যুগে যুগে কুরবানী

যুগে যুগে কুরবানী
আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক
(ঘটনা-১)      যখন হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন আমাদের আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ)-এর শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে, তার প্রতিটি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা-এরূপ যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করতো। প্রথম গর্ভের ছেলের নাম কাবিল আর বোনের নাম আকলীমা। দ্বিতীয় বারের ছেলের নাম হাবিল আর বোনের নাম লবুদা। তখন ভাই-বোন ছাড়া হযরত আদম (আঃ)-এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ তায়ালা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে হযরত আদম (আঃ)-এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্ম গ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদয় ভাই-বোন গন্য হবে। এবং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে।
কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারিনী কন্যা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ বা জায়েজ হবে।কিন্তু ঘটনাচক্রে কাবিলের সহজাত সহোদরা ভগিনীটি ছিল পরমাসুন্দরী এবং হাবিলের সহজাত কন্যাটি ছিল কুশ্রী ও কদাকার। বিবাহের সময় হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত কুশ্রী কন্যা কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত ভগিনীকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। হযরত আদম (আঃ) তাঁর শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আব্দার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্যে নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী পরিগৃহিত হবে, সেই কন্যার পানিগ্রহণ করবে। হযরত আদম (আঃ)-এর নিশ্চিত বিশ^াস যে, যে সত্য পথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানীকে ভস্মিভূত করে আবার অন্তর্হিত হয়ে যেত। যে কুরবানী অগ্নি ভস্মিভূত করত না, তাকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত।
হাবিল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষিকাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরাবানীর জন্যে পেশ করল। অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা অবতরণ করে হাবিলের কুরবানীটি ভষ্মিভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল, তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে ভাইকে বলে দিলঃ ‘লাআক্বতুলান্নাক’অর্থাৎ অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জওয়াবে ক্রোশ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল। এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল।
সে বললঃ ‘ইন্নামা এতাক্বব্বালুল্লাহু মিনাল মুত্তাক্বীন’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিয়ম এই যে, তিনি খোদাভীরু পরহেজগারের কর্মই গ্রহণ করেন। তুমি খোদাভীতি অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হত। তুমি তা করনি, তাই কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি?ঘটনাটি পবিত্র কুরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহপাক বলেন, আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ে কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি।
সে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বললঃ আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা, আমি বিশ^জগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও।
অতঃপর দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল-যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ কিভাবে আবৃত করবে। সে বললঃ আফসোস, আমি কি এ কাকের সমতূল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি। অতঃপর সে অনুতাপ করতে লাগল।(সূরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ২৭-৩১)
ঘটনা-(২)      একদা নবী (আঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্তালেব মান্নত করলেন যে, আল্লাহ যদি আমাকে ১০টি ছেলে দেন তাহলে আমি এক ছেলেকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করে দেব। অতঃপর সত্যই তাঁর ১০টি সন্তান হলো। সবগুলো সন্তান অত্যন্ত শক্তিশালী আর চাঁদের মত সুন্দর। তবে সবচেয়ে সুন্দর ও আদরের হলো ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ্। হঠাৎ এক রাত্রে আব্দুল মুত্তালেব স্বপ্নে দেখলেন যে, কে তাকে বলছে, হে! আব্দুল মুত্তালিব! তোমার মান্নত পুরা কর। অন্যথায় দশ ছেলে এক সাথে মারা যাবে। স্বপ্ন দেখে আব্দুল মুত্তালিক ভয় পেয়ে গেলেন। বেচারা বৃদ্ধ মানুষ! সন্তানদেরকে ডেকে মান্নতের কথা এবং বর্তমান স্বপ্নের কথা বলে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমাদের মধ্যে থেকে খুশী খুশী আল্লাহর জন্য কুরবানী হতে কে রাজী আছ? সাথে সাথে সবাই প্রতিযোগিতা মূলক বলতে থাকলো আব্বা আমাকে কুরবানী করেন, আব্বা আমাকে কুরবানী করেন।অতঃপর আব্দুল মুত্তালেব নিজের ছেলেদের নামে লটারী দিলেন। দেখা গেল লটারীতে আব্দুল্লাহর নাম উঠলো।
তখন তিনি অন্তরের ¯েœহকে দমিয়ে রেখে সত্য সত্যই যখন ছুড়ি নিয়ে আব্দুল্লাহকে জবাই করার জন্য তার হাত ধরেমাযবাহের দিকে যেতে লাগলেন। তখন হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারনা হলো। আব্দুল্লাহর বোনেরা সবাই চিৎকার দিয়ে ক্রন্দন করতে আরম্ভ করে দিল এবং সবাই বলতে লাগলো, আব্বা! আপনার প্রতি জোর অনুরোধ আপনি আমাদের এই ছোট আদরের ভাইকে কুরবানী করবেন না। যদি ওকে কুরবানী করতেই চান তাহলে আগে আমাদের সবাইকে কুরবানী করেন। এরপর ওকে কুরবানী করেন। কারণ ওকে কুরবানী করার দৃশ্য আমাদের জন্য কিছুতেই দেখা সম্ভব নয়। ছোট ভাইকে বাঁচানোর জন্য বোনদের এই প্রাণপন আকুতি আব্দুল মুত্তালেব প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না। অবশেষে দাঁড়ালেন একটু সময়ের জন্য।
তখনই আরবের এক বুদ্ধিমতি মহিলা সেখানে এসে বললেন, হে আব্দুল মুত্তালেব! তুমি সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে দুঃখের অথৈ সাগরে নিমজ্জিত করে স্বীয় পুত্র আব্দুল্লাহকে নিজ হাতে কুরবানী কর না। বরং তুমি প্রথম ১০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দাও। যদি লটারীতে আব্দুল্লাহর নাম না উঠে, তাহলে ২য় বার ২০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দাও। এভাবে প্রতিবার লটারীতে ১০টি করে উটের সংখ্যা বাড়িয়ে ততক্ষন পর্যন্ত উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দিতে থাকবে যতক্ষন লটারীতে উটের নাম না আসবে। এভাবে যে পরিমাণ উটের সংখ্যায় গিয়ে লটারীতে উটের নাম উঠবে। মনে করবে সে পরিমাণ উট আব্দুল্লাহর পরিবর্তে কুরবানী করলে তোমার মান্নাত পূরা হবে।
উক্ত মহিলার কথা অনুযায়ী আব্দুল মুত্তালেব প্রথমে ১০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দিলেন। লটারীতে আব্দুল্লাহর নাম উঠলো। এরপর ২০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দিলেন। আবারও আব্দুল্লাহর নাম উঠলো। এরপর ৩০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দিলেন।আবারও আব্দুল্লাহর নাম উঠলো। এভাবে নয় বার পর্যন্ত একাধারে লটারীতে আব্দুল্লাহরই নাম উঠলো।অতঃপর দশম বারে ১০০টি উট ও আব্দুল্লাহর নামে লটারী দেয়া হলে, লটারীতে উটের নাম উঠলো।
তখন আনন্দে উপস্থিত জনতা সবাই “আল্লাহ আকবার” বলে উঠলো। বোনেরা আদরের ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে নিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়লেন। আর আব্দুল মুত্তালেব ১০০টি উট নিয়ে গিয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে নহর (কুরবানী) করে দিলেন। এই ঘটনার পর থেকেই হযরত আব্দুল্লাহ “জবীহুল্লাহ” খেতাবে ভুষিত হলেন। (আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২/২০০)
ঘটনা-(৩)      আমরা কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা শুনছিলাম যে, যাহোক কুরবানীর শুরু ও সূচনা হযরত আদম (আঃ)-এর পুত্রদ্বয় হাবিল কাবিল থেকেই হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এ কুরবানীর সম্পর্ক হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর পুত্র কুরবানীর অবিস্মরণীয় ঘটনার সাথে। আর সে ঘটনার স্মারক হিসেবেই উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করা হয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সে ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজীরবিহীন, অবিস্মরণীয় ওশিক্ষণীয় ঘটনা।কুরবানীর তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য বুঝবার জন্য এ ঘটনাই হলো একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু। হযরত ইবরাহীম (আঃ) জীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়ে দেন নিঃসন্তান অবস্থায়।
অবশেষে তার বয়স যখন ৮৬ বছর তখন একদিন তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে দু’আ করলেন: হে রব! আমাকে সৎ পুত্র দান করো(সূরাঃ সাফফাত, আয়াতঃ১০০) তার এ দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দেন ইরশাদ করেন, অতপর আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। (সূরাঃ সাফফাত, আয়াতঃ ১০১) পুত্র সন্তান হওয়ার পর সেই সন্তান লালন-পালনের দীর্ঘ কষ্ট সহ্য করার পর যখন বিপদে-আপদে কাজেকর্মে সন্তান পিতার পাশে দাঁড়াবার বয়সে পৌঁছল তখন আল্লাহ’র পক্ষ থেকে নির্দেশ হলো, পুত্রকে কুরবানী করার।
এ ঘটনাকে কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা এভাবে বর্ণনা করেছেন, “অতঃপর যখন পুত্র পিতার সঙ্গে চলা ফেরার মত বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহীম (আঃ) বললেন, হে আমার পুত্রধন! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। তুমি ভেবে দেখ, কী করবে? সে বললো, হে পিতা! আপনাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা আপনি পালন করুন। ইন্শা আল্লাহ! আপনি আমাকে সবরকারীদের মধ্যে পাবেন।” পিতা-পূত্র উভয়েই আনুতগ্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ্ করার জন্যে শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ্ করার জন্যে এক মহান জন্তু।
(দেখুন, সূরাঃ সাফ্ফাত, আয়াতঃ১০২-১০৭) হযরত নূহ (আঃ),ইবরাহিম (আঃ),ইসমাইল (আঃ),ইসহাক (আঃ),মূসা (আঃ),ইয়াকুব (আঃ),এঁরা সকলেই কুরবানী করেছেন,আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি। যাতে তারা আল্লাহ’র দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহ’র নাম উচ্চারণ করে। অতএব,তোমাদের ইলাহ তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগনকে সুসংবাদ দাও। (সূরাঃ হজ¦,আয়াতঃ
৩৪)আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য হলো এ উম্মতকে যে কুরবানীর আদেশ দেয়া হয়েছে,তা কোন নতুন আদেশ নয়,বরং পূর্ববর্তী উম্মতদেরকেও কুরবানীর আদেশ দেয়া হয়েছিল,তা বুঝানো। তবে সমস্ত কুরবানী থেকে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কুরবানী ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র ইসমা’ঈল (আঃ)-কে স্বহস্তে যবেহ করতে উদ্যত হয়েছিলেন একমাত্র আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।
আর শিশুপুত্র ইসমাঈলও অকুন্ঠচিত্তে আল্লাহ’র নির্দেশ পালনে সুতীক্ষè তরবারীর নিচে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। পিতা-পুত্রের এ সুমহান আত্মত্যাগকে চিরভাস্মর করে রাখার নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা মিল্লাতে ইবরাহীমের জন্য কুরবানীর প্রথাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। (কুরবানীর পাথেয়)।