ঞান)
বগুড়া জিলা স্কুল,বগুড়া।
Phone: ০১৭১৮-২২০৫২৫
Email: [email protected]