শাজাহানপুরে আড়িয়া-রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্নীতির তদন্ত করছে পিবিআই

তিনকোটি টাকা আত্মসাৎ ও সরকারী বিধি বর্হিভুত কার্যক্রম !

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব ): বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া- রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়টির প্রায় তিন কোটি টাকা লুটপাট, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট, সরকারী বিধি পরিপন্থি কার্যক্রম ও অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অপরাধে অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিশেন (পিবিআই)।

Pop Ads

আজ মঙ্গলবার ১৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিশেন (পিবিআই) এর এসআই আকরাম হোসেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রথম দিনে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিসা খাতুন, সদস্য আওরঙ্গজেব ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলীকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

আর ম্যানেজিং কমিটির বেপরোয়া ও বে-আইনি দৌড়াত্ব একের পর এক মাথাচাড়া দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুল শাস্তি ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনুমোদন না নিয়ে স্কুল ভবনের নীচতলা মার্কেট করে বানিজ্যিক কেন্দ্রে রুপান্তর ও পজিশন বিক্রি করে প্রায় তিন কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। এসব টাকা স্কুলটির ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা না করে লুটপাট করা হয়েছে। স্থানীয় সমাজ সচেতনগন ও দাতা সদস্যরা এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তাদের মামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। ফলে ম্যানেজিং কমিটির একচ্ছত্র আধিপত্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা সচেতন সমাজ।

এছাড়া দিনের পর দিন এমন কান্ড কারখানায় শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য মোঃ আবু তালেব। এসব অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায়, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুকে প্রকাশ করায় মামলার বাদী তালেব ও সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। এমনকি ওই বিদ্যালয়ে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেজুলেশন করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ও ম্যানেজিং কমিটি সরকারী বিধি উপেক্ষা করে স্কুল ভবনের নীচতলা মার্কেট নির্মান করে বিদ্যালয়টিকে বানিজ্যিক ভবনে রুপান্তর করা হয়েছে এবং সেখানে ৫৮ টি দোকান ঘর নির্মান করে প্রতিটি দোকান ঘড় থেকে চার লক্ষ থেকে ছয় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পজিশন বিক্রি করেছে। হিসেব মতে এর পরিমান দাড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এছাড়াও কয়েক বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়ের টাকা গ্রহন করা হয়েছে। সব মিলে আদায়কৃত প্রায় তিন কোটি টাকা ওই বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্ট সঞ্চয়ী হিসাব নং ৪২০০০১০০০২৭৯৯ রুপালী ব্যাংক লিঃ বগুড়া ক্যান্ট শাখায় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি।

যা সম্পুর্ণ বে-আইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে বিদ্যালয়টির সভাপতি আনিছা খাতুন প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ও সদস্য আরঙ্গজেব এ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেছেন “এসব গোপনীয় বিষয়। বিধায় এসব তথ্য জানানো যাবেনা”। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রদত্ত ২০০৯ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন ও বিধানের ৪৫ ধারায় দেখাযায়, সেখানে উল্লেখ আছে, গভর্ণিং বডি বা ক্ষেত্রমত ম্যানেজিং কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল আয় ব্যাংক একাউন্টে জমা করতে হবে এবং উপ-প্রবিধান (৫) এর বিধান মতে সকল দায় ক্রসড চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

ধারা ৪৫ এর উপধারা ৪ এ আরও বলা হয়েছে কোনক্রমেই আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে নগদে (ঈধংয ঃড় পধংয) ব্যায় করা যাবেনা। বিদ্যালয়টি সম্পর্কে আরও জানাযায়, প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর নিয়োগ অবৈধ ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিেেযাগ এনে ২০০৮ সালে রেজুলেশনের মাধ্যমে সর্ব সম্মতিক্রমে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওরঙ্গজেব ও সদস্যগন। এভাবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ বছর তিনি চাকুরী বঞ্চিত থাকেন। সহকারি প্রধান শিক্ষক আবদুল মোত্তালিব বলেন, পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এডহক কমিটি তাকে চাকুরীতে পুণঃবহাল করে।

কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপন এর বিধানমতে এধরনের কোন বরখাস্তকৃত শিক্ষককে পুণঃবহালের ক্ষমতা এডহক কমিটিকে দেয়া হয়নি। এবিষয়ে উপজেলার মাঝিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম এবং মানিকদীপা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ এর নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, নিয়মিত কমিটি দোষী সাব্যস্ত করে চাকুরী থেকে অব্যহতি দেয়া কোন শিক্ষককে পুণঃবহালের ক্ষমতা এডহক কমিটির নেই। তারা শুধু দৈনন্দিন কার্যাবলী পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখাযায়, তার নিয়োগও অবৈধ।

বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্কুলটির সভাপতি আনিছা খাতুনের ভাই আওরঙ্গজেব ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ায় অর্থনৈতিক লেন-দেন ও সার্বিক সিদ্ধান্ত তারটাই চুড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়। বিদ্যালয়টির আজীবন দাতা সদস্য আবু তালেব জানান, আওরঙ্গজেব পরিবারের ৪ জন এই কমিটির সদস্য। বাকিরা যোগসাজসে অনুগত। বিধায় একচ্ছত্র আধিপত্যে তিনিই বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। সভাপতি শুধুমাত্র নাম স্বাক্ষর করেন।

তিনি আরও বলেন, স্কুলের সম্পদ লুটপাট করে এই পরিবার কেন্দ্রিক কমিটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এসব সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ দানা বেধে উঠায় তিনি নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আর এ জন্য তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হামলা সহ জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

আর ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয়টির সবকিছু আওরঙ্গজেবের নির্দেশে চলে। এদিকে স্কুলটির এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন এর পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এই মামলাটি তদন্ত করছে এবং প্রতিবেদন দাখিলের প্রই বিচার কার্য্য শুরু হবে।