যাকাত আদায় না করার পরিণতি

যাকাত আদায় না করার পরিণতি। প্রতিকী-ছবি
আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): মানবজাতির হেদায়েতের আলোকবর্তিকা আলকুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ওয়া আনফিকূ মিম্মা রাযাক্বনাকুম……অর্থাৎ ‘মৃত্যুর লক্ষণাদি সামনে আসার আগেই স্বাস্থ্য ও শক্তি অটুট থাকা অবস্থায় তোমাদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আখেরাতের পাথেয় সঙ্গে নাও। নতুবা মৃত্যুর পর এই ধন-সম্পদ তোমাদের কোন কাজে আসবে না’। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত,এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল,কোন সদকায় সর্বাধিক সাওয়াব পাওয়া যায়?

তিনি বললেন,যে সদকা সুস্থ অবস্থায় করা হয়। (বুখারী) আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “যারা স্মর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট পাশর্^ ও পৃষ্ঠদেশকে দাগ দেয়া হবে। (সে দিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং এখন তোমরা অর্জিত বস্তুর স্বাদ আস্বাদন কর। (সূরাঃ তাওবা,আয়াতঃ ৩৪-৩৫)

Pop Ads

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা যাকে মাল দান করেছেন,আর যে তার যাকাত আদায় করবে না কিয়ামতের দিন তার মালকে তার জন্য মাথায় টাক পড়া সাপের রূপ দেয়া হবে যার চক্ষুর উপর কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ প্রচন্ড বিষাক্ত হবে) ঐ সাপকে তার গলায় বেড়ীস্বরূপ করে দেয়া হবে। সর্বদাই সেটা তার মুখের দিকে দংশন করতে থাকবে। (অথবা সেটা তার দুই গালে দংশন করতে থাকবে) আর বলতে থাকবে,আমি তোমার মাল! আমি তোমার সঞ্চয় করে রাখা সম্পদ।

এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-(এ কথার সমর্থনে এই আয়াত) পাঠ করলেন,যারা কৃপণতা করে থাকে,আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যে মাল দান করেছেন তা নিয়ে তারা যেন মনে না করে যে এটা তাদের জন্য উত্তম বরং এটা তাদের জন্য মন্দ। অতি শীঘ্র কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ীস্বরূপ করা হবে,যা নিয়ে তারা কৃপণতা করছে। (বুখারী,হাদীস নং ১৩১৫) মনে রাখতে হবে যাকাত ফরয হওয়া সত্বেও যাকাত না দিলে তার মাল হতে বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়। ফলে সম্পদ থাকলেও তাতে শান্তি থাকে না এবং পরবর্তীরাও তার মাল হতে উপকৃত হতে পারে না।

যাকাত যাদের উপর ফরযঃ যে ব্যক্তি সাড়ে ৭ তোলা-ভরি সোনা অথবা সাড়ে ৫২তোলা রূপা বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার টাকার মালিক হয় এবং এ পরিমাণ মাল এক বছর স্থায়ী থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। যদিও তা বছরের মাঝে কমে যায় আবার বছর শেষে পূর্ণ হয়ে যায়। আর যদি কারো নিকট কিছু সোনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রূপা বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে,তাহলে এ ক্ষেত্রে সোনার সাড়ে ৭ তোলা বা রূপার সাড়ে ৫২ তোলা দেখা হবে না বরং সোনা,রূপা এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার যে কোনো একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়,তাহলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে।

যাকাত যাদেরকে দেয়া যাবে নাঃ নিজের মা-বাবা,দাদা-দাদী,পরদাদা-পরদাদী,নানা-নানী,পরনানা-পরনানী,ইত্যাদি উপরের সিঁড়ি। যাকাতদাতার ছেলে-মেয়ে,নাতি-নাতনি,পোতা-পৌত্রী প্রমুখ নিচের সিঁড়ি। যাকাতদাতার স্বামী বা স্ত্রী। অমুসলিম ও ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যায় না। মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, ইয়াতিমখানা, স্কুল,সড়ক,পুল ইত্যাদি নিমার্ণকাজে এবং মৃতব্যক্তি দাফন কাফনের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাকাত যাদেরকে দেয়া যায়ঃ ফকীর,মিসকিন,ঋণগ্রস্ত,মুজাহিদ,মুসাফির এবং নিজ ভাই-বোন,ভাতিজা-ভাতিজী, ভগ্নিপতি,ভাগনা-ভাগনী,চাচা-চাচী,খালা-খালু,ফুপা-ফুফী,মামা-মামী,শ্বাশুড়ী,জামাই,সৎবাপ ও সৎমা এবং তাদের সন্তানগণকে। এমনিভাবে ছাত্র শিক্ষককে এবং নিজের কর্মচারীকে যাকাত দেয়া যাবে। তবে তা বেতন বাবদ না হতে হবে।

যাকাত যাদেরকে দেয়া উত্তমঃ ইলমে দ্বীনের ছাত্র ও শিক্ষক যদি যাকাতের হকদার হয় তাহলে এমন ব্যক্তিদের যাকাত দেয়া সবচেয়ে উত্তম। কেননা,এক্ষেত্রে দুটি সাওয়াব রয়েছে (১) গরীবকে সাহায্য করা। (২) দ্বীনি কাজে চলমান থাকার ব্যাপারে সহযোগিতা করা। এরপর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের এরপর বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা যাকাতের হকদার অতঃপর অন্যান্য যাকাতের হকদারকে দেয়া উত্তম।

যাকাত দেয়ার সুন্নাত তরীকাঃ যেসব অর্থ-সম্পদে যাকাত আসে সেসব অর্থ-সম্পদের ৪০ভাগের ১ভাগ অথবা মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোন আসবাব পত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যাবে। বৎসরান্তে যাকাত ফরয হওয়ার সাথে সাথে যাকাতের নিয়তে হকদারের নিকট পৌছিয়ে দেয়া জরুরী এবং ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে দেয়া মুস্তাহাব।

বর্তমানে আমাদের দেশে যাকাতদাতাগণ নিজ গদিতে বসে থাকেন আর গরীব মিসকীনরা দিনের পর দিন লাইনে বা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে-এমনটা উচিত নয়।