স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক হক ও মর্যাদা

স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক হক ও মর্যাদা। প্রতিকী-ছবি

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অন্যের নিকট অধিকার দাবী কর এবং আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে সচেতন থাক। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ-১) হুজুর (সাঃ) এই আয়াত বিয়ে-শাদীতে পাঠ করতেন। তাই বিবাহের খুতবায় উক্ত আয়াত পাঠ করা সুন্নাতও বটে।

আয়াতের তাৎপর্য সহজতর। অন্য আয়াতে বলেন, আাল্লাহর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের স্বজাতি থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যেন তাদের কাছে তোমরা পরম শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারো। (সূরাঃ রুম, আয়াতঃ-২১) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিবাহের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ করেন, বিবাহ করা আমার সুন্নাত ও আদর্শ। অতএব, যে ব্যক্তি আমার এ সুন্নাত ও আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। (মিশকাত) অন্যত্র বলেন, যার স্ত্রী নেই, সে গরীব, গরীব এবং গরীব। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে যদি অধিক ধনবান হয়? তিনি বললেন, সে সম্পদশালী হয়ে থাকলেও স্ত্রী ছাড়া সে দরিদ্র। এরপর নবীজি (সাঃ) বললেন, যে নারীর স্বামী নেই সে মিসকীন, মিসকীন এবং মিসকীন।

Pop Ads

সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি তার অনেক ধন-সম্পদ থাকে? তখন তিনি বললেন, তবুও সে নারী স্বামী ছাড়া মিসকীন। (গুনিয়াতুত তালেবীন) বিবাহ হচ্ছে একটি পবিত্র, নন্দিত ও মার্জিত জীবনবন্ধন। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে পারস্পারিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ইসলাম মানব-মানবীর যৌন চাহিদাকে চরিতার্থ করার জন্য বিবাহের মত সুন্দর উত্তম বিধানের ব্যবস্থা করেছে। নারী-পুরুষের যৌন কামনা চরিতার্থ করার একমাত্র বৈধ প্রক্রিয়াই হচ্ছে বিবাহ।

নৈতিককতার লালন এবং মানব জাতির চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন বিবাহের মাধ্যমেই সম্ভব। বৈবাহিক সম্পর্ক পরষ্পরের ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা এবং একাত্মতায় পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তা ব্যতীত বৈবাহিক সম্পর্কে প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, মুসলমান বিবাহের জন্য দ্বীনদার ও সৎ স্ত্রীর অনুসন্ধান করবে, যাতে করে সে তার ধর্মীয় ব্যাপারে সাহায্যকারিণীর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে করে তাদের সন্তানদেরও দ্বীনদার হওয়ার সুযোগ মিলবে। (মাআরিফুল কুরআন)।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর প্রবর্তিত ধর্মই মানুষকে মানুষের মর্যাদা দান করতে শিক্ষা দিয়েছেন। ন্যায়-নীতির সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন, পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী….। (সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ-২২৮) প্রসঙ্গত, দুনিয়াতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নারী ও সম্পদ এমন জিনিস যা গোটা পৃথিবীর অস্তিত্ব, নির্মাণ এবং উন্নয়নের স্তম্ভস্বরূপ। আবার এ মুদ্রার অপর পিঠে তাকালে দেখা যাবে দুনিয়াতে যত দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রক্তপাত ও অশান্তির কারণ, তার মূলেও এদুটো বস্তুই। অর্থাৎ এ দুটো জিনিসের সঠিক ব্যবহারে সুফল মিলবে, আর হেরফের হলে হবে সর্বনাশ।

তাই দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় ও সুখময় করে তুলতে হলে শুধু নিজের অধিকার দেখলেই হবে না, বরং উভয়কে নিজ নিজ দায়িত্বও পালন করতে হবে। কেহ যদি শুধু নিজের অধিকার দেখে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে যতœবান না হয়, তাহলে সংসারে সুখÑশান্তি আসবে না। তাই আমলের সুবিধার্থে আজ আমি স্বামী-স্ত্রীর কয়েকটি হক বা অধিকার সম্পর্র্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। যাতে আমাদের বৈবাহিক জীবন সুখময় ও পরম শান্তিময় হয়।

