রমজান মাসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হোমিওপ্যাথি

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 

সুপ্রভাত বগুড়া (স্বাস্থ্য চিকিৎসা): মুসলমানদের পাঁচটি ধর্মীয় ভিত্তির মধ্যে রমজান অন্যতম।ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ মাসে রোজা রেখে, ইবাদত বন্দেগি করে, তারাবির নামাজ পড়ে পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে রহমত , মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করেন।এ মাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিশেষ রজনী হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর, যে রাতে পবিত্র কোরআন শরিফ নাজিল হয়েছে। সুতরাং এ মাসের পরিপূর্ণ সিয়াম সাধানার জন্য সুস্বাস্থ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রোজা রাখলে আমাদের শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়ে চর্বি ভাঙতে থাকে। এজন্য রমজানে প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত কিভাবে স্বাস্থ্য ঠিক রেখে রোজা পালন করা যায় সে দিকে গুরুত্ব দেওয়া।

 রোজা পালনের জন্য এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য যা করা প্রয়োজন-
* রোজার সময় ১৫ ঘণ্টা উপবাস থাকতে হয় এ জন্য ইফতার, ইফতার পরবর্তী আহার এবং সেহরির খাবার সুষম এবং উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বঞ্ছিত হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে  নির্ধারণ করে  খাবারের ছক তৈরি করতে হবে।
* যেসব খাবার সহজে হজম হয় সেগুলো গ্রহণ করা ভালো।

Pop Ads

* বেশি ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বর্জন করা বাঞ্ছনীয়।

* ফাস্টফুড, জাংকফুড, চিপস, পিজ্জা, রঙিন পানীয় পরিহার করা ভালো।

* প্রচুর পরিমাণে পানীয়, তাজা ফলের রস এবং লেবুর শরবত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

* লাল মাছ মাংস, চর্বিযুক্ত মাছ মাংস গ্রহণ না করা ভালো।

* মদ্যপান, ধূমপান, তামাক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ পরিত্যাজ্য।

* যাদের গা খুব বেশি ঘামে তাদের ওরাল স্যালাইন বা ডাবের পানি খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
রোজার সময় যেসব রোগবালাই হতে পারে

* রোজার প্রাক্কালের সবচেয়ে প্রথম যে সমস্যা তৈরি হয় তা হল ঘুম না হওয়া, বা কম হওয়া বা অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া। সাধারণত সেহরি খাওয়ার কারণে প্রথমদিকে স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। এটা সাময়িক একটা সমস্যা এবং পর পর কয়েকদিন রোজা রাখলে এটা শরীরে ধাতস্থ হয়ে যাবে। তবে যদি কারও এটা সর্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো হোমিওপ্যাথি ঔষধ নাক্স ভূমিকা  ঘুমের  জন্য খাওয়া যেতে পারে।

* ইফতারির সময় বেশি ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, রঙিন খাবার গ্রহণের ফলে বুক জ্বালপোড়া করা, অম্ল ঢেঁকুর ওঠা বা এসিডিটি পেটে ব্যথা হতে পারে। যাদের আগে থেকে পেপটিক আলসার ডিজিজ আছে তাদের এ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শম মতো  অম্লনাশক ওষুধ বা কার্বভেজ, নাক্স ভূমিকা, লাইকোপোডিয়াম ওষুধ ইফতার, ইফতার পরবর্তী খাবার বা সেহরির মাঝখানে গ্রহণ করা যেতে পারে। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া ভালো।

* রোজার প্রথমদিকে আরেকটি প্রধান অসুবিধা হল কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনসস্টিপেশন। এটা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় যাদের তামাক, সিগারেটজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে এবং যারা পানি ও ফলের রস কম গ্রহণ করে থাকে। এসব ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেলে এবং প্রচুর পানি এবং ফলের রস গ্রহণ করলে এ অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। ক্ষেত্র বিশেষে কিছুসংখ্যক ব্যক্তির বেলায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো নাক্স ভূমিকা,এলোমিনা,  ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

* কোনো কোনো রোজাদারদের বেলায় বদহজম পাতলা পায়খানা ও আমাশয় হতে পারে। এগুলো সাধারণত অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পানি, ফলের রস এবং খাবারের কারণে হয়ে থাকে। এসব খাবার ও পানীয় আক্রান্ত ব্যক্তির হাত থেকে খাবারে সংক্রমিত হয়। এজন্য ইফতারি ও অন্যান্য খাবার ও পানীয় কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এর পরই এগুলো ক্রয় করে গ্রহণ করতে হবে। বেশি পরিমাণে ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি বা বদহজম হলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওরাল স্যালাইন, এবং কলসিন ও নাক্স ভূমিকা, মারকুরিসার্স সল ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।

