রুশ পুরুষদের দেশ ছাড়ার হিড়িক: স্বামীদের ‘বাঁচাতে’ হাত-পা ভাঙতে চাইছেন রুশ-পত্নীরা

রুশ পুরুষদের দেশ ছাড়ার হিড়িক: স্বামীদের ‘বাঁচাতে’ হাত-পা ভাঙতে চাইছেন রুশ-পত্নীরা

রাশিয়ার জনগণের একাংশকে ইউক্রেনের যুদ্ধে যেতে হবে। গোটা রাশিয়াকে চমকে দিয়ে এই ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে নির্দেশ আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায় রুশ পুরুষদের মধ্যে। বিমানবন্দরগুলিতে পাশের দেশে যাওয়ার জন্য ভিড় উপচে পড়েছে। পুতিন যদি যুদ্ধে পাঠান, এই ভয়ে স্বামীদের হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রুশ পত্নীরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম দেশের আমজনতার একাংশকে কোনও যুদ্ধে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের ময়দানে তিন লক্ষ রুশ নাগরিককে পাঠাতে চায় সরকার। এবং তাতেই দেশ জুড়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে। কেউ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। কেউ বা আবার রুশ মন্ত্রীদের যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এরই মাঝে পুতিন-বিরোধী ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে রাশিয়ায়।

Pop Ads

পুতিনের ঘোষণা ছিল, রাশিয়ার সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত অথচ শারীরিক ভাবে সক্ষম ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ফের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া, রাশিয়ার সংরক্ষিত বাহিনীতে নাম রয়েছে, এমন লোকজনকেও ইউক্রেনের যুদ্ধে নামানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সে জন্য রুশ সেনাবাহিনীর তরফে বিশেষ প্রশিক্ষণ পাবেন এই ব্যক্তিরা।

পুতিনের ঘোষণার পরেই মঙ্গোলিয়া, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্থানে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেটে ফেলেছেন বহু রুশ পুরুষ। ওই দেশগুলিতে যাওয়ার সমস্ত টিকিটই নাকি শুক্রবার বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

দেশ ছাড়ার হিড়িক নামায় রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যানজট দেখা গিয়েছে। স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লেনিনগ্রাদ অঞ্চলে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত এলাকার চেকপয়েন্টে প্রবল যানজট হয়েছে। ওই এলাকার তরফায়ানভকা-ভামিমা চেকপয়েন্টে পর পর ৭৫টি গাড়ি আটকে পড়েছিল। অন্য দিকে, ব্রুসনিতনিতে ৩৫টি গাড়ির দাঁড়িয়ে ছিল। ইমাত্রা চেকপয়েন্টে ৬০ গাড়ি যানজটের মধ্যে ফেঁসে যায়।

বিমানবন্দরের পথে যেতে গিয়ে অনেকেই গাড়িতেই রাত কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম। একটি ভিডিও’য় দেখা গিয়েছে। জর্জিয়ার সীমান্ত এলাকায় রাতের অন্ধকারে গাড়ির লম্বা লাইন পড়েছে। বস্তুত, রাশিয়ার বেশির ভাগ পুরুষ ওই পড়শি দেশে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে সূত্রের দাবি।

দেশ ছেড়ে চম্পট দেওয়া ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধে যাওয়া ঠেকাতে আরও একটি পন্থা নিয়েছেন রুশরা। সম্প্রতি রুশ-পত্নীরা নাকি গুগ্‌লে সার্চ করছেন, ঘরে বসে কী ভাবে হাত ভাঙা যায়? নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ নয়। নিজেদের স্বামীদের হাত-পা ভেঙে দিয়েও তাঁদের ইউক্রেন-যাত্রা ঠেকাতে চান রুশ-বধূরা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে এক রুশ পত্নীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমার স্বামীকে কিছুতেই যুদ্ধে যেতে দেব না। বরং ওঁর দু’পা ভেঙে দেব। সন্তানদের দেখাশোনা করাই তো ওঁর কাজ!’’ রুশ পত্নীদের এমন জঙ্গি মনোভাবের বিরুদ্ধে পাল্টা ‘চাল’ চেলেছে প্রশাসন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুদ্ধের ময়দানে যাওয়া এড়াতে হাত-পা ভেঙে অথবা অন্য কোনও ভাবে নিজেদের ক্ষতি করলে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে।

সরকারি পদক্ষেপের ঝামেলা এড়াতে তাই দেশ ছেড়ে পালানোই বেছে নিচ্ছেন মূলত ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি রুশ পুরুষেরা। বিমানবন্দরে গিয়েও অবশ্য শান্তি নেই রুশদের। পুতিনের ঘোষণার পরেই কি দেশ ছাড়ছেন? বিমানবন্দর কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অনেকে। কী উদ্দেশ্যে অন্য দেশে যাচ্ছেন রুশ নাগরিকেরা, সে কারণও জানতে চাওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার রুশ গুপ্তচর সংস্থার আধিকারিকদের প্রশ্নবানের মুখে পড়েছেন।

একটি ভিডিও’য় দেখা গিয়েছে, রাশিয়া এবং কাজাখস্থান সীমান্তের মধ্যবর্তী কুলুন্দা জেলায় ভিড়ে ভিড়াক্কার। সেখানে হাজির হওয়া অনেকেই প্রথম বার দেশ ছাড়ছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, ‘‘সীমান্ত পেরোতে গেলে কী করতে হবে, সেই প্রক্রিয়াই জানা নেই অনেকের।’’ তা সত্ত্বেও যেন তেন প্রকারে দেশ ছাড়তে চান বহু রুশ নাগরিক।

এই আবহে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ছাড়ছে না বিমান সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গে যাওয়ার জন্য তিন সদস্যের এক পরিবারের পকেট থেকে খসে গিয়েছে ৪৪ হাজার পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৯ লক্ষ টাকা।

আরবিকে নামে রাশিয়ার একটি তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে। তুরস্ত, আর্মেনিয়া এবং জর্জিয়ার মতো যে সব দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা লাগে না রুশদের, সেই দেশগুলির বিমানের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

রুশদের দাবি, ইউক্রেনের যুদ্ধে যাওয়ার সমন পৌঁছে দিতে তাঁদের ঘরে তো বটেই এমনকি অফিসেও পৌঁছে যাচ্ছে সরকারের লোকজন। এক চিকিৎসকের কাছে নাকি রোগী সেজে সে সমন ধরানো হয়েছে। সেই সমনে বলা হয়েছে, হাতে সময় রয়েছে চার ঘণ্টা। এর মধ্যেই ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে। যোগ দিতে হবে ইউক্রেনের যুদ্ধে।

যদিও এ দাবি অস্বীকার করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মিখাইল খোদারিয়োনোক। জাতীয় টেলিভিশনে তার দাবি, রুশ নাগরিকদের কাছে সেনার সমন পৌঁছে দিতে তাদের বাস স্টপ বা রাস্তায় পাকড়াও করা হবে না। বরং তাদের বাড়িতে সে সমন পৌঁছবে।

আমজনতাকে যুদ্ধে পাঠালেও মন্ত্রীদের এ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে পুতিনের সে সিদ্ধান্ত নিয়েও সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ নাগরিকেরা। সূত্র: আনন্দবাজার