স্ত্রীর হক সমূহঃ (১) মোহর আদায় করাঃ মোহর স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। এটা পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরী। মোহর অবশ্য পরিশোধ্য একটা ঋণ বিশেষ। যা সন্তুষ্ট চিত্তে তার হাতেই অর্পন করা কর্তব্য। এমনকি স্বামী মোহর প্রদান করা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর মোহর আদায় করতে হবে। তাই নাম-যশের জন্য অতিরিক্ত মোহর ধার্য করা অপছন্দনীয়। স্ত্রী স্বামীকে মোহর মাফ করলে ভিন্ন কথা। তাছাড়া স্বামী যদি স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বা লজ্জায় ফেলে অথবা অন্য কোন অসুদপায়ে স্ত্রীর অনিচ্ছায় মোহর মাফ করিয়ে নেয়, তবে সে মোহর মাফ হবে না। এমনকি যদি বিবাহের সময় মোহরের কথা উল্লেখ করা না হয় তবুও স্ত্রী মোহরে মেসেল বা খান্দানী মোহরের হকদার হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ-৪)

(২) সমতা রক্ষা করা। একাধিক স্ত্রী থাকলে ভরণ-পোষণ রাত্রি যাপন ইত্যাদি বিষয়ে অবশ্যই পালা বন্টন এবং ন্যায়বিচার করতে হবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যখন কোন ব্যক্তির নিকট দু’জন স্ত্রী থাকে আর সে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার না করে, তবে কিয়ামতের দিন সে বিকলঙ্গ হয়ে উঠবে। (মিশকাত) তবে মনের টান কারও প্রতি কম বেশী হলে সেটার জন্য স্বামী দায়ী নয়, কেননা সেটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর বিবিদের মধ্যে পালা বন্টন করতেন এবং ন্যায়বিচারের চেষ্টা করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি অনুসারে পালা বন্টন করলাম, সুতরাং যাতে আমার কোন শক্তি নাই, শুধুমাত্র তোমারই শক্তি রয়েছে, সে বিষয়ে তুমি আমাকে র্ভৎসনা কর না। (তিরমিজি)

(৩) সদাচারণ করাঃ স্বামীর কাছ থেকে সদ্ব্যবহার ও সদাচারণ পাওয়াও স্ত্রীর অধিকার। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ওই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর জন্য ভালো। (তিরমিজি) অন্য বর্ণনায় আছে, নারীকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে তোমার জন্য কখনো সোজা হবে না। যদি তুমি তার দ্বারা কাজ নিতে চাও, ওই বাঁকা অবস্থাই কাজ নিতে পারবে। কিন্তু যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর এই ভাঙ্গা হল তাকে তালাক দেওয়া। সুতরাং তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (মুসলিম)

(৪) কুধারণা ও দোষ না খোঁজাঃ স্ত্রীর চরিত্রের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ বা কুধারণা না রাখা গোপন দোষ অনুসন্ধান না করা, এবং কারও সুম্মখে স্ত্রীর সমালোচনা না করা কর্তব্য। তবে স্ত্রীর ব্যাপারে একেবারে উদাসীন না হওয়া চাই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেহ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। (সূরাঃ হুজুরাত, আয়াতঃ-১২) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেন, তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা মিথ্যা কথারই নামান্তর। (মিশকাত)

(৫) গোপন বিষয় প্রকাশ না করাঃ স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের দাম্পত্য জীবনের মধ্যে যৌনজীবন সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয় নিজেদের মধ্যে আমানত। এ আমানত কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে। নতুবা কিয়ামতের দিন কঠিনভাবে জবাবদিহি করতে হবে। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা মন্দ সেই ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রীর নিকট যায় এবং স্ত্রী তার নিকট আসে আর সে এই গুপ্ত কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। (মুসলিম)

(৬) প্রয়োজন মত সহবাস করাঃ প্রয়োজন অনুপাতে স্ত্রীর সাথে সংগম করা স্ত্রীর অধিকার। প্রতি চার মাসে অন্তত একবার স্ত্রীর সাথে যৌন সংগম করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। (কিতাবুল ফিকাহ)

(৭) স্ত্রীর ভুল-ত্রæটি ক্ষমা করাঃ সীমালংঘনের পর্যায়ে না হলে স্ত্রীর ভুল-ত্রæটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, “ওয়া লিররিজালি আলাইহিন্না দারাজাহ” অর্থাৎ পুরুষের মর্যাদা নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশী” এ আয়াতের ব্যখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে স্ত্রীলোকের তুলনায় কিছুটা উচ্চমর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তাই তাদের অতি সতর্কভাবে ধৈর্যের সাথে কাজ করা আবশ্যক। যদি স