* রোজাদারের কোনো কোনো সময় তীব্র গরম এবং ঘামের কারণে অতিরিক্ত লবণ শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পরে। এর সঙ্গে হিট স্ট্রোক হয়ে রোগী মূর্ছা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, র‌্যাশ ইত্যাদিও হতে পারে। কোনো কোনো রোজাদারের ক্ষেত্রে মাংসপেশির ক্র্যাম্পও হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে ঠাণ্ডা কোনো জায়গায় শুয়ে বিশ্রাম করতে হবে, প্রচুর পরিমাণ ওরাল স্যালাইন খেতে হবে এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে  পারে।

* ডায়েবেটিসের রোগীরা কী রোজা রাখতে পারবে।
ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সীমিত খাবার গ্রহণ, মুখে খাবার ডায়াবেটিস বড়ি এবং ইনসুলিন সময়মতো গ্রহণ করা এবং শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম বেশি করা, মিষ্টি, শর্করা এবং চর্বিজাতীয় খাদ্য কম গ্রহণ বা পরিহার করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কাজেই বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখার ব্যাপারে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ইনসুলিন ৩০ শক্তি ডোজ বা মাত্রা এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো সময় নির্ধারণ করতে হবে।

প্রয়োজনে ইফতারির সময়, সেহরির সময় রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয় করে ওষুধ অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। যেসব ডায়াবেটিক রোগীর জটিলতা বা কপ্লিকেশন আছে যেমন হার্টের অসুখ, কিডনি ফেইলুর আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শমতো এবং রোগের ধরন ও গভীরতা থেকে নির্ধারণ করতে হবে যে সে রোজা রাখতে পারবে কিনা। ওপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, যে কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষ এবং পেপটিক আলসার ডিজিজ, ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখার কোনো বাধা নিষেধ নেই।

শুধু সঠিক এবং সুষম খাবার গ্রহণ, প্রচুর পানীয় এবং তাজা ফলের রস গ্রহণ, ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, ফাস্টফুট, জাংকফুড কম খাওয়া, তামাক ও নেশা  জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা, সাধারণত সেহরি ও ইফতারের পর চা কফি খাওয়া অনুচিত। কারণ চা কফির ক্যাফেইন অনেক সময় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। নিয়ম মেনে রোজা রাখার পরেও এসব সমস্যা হতে থাকলে হোমিওপ্যাথিক  ওষুধ সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব মাথা ব্যথ্যা, দূর্বলতা ও ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে প্রায় সবারই মাথাব্যাথা, দূর্বলতা, ক্লান্তি চলে আসে।

অনেকেরই আবার ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হল, সেহরি ও ইফতারে তরল এনার্জেটিক খাবার গ্রহণ না করা এবং কিছু উত্তেজক খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা। তরল খাবারের মধ্যে দুধ, স্যুপ, ফলের জুস, লেবুর শরবত এবং পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে। খাবারের লবণের পরিমাণ কমে গেলেও দূর্বলতা, ক্লান্তিভাব ও প্রেসার কমে যেতে পারে। তবে অবশ্যই চা কফি, মসলাযুক্ত ও টকজাতীয় খাবার গ্রহণ না করা বাঞ্ছনীয়। কারণ সেহরিতে চা কফি খাওয়ার ফলে এর ক্যাফেইন সারাদিন পিপাসা লাগার অন্যতম কারণ।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের  পরামর্শমতো ওষুধ গ্রহণ করে যে কেউই রোজা রাখতে সক্ষম। খুব বেশি অসুস্থ, গর্ভবতী মা ও দুগ্ধ প্রদানকারী মা, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, মানসিক রোগী এদের রোজা না রাখাই ভালোএছাড়াও হার্টের সমস্যা ও হাইপারটেনশন অনেকেই ভাবেন হার্টের সমস্যায় রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা ভালো হার্টের যে কোন রোগ হলেই রোজা রাখা যাবে না এমনটি ধারণা করা সম্পূর্ণ ভূল। নিউইয়র্ক হার্ট এ্যাসোসিয়েশন এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে করোনারি আর্টারি ডিজিজে রোজা রাখলে রোগীদের কোন সমস্যাই হয় না। তারা ৮৬ জন রোগীর মধ্যে এই পরীক্ষা করেন।

সেখানে বলা হয়েছে ৮৬% রোগীর সারা মাস রোজা রাখার ফলে কোন সমস্যাই হয়নি। হাইপারটেনশন, এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, ভালভিউলার ডিজিজ, এনজাইনা পেকটোরিস, হার্ট ব্লক রোগীদের ক্ষেত্রে তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন ২৮৮ জন রোগী এসব রোগ নিয়ে রোজা রেখেও উল্লেখযোগ্য কোন সমস্যায় পড়েন নি। এসব ক্ষেত্রে সফলতার হার ৯১.২%। তবে হার্টের রোগীদের অবশ্যই ভালভাবে রোজা রাখার জন্য মানসিক চিন্তা, এ্যাংজাইটি, উদ্বিগ্নতা, অত্যাধিক ইমোশন ত্যাগ করতে হবে। নিয়ম মানার পরেও যদি সমস্যা হতে থাকে এবং সমস্যাটি দীর্ঘদিনের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভাল হোমিওপ্যাথের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

কারণ হোমিওপ্যাথে এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা অনেক জটিল হার্টের রোগীকেও সুস্থ করতে পারে। এদের মধ্যে একোনাইট, অরামমেট, ক্যাকটাস, ক্র্যাটিগাস, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, ফসফরাস, ন্যাজা ইত্যাদি ওষুধ উল্লেখযোগ্য। বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মাদের ক্ষেত্রে রোজা অনেকেই ভাবেন বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় রোজা রাখা যাবে না কারণ দুধ শুকিয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। তবে স্তনদানকারী মাকে অবশ্যই সহজে হজম হয় এমন খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। এভাবে রোজা রাখাও পরও যদি সমস্যা হয় তাহলে তারা হোমিওপ্যাথের শরণাপন্ন হতে পারেন। কারণ হোমিওপ্যাথিতে বুকের দুধ বাড়ানো ও কমানো উভয়েরই মানসম্পন্ন ওষুধ রয়েছে।

রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে রোজা রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীরাও চিন্তামুক্ত হয়ে রোজা রাখতে পারেন। কারণ সম্প্রতি ইরানিয়ান একটি রিসার্চে বের হয়েছে ৪৬-৫০ বছরের আর্থ্রাইটিসের রোগীরা রোজা রাখলে ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন  উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাভ করে। রিসার্চে বলা হয়েছে ৫৭.২% রোগীরা একটু সতর্কতার সহিত তারাবির সালাত আদায় করলে ও ডায়েটের দিকে গুরুত্ব দিলে সহজেই রোজা পালন করতে পারেন। রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স লিডাম, কলচিকাম, লাইকো, ক্যালকার্ব, কস্টিকাম, ক্যালফস ইত্যাদি ওষুধগুলো রোগিকে রিলিভ দিতে পারে।

স্ট্রেস, ডিপ্রেসন, এ্যানজাইটি রিলিভার সম্প্রতি ইরানিয়ান ও সুইডিস গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন ২৯-৩০ দিনের রোজা এবং প্রতিমাসে ২-৩টি রোজা পালন করলে স্ট্রেস, ডিপ্রেসন, এ্যানজাইটি অনেকাংশে কমে যায়।
মহান আল্লাহ রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন তার বান্দাদের কল্যাণের জন্য। সারাদিন না খেয়ে থাকার নামই রোজা নয়। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই নিয়মানুবর্তিতার সহিত তোমাদের উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে।” সুতরাং নিয়ম শৃঙ্খলার সহিত রোজা পালনই এর মূল ভিত্তি। তথাপি বর্তমানে নিয়ম মানার পরেও অনেকেই বিভিন্ন ধরনের রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন, অনেকেই আবার রোগ নিয়ে কিভাবে রোজা রাখবেন সেই চিন্তায় আছেন।

এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও খাদ্যের সচেতনতা। এসব সচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক সমস্যারই সমাধান সুন্দরভাবে করা সম্ভব। কারণ মনে রাখতে হবে সুস্থতাই জীবন। শৃঙ্খল জীবনযাপনই সুস্থতার মুলভিত্তি। আর শৃঙ্খলার জন্যই রোজা এবং রোজাই আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক,দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
কো-চেয়ারম্যান : হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ই-মেইল. [email protected]
মোবাইলঃ০১৮২২৮৬৯৩৮৯