ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দুটি শব্দ কিন্তু কোন লিমিটেশন নাই : আহম্মেদ আবু জাফর

ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দুটি শব্দ কিন্তু কোন লিমিটেশন নাই : আহম্মেদ আবু জাফর

ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দুটি শব্দ। কিন্তু শব্দ দু’টি ব্যক্তি জীবনে কিংবা সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই শব্দের কালচার বিশেষ করে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু হয়ে সামাজিক কিংবা গোষ্ঠী পর্যায়ে হয়ে থাকে। আর এর প্রভাব শুরুতে ধরা না পড়লে চরম খেসারত হতে পারে। সমাজের মানুষের দ্বারাই অপর মানুষ এরুপ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে নানা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কখনোবা স্বগোত্রীয় মানুষ দ্বারা আবার কখনোই বা পেছন থেকে ক্ষতির চেষ্টা করাই তাদের নেশা। এরুপ কাজের সাথে যারা জড়িত হয় তা ধীরে ধীরে তা আসক্তিতে পরিণত হয়ে ওঠে। সমাজে কিছু মানুষ আছে ঘুম থেকে জাগে পরের ক্ষতির চিন্তা করে আবার ঘুমোতে যায় একই চিন্তা বালিশে মাথা রেখে। এরা সমাজে মানুষ নামের এক প্রকার ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের মত। ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যখন তাদের আসল চেহারা চিনে ফেলে তখন তারা গিরগিটির মত রঙ পাল্টাতে শুরু করে; আবার কখনোবা মুখে মধু আর হাতে তেলের বোতল নিয়ে হাটা শুরু করে।

লোক দেখলেই তারা তৈলমর্দন শুরু করে। তাদের নিজের কোন দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা নেই তারা অন্যের সমালোচনা করে বেড়ায়। অপরকে ঘায়েল করতে সমালোচনা আর কুরুচিপূর্ণ ভাষাই এদের সম্বল। তবে জ্ঞানীরা এদের থেকে দূরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এরা মুখোশধারী হবেন। এদেরকে চিনে নিতে হয়। এরা আপনার সাথে লেগে থেকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করে আপনার ক্ষতি করার উপায়টা খুঁজে নিবে।সবশেষ আপনার দেখানো পথে হেটে সফলতা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠবে। ঠিক কথায় যেমনি বলে ‘ক্ষতি করে কাছের মানুষে ‘ এরা কাছের মানুষ নয়-এরা ষড়যন্ত্রকারী।

Pop Ads

ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত সম্পর্কে বই পুস্তকে তেমন কোন সংজ্ঞা পাওয়া যায়না। তবে সমাজের নানা শ্রেনীপেশার মানুষের দ্বারা মতামত পাওয়া যায়। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের নোংরা কালচারে অনেকের জীবনবিপন্নের ঘটনাও গণমাধ্যমে সাংবাদিকরা প্রকাশিত করে থাকেন। এটি নষ্ট একটি ব্যাধি। সমাজে মাদক কিংবা দূর্ণীতির চেয়েও এটি ভয়াবহ। এদের সম্পর্কে আপনি যদি সচেতন না হন তবে আপনাকে ক্ষতির শেষপ্রান্তে পৌঁছে দিতেই এরা মজা লুটে। ষড়যন্ত্রের জালে আপনি আটকে গেলে এদের মাঝে অট্টহাসির পাখা মেলে। এরা আনন্দিত হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম- বিএমএসএফ’র আইন উপদেষ্টা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এ্যাডভোকেট কাওসার হোসাইনের মতে, দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যখন বেআইনী বা অযৌক্তিক বা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কোন কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ মতামত প্রদান করাকে সাধারনত ষড়যন্ত্র বলা হয়। আর ষড়যন্ত্র মোতাবেক কোন ফৌজদারি অপরাধ করা হলে তাকে বলা হয় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’।

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক ও বাংলাদেশ অটিজম এন্ড ডিজএ্যাবলিটি ইন্সটিটিউের চেয়ারম্যান ডা: জাহিদুল বারীর মতে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে মিথ্যাচার এবং ষঠকারীতার মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ, গোষ্ঠী দল বা মতাদর্শের ক্ষতি সাধন করার অপচেষ্টা। সাধারণত ব্যক্তিগত আদর্শিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রায় সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণিপেশার মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে আসছে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মোটিভেশনাল স্পীকার আফজাল হোসেন’র মতে, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র, এই ঘৃণিত কাজটা মানুষ খুব সাবলীল ভাবে করে তার নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ও নিজের অযোগ্যতাকে আঁড়াল করার জন্য।

আমার কাছে মনে হয় এই কাজ গুলো যারা করে তারা এক ধরণের বিকারগ্রস্থ মানষিক রোগী। আর এই রোগের উৎপত্তি স্থল হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা,পারিবারিক শিক্ষা,ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সুশিক্ষার অভাবে। যদিও আমাদের সমাজে পুঁথিগত শিক্ষা বেড়েছে কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে সুশিক্ষা,মানবীয় চিন্তা,ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধ। আর এভাবে চলতে থাকলে এ পৃথিবীতে মানুষ রূপে অমানুষ এ সয়লাব হয়ে যাবে। জাতীয় সংবাদ সংগ্রহ সংস্থা-এনএনসির চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব মাসুম বিল্লাহর মতে, ষড়=৬ যন্ত্র=মেশিন। পরের ক্ষতি সাধনে ৬ যন্ত্রপাতি নিয়ে অপকৌশলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নামই ষড়যন্ত্র। ৬ যন্ত্র পরিচালক মানে ষড়যন্ত্রকারিদেরকে ইসলামে গশ্বাস বা মুনাফেক বলা হয়। তাদের থেকে সাবধানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং নবী করিম (স:) কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা- এরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে কঠিন আজাব ভোগ করবে।

চট্টগ্রাম বিএমএসএফ’র আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মনজুর আলম রোটারিয়ানের মতে, কারো বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং যড়যন্ত্র কেবল তারাই করে যারা কখনো ঐ ব্যক্তির সম মর্যাদার নয় বা সমাজে বা রাষ্ট্রে ঐ ব্যক্তির সমান হতে পারবে না। যারা কারো বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করে তারা নিজের জীবনে বা পারিবারিক জীবনে বা সামাজিক জীবনে কখনো সফল হতে পারে না। যড়যন্ত্রকারী সবসময় দুশ্চিন্তায় ভোগে। সে একপ্রকার মানসিক বিকারগস্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কিছুই না। জার্মান বাংলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান লিটনের মতে, বিশেষ করে সাংবাদিকরাও ষড়যন্ত্র চক্রান্তের জালে অনেক সময় আটকে যায়। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সাংবাদিক নির্যাতন করা মানে জাতির বিবেককে ধ্বংসের চেষ্টা । তাই নির্যাতন রোধে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত ।

সংশোধন নাট্যভিনেতা রাসেল মিয়ার মতে, একটা ভালো কাজকে কৃতকার্য না হওয়ার জন্য সামান্য কিছু নগদ লাভের জন্য পেছনে যারা অমানুষের মতো কাজ করে তারাই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কারী। এতক্ষন আমরা ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত নিয়ে দিন শেষ করলাম; এভাবে যদি মাসের পর বছর। তাহলে আসুন, হিসেব করি, কতটুকু বাঁচতে চান ? ৬০ বছর? বড়জোর ৭০ নাহয় ৭৫ বছর! খুব লাকি হলে ৮০+! এক বছরে ৩৬৫ দিন হয়! খুব বেশি সময় নিয়ে আসিনিতো! টিক টক করে করে সেকেন্ড কিন্তু চলে যাচ্ছে! মৃত্যু খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে!
টুপ করে হাতে জমে থাকা সব সেকেন্ড , সব দিন শেষ হয়ে যাবে! একজন মানুষের কাছে যখন অফুরন্ত টাকা থাকে তখন তাকে টাকার বিলাসিতা মানায়!

যার কাছে কয়েকশো টাকা আছে তাকে কিন্তু টাকার বিলাসিতা মানায়না! আয়ু যদি কয়েক হাজার বছর হতো তাইলে সময়ের বিলাসিতা আমাদের মানাতো! এতো অল্প দিনের জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, অভিমান, উষ্কানীমূলক কাজ-কর্ম, অন্যের কৃতকর্মকে ঈর্ষা করা, ঋণ পুষে রাখা , সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি, ঘৃণা,কষ্ট, মন খারাপ – এই সব পচা ব্যাপারস্যাপার গুলোতে দয়া করে কেউ সময় নষ্ট কোরো না !ফ্যামিলিকে সময় দাও, ভালো বই পড়ো, টুক করে বেড়িয়ে পড়ো চমৎকার কোন জায়গায়! রাত জেগে আকাশ দেখো! ভোরের সূর্যোদয় দেখো! সন্ধ্যায় পাখিরা কিভাবে ঘরে ফেরে সেটা দেখো!

নদীর ঢেউ অনুভব করো! ভরা পূর্ণিমাতে এবং ভরা অমাবস্যায় তীব্র জোয়ারে ফুঁসে ওঠা সাগরকে দেখো!
প্রতিদিন সময় করে আধাঘন্টা কোন শিশুর সাথে থাকো ! নিষ্পাপ আনন্দের ঔচ্ছল্য দেখো ! প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত একজন মানুষকে ভালো থাকার রসদ যোগাও! স্রষ্টাকে মনেপ্রাণে স্মরণ করো কাউকে প্রাণ ভরে ভালবাসো, কাউকে ভালবাসার সুযোগ করে দাও। পৃথিবী কতো সুন্দর সেটা ফীল করো নি:শ্বাস কতোটা সুন্দর সেটা অনুভব করো । চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। শিকারীর মনকে বুঝতে শেখো। কতটা দিনই বা বেঁচে আছি! ‘শত্রু বানানোর জন্য মারপিট করতে হবে না।

শুধু তুমি ভালো কাজ করো দেখবে তোমার শত্রুর অভাব হবে না’।তাই, আহমেদ আবু জাফরের শেষ কথাটা এমনও হতে পারে ‘জেনে শুনে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিওনা কারন মৃত্যুর আগে হয়তো মাফ চাওয়ার জন্য তাকে আর খুঁজে পাবেনা’।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও আহমেদ আবু জাফর,
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম- বিএমএসএফ,
কেন্দ্রীয় কমিটি। ১৬ জানুয়ারী ২০২২ খ্রী: