শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আড়াই কোটি টাকা বাণিজ্য !

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আড়াই কোটি টাকা বাণিজ্য ! ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব (বগুড়া): বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া- রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। স্কুল ভবনের নীচতলা মার্কেট করে বানিজ্যিক কেন্দ্রে রুপান্তর ও পজিশন বিক্রি করে এই মোটা অংকের টাকাগুলো হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ম্যানেজিং কমিটির একচ্ছত্র আধিপত্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা সচেতন সমাজ।। এসব অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, উপজেলার আড়িয়া-রহিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ও ম্যানেজিং কমিটি কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্কুল ভবনের নীচতলা মার্কেট নির্মান করে বিদ্যালয়টিকে বানিজ্যিক ভবনে রুপান্তর করেছে। সেখানে ৫৮ টি দোকান ঘরের প্রতিটি দোকান ঘড় থেকে চার লক্ষ থেকে ছয় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে পজিশন বিক্রি করেছে। হিসেব মতে এর পরিমান দাড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়ের টাকা গ্রহন করেছে।

Pop Ads

কিন্তু আদায়কৃত এসব টাকা ওই বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্ট সঞ্চয়ী হিসাব নং ৪২০০০১০০০২৭৯৯ রুপালী ব্যাংক লিঃ বগুড়া ক্যান্ট শাখায় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। যা সম্পুর্ণ বে-আইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির সভাপতি আনিছা খাতুন প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ও সদস্য আরঙ্গজেব বলেন, “ এসব গোপনীয় বিষয়। বিধায় এসব তথ্য জানানো যাবেনা”।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রদত্ত ২০০৯ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন ও বিধানের ৪৫ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, গভর্ণিং বডি বা ক্ষেত্রমত ম্যানেজিং কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল আয় ব্যাংক একাউন্টে জমা করতে হবে এবং উপ-প্রবিধান (৫) এর বিধান মতে সকল দায় ক্রসড চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ধারা ৪৫ এর উপধারা ৪ এ আরও বলা হয়েছে কোনক্রমেই আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না করে নগদে (ঈধংয ঃড় পধংয) ব্যায় করা যাবেনা। এতদাসত্বেও সরকারী বিধান ভঙ্গ করেছে ওই দাপুটে ম্যানজিং কমিটি।

ঘটনার তদন্তে আরও জানাযায়, প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর নিয়োগ অবৈধ ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিেেযাগ এনে ২০০৮ সালে রেজুলেশনের মাধ্যমে সর্ব সম্মতিক্রমে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওরঙ্গজেব ও সদস্যগন। এভাবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ বছর তিনি চাকুরী বঞ্চিত থাকেন।

সহকারি প্রধান শিক্ষক আবদুল মোত্তালিব বলেন, পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এডহক কমিটি তাকে চাকুরীতে পুণঃবহাল করে। কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপন এর বিধানমতে এধরনের কোন বরখাস্তকৃত শিক্ষককে পুণঃবহালের ক্ষমতা এডহক কমিটিকে দেয়া হয়নি। এবিষয়ে উপজেলার মাঝিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম এবং মানিকদীপা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ এর নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, নিয়মিত কমিটি দোষী সাব্যস্ত করে চাকুরী থেকে অব্যহতি দেয়া কোন শিক্ষককে পুণঃবহালের ক্ষমতা এডহক কমিটির নেই।

তারা শুধু দৈনন্দিন কার্যাবলী পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখাযায়, তার নিয়োগও অবৈধ। বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্কুলটির সভাপতি আনিছা খাতুনের ভাই আওরঙ্গজেব ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ায় অর্থনৈতিক লেন-দেন ও সার্বিক সিদ্ধান্ত তারটাই চুড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়। বিদ্যালয়টির আজীবন দাতা সদস্য আবু তালেব জানান, আওরঙ্গজেব পরিবারের ৪ জন এই কমিটির সদস্য। বাকিরা যোগসাজসে অনুগত।

বিধায় একচ্ছত্র আধিপত্যে তিনিই বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। সভাপতি শুধুমাত্র নাম স্বাক্ষর করেন। তিনি আরও বলেন, এই পরিবার কেন্দ্রিক কমিটি কোটি কোটি টাকা বানিজ্য করছে। আর এসব সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ দানা বেধে উঠায় তিনি নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আর এ সংবাদ জানার পর তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা হামলা সহ জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আর ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয়টির সবকিছু আওরঙ্গজেবের নির্দেশে চলে।

শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়টির অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় এশিয়ান টেলিভিশন শাজাহানপুর প্রতিনিধি আবদুল ওহাবকে জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে এবং তথ্য সংগ্রহে বিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যা তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থি।

এদিকে স্কুলটির এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন এর পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, অতি গুরুত্বপুর্ণ এই মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। আর বিদ্যালয়টির দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করতে ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী এলাকাবাসীর।