যারা পরীমনির কাছে নিয়মিত যেতেন, কোথায় তারা ?

যারা পরীমনির কাছে নিয়মিত যেতেন, কোথায় তারা ?

তিনি ছিলেন সাধারণ পরিবারের মেয়ে। শামসুন্নাহার স্মৃতি থেকে হয়েছেন পরীমনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উঠেছে তার নাম। ফিল্ম ক্যারিয়ার খুব বেশি লম্বা না হলেও অল্প সময়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। পরীমনিকে আটকের পর সরব নেটদুনিয়া। অনেকেই বলছেন, পরীমনির বাসায় যারা নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন। তারা কোথায়, তাদের ধরা হচ্ছে না কেন? গ্রাম থেকে আসা স্মৃতিকে যারা ‘পরীমনি’ বানিয়েছেন, নেপথ্যের সেই কারিগরদের মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান নেটিজেনদের।

যারা পরীমনির কাছে নিয়মিত যেতেন, কোথায় তারা
যারা পরীমনির কাছে নিয়মিত যেতেন, কোথায় তারা

তাদের মত, মদ রাখা বা মদপানে যদি পরীমনি দোষী হয়, তাহলে তার সঙ্গে যারা মদপান করেছে, তারাও তো সমান অপরাধী। তাহলে শুধু পরীমনি শাস্তি পাবে কেন? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।সিনেমায় পরীমনির শুরুটাই ছিল ব্যতিক্রম। অভিষেকের আগেই ২৩টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন! যা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নায়িকাদের ক্ষেত্রে বিরল ঘটনা। যদিও সব সিনেমা আলোর মুখ দেখেনি। পরী অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালে।

Pop Ads

তারপরের ঘটনাটা অনেকেরই জানা। বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা পরীমনি পর্দায় সফলতা পাননি। তবে নিজেকে ভেঙেছেন কয়েকটি সিনেমায়। সেগুলোতে অভিনয় করেই নিজের ক্যারিয়ার অন্য উচ্চতায় নিয়েছেন। তবে খ্যাতি থাকলে, তার বিড়ম্বনা পোহাতেই হবে। পরীর বেলায়ও তাই ঘটেছে।  বাবা-মাকে হারিয়ে নানা-নানির কাছে বড় হয়েছেন পরীমনি। নানি মারা যাওয়ার পর নানাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে থাকেন এ অভিনেত্রী। এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়েই বেড়ে উঠেছেন।

জীবনের অনেক সিদ্ধান্ত ভুল নিয়েছেন- যেটা উপলব্ধি করতে পারছেন এই দুঃসময়ে। পরীমনির সেই হাসিমাখা মুখ আজ বিমর্ষ। বাসা থেকে র‌্যাব সদরদপ্তর, সেখান থেকে বনানী থানা, থানা থেকে আদালত- সব জায়গায় পরীর অসহায় চোখ দুটি কাকে যেন খুঁজছিল। হয়তো কোনো ভরসার হাত অথবা কাছের মানুষকে। যাকে এক পলক দেখলে একটু স্বস্তি পেতেন পরীমনি। পরীমনির এ ঘটনায় মুখ খুলেছেন অনেকে। ঘটনার আলোচনা-সমালোচনা আর গঠনমূলক পর্যালোচনাও চলছে।

আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- পরীর পাশের লোকেরা কোথায়? যদিও পরীর বাসায় যারা যাওয়া আসা করতেন তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে। সাংবাদিক নাজনীন মুন্নী এক কলামে লিখেছেন, ‘এই দেশের অভিজাত এলাকার কোন বাসায় মদ বা অ্যালকোহল পাওয়া যাবে না? কেবল অভিজাত নয়, মধ্যবিত্তরাও এই আয়োজনে ঢুকে গেছেন। এ দেশে মদ রাখার লাইসেন্স দেওয়া হয়।

এসব নতুন করে অপরাধ হিসেবে ভাবা হচ্ছে কিনা সেটাও সবাইকে জানানো দরকার। মদ খাওয়াই যদি অপরাধ হয় তবে তার সঙ্গে বসে মদ খাওয়া মানুষগুলো কেন আড়ালে থাকবেন? তাদের চেহারাগুলোও আমরা দেখতে চাই। নাকি পরীমনি মদ খেলেই কেবল দোষের? অন্য যে কেউ খেতে পারবেন!’

আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনও গর্জন তুলেছেন পরীমনি ইস্যুতে। নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনোটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিংয়ে চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনো উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউয়ে দেরি হওয়াও তো অপরাধ নয়। অপরাধ খুঁজছি। নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’

পরীমনির আশেপাশে থাকা মানুষগুলোকে উদ্দেশ্য করে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মেয়েটার কি কোনো সত্যিকার বন্ধু নেই, যে তাকে একটু গাইড করবে! না হয় সে এতিম, অশিক্ষিত, ক্লাসহীন সমাজ থেকে উঠে আসা। কিন্তু ভদ্রলোক যারা তার আশেপাশে থাকতেন, তারা শুধু মেয়েটার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধাই নিলেন, একটুও দায়িত্ববান হতে পারলেন না!’

জ্যোতি আরও লিখেছেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমি চাই, যেন সঠিক বিচার হয়। যারা তাকে শৃঙ্খলা থেকে বের করল, বিছানায় নিয়ে গেল, মদ সাপ্লাই করল, নেশায় সঙ্গ দিল, কোটি কোটি টাকা দিল তাদেরকেও ধরা হোক, আইনের আওতায় আনা হোক। তাদেরও বিচার করা হোক। কারণ আমরা সবাই জানি, এই কাজগুলো একা করা যায় না।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রীতু শরমীন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পরীমনি ইস্যুকে দূরে ঠেলে দেবার মধ্যবৃত্তের সুশীল ভাবনায় মত্ত হয়েছেন যারা, তাদেরও নিজ চিন্তাপদ্ধতিকে পুনঃবিবেচনার সময় এসেছে বলে মনে করি।’

কাউসার শাহীন নামে একজন লম্বা ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো পরিচালক এইবার নিশ্চিত পরীমনিকে কাস্টিং করবে তার সিনেমার জন্য। কেবল সময়ের অপেক্ষা। পরীমনির অপরাধ কী? তিনি বাসায় মদ খান। এইতো অপরাধ। তার লাইসেন্স আছে মদ খাওয়ার। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে রিনিউ করা যায়। একটা প্রাইভেট স্পেসে, নিজ বাসায় পরীমনি কাউকে ক্ষতি না করে যা মন চায় তাই করতে পারে। এইটারে বলে প্রাইভেসি।

আর প্রাইভেসি আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। চাইলে কষ্ট করে সংবিধানের ৪৩ ধারা উল্টায়ে দেখতে পারেন।’ প্রবাদ আছে, এক হাতে তালি বাজে না। তাই পরীমনির ইস্যুতে তালি বাজানোর অন্য হাতটিকে খুঁজছে অনেকে। তারা মনে করছেন, সুযোগ সন্ধানী মানুষগুলোর পরিচয় প্রকাশ্যে আসার দরকার। পরীমনিকে যারা ব্যবহার করেছেন, স্বার্থ হাসিল করেছেন তাদের নাম পরিচয়ও প্রকাশ হওয়া দরকার। পরীর পাশে বসে যারা সুবিধা নিয়েছেন তারা কোথায়? পরীর এ দুঃসময়ে অনেকে ছি..ছি.. করছেন। নাম শুনলে চমকে উঠছেন। যেন সব ধোয়া তুলশি পাতা।

দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে পরীমনির। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে আছেন। অনেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন তিনি পুলিশকে। সে তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু প্রকাশ করছেন না পুলিশ কর্তারা। জানিয়েছেন, পরীর ঘটনায় যে নারী নির্মাতার নাম এসেছে তাকে এবং পরীর ড্রেস ডিজাইনার জিমিকেও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। প্রয়োজন হলে তাদের গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।