শাজাহানপুরের সেই গার্মেন্টস কর্মী মিম হত্যার রহস্য উদঘাটন !!

শাজাহানপুরের সেই গার্মেন্টস কর্মী মিম হত্যার রহস্য উদঘাটন !! ছবি-দিপংকর

সুপ্রভাত বগুড়া (এ কে দিপংকর ): বগুড়ায় ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ সদস্যরা। আর এর মধ্য দিয়েই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য যেমন উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি কয়েকজন নির্দোষ ব্যক্তিও গণধর্ষণ পূর্বক খুনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

বগুড়ার শাজাহানপুরে গার্মেন্টকর্মী মিম আক্তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা পাকুড়তলা এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রিকশাচালক নুর ইসলাম (২৮)।

Pop Ads

আজ রবিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসানের আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। উল্লেখ্য শাজাহানপুর থানার গণ্ডগ্রামে গত ৫/৬/২০২০ শুক্রবার সকালে মিম আক্তার(১৯) নামক একজন গার্মেন্টস কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নিহত মিম ঢাকার আশুলিয়ার গ্রীন লাইফ গার্মেন্টসে কাজ করতেন। ৪/৬/২০২০ তারিখে তিনি গাজিপুরের মৌচাক এলাকা থেকে বগুড়া গামী একটা বাসে উঠেন। তার কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না, বাসের সুপারভাইজারের মোবাইলের মাধ্যমে তিনি তার কলোনীর হোটেল কর্মী মায়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।

বাসটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বগুড়ার বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে মিমকে নামিয়ে দেয় এবং সুপারভাইজার তাকে একটি মোটা চাকার অটোরিকশায় তুলে দেন। যথাসময়ে বাড়িতে না পৌঁছায় মিমের পরিবার সেই সুপারভাইজারের নম্বরে দফায় দফায় যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রিকশায় তুলে দেয়া হয়েছে।

পরদিন শুক্রবার সকালে রানিরহাট – গণ্ডগ্রাম রোডের ৪ ইঞ্জিনিয়ার্স গামী রাস্তার উপরে একটা মেয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলের আশেপাশে অন্তত হাফ কিলোমিটারের ভিতরে কোন স্থাপনা/বসতি ছিল না।

খবর পেয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং নিহত মেয়ের পাশে থাকা পরিচয়পত্রের নম্বরে ফোন দিয়ে তার মাকে ডাকলে তিনি এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় মিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম বার মহোদয়ের নেতৃত্বে শাজাহানপুর পুলিশ টিম মাঠে নামে। ঘটনাটি একদম ক্লুলেস। ইঙ্গিত বলতে মেয়েটি যে রিকশায় উঠেছিল তার চালকের অস্পষ্ট বর্ণনা। সেই রিকশা চালকের অবয়বের ধারণা নিয়ে খুঁজতে থাকে টিম শাজাহানপুরের সদস্যরা।

গত ১৬ তারিখ রাতে কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ফারুক সেই বর্ণনার সাথে মিলে যাওয়া একটা মোটা চাকার অটো রিকশাচালককে পায়। নাম নুর ইসলাম (২৮), পিতা রফিকুল ইসলাম গ্রাম পাকুড়তলা, মোকামতলা, শিবগঞ্জ।

বর্তমানে পালশা এলাকায় ভাড়া থেকে রিকশা চালায়। ফারুক তাকে চ্যালেঞ্জ করে। সরাসরি বলে তুই আগের বৃহস্পতিবার রাতে একটা মেয়েকে রিকশায় নিয়ে গিয়ে কি করলি? রিকশা চালক প্রত্যক্ষ প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে ফেলে আমি ত তাকে শাকপালা যাত্রী ছাউনিতে নামিয়ে দিয়েছি।

রিক্সাওয়ালার কথাই গোলমাল আছে বুঝতে পেরে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এস আই রাজ্জাককে অবগত করে। পুলিশ কর্মকর্তা রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইংগিত পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল এবং ওসি শাজাহানপুরকে তিনি বিষয়টি জানায়।

তখন রাত প্রায় দু’টো বাজে। সেই রিকশা চালককে থানায় আনা হয়,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল এবং ওসি শাজাহানপুর থানায় এসে তাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে। সে জানায় বনানী পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে সে মেয়েটিকে তুলে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছে, তার সাথে আরও চারজন ছিল।

প্রাথমিকভাবে সে জানায় সবাই মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তারপর মেরে ফেলেছে। চারজনের নাম ঠিকানাও সে বলে দেয়। টিম শাজাহানপুরের সদস্যরা পরদিনই তিন জনকে আটক করতে সমর্থ হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে দেখা যায় তাদের অবস্থান সেখানে মোটেও ছিল না বরং আটক রিকশা চালকের সাথে চারজনেরই পূর্ববর্তী শত্রুতার ঘটনা আছে।

আর গণ ধর্ষণের কোন আলামতও মেয়েটির শরীরে ছিল না। টিম শাজাহানপুর দ্বিধায় পড়ে গেল। তাকে আদলতে হাজির করিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনা হলো। আটক তিন ব্যক্তিকে তার মুখোমুখি করা হলে সে এদের বাদ দিয়ে নতুন দুজনের নাম বলল।

সেই দুজনের একজনকে মোকামতলা থেকে ধরে আনা হলো, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেখা গেল সে নিকট অতীতে বগুড়া শহরেই আসেনি। আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, সাইকোলজিক্যাল ব্ল্যাকমেইল,ধাপ্পা ইত্যাদির দ্বারা এক পর্যায়ে সে সত্যটা স্বীকার করে ফেলে।

আটক রিক্সা চালক নুর জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মেয়েটাকে তুলে নিয়ে সে বনানী মোড়ে আসতেই তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপে যায়। শহরের দিকে না এসে সে বামে মোড় নিয়ে শাকপালার দিকে যেতে থাকে। মেয়েটি বগুড়ার রাস্তাঘাট না চেনায় বুঝতে পারেনি। টিপটিপ বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা ছিল জনশূন্য।

মেয়েটিকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করলে মেয়েটি বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি শুরু। সে মেয়েটির মুখে আঘাত করলে তার ঠোঁট কেটে যায়। এরপর নুর ইসলাম রিকশার চাকা খোলার রড দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করে।

এক আঘাতেই মেয়েটি মারা গেলে সে রডটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে চলে আসতে থাকে। কিছুদূর এসে পোশাক পড়া লোক আসতে দেখে সে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলে দেয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক রডটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এস আই রাজ্জাক বলেন, নুর ইসলাম রবিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব খালিদ হাসানের আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৫শত রিক্সা চালকের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে শেষপর্যন্ত এই নুর কে গ্রেফতার করে ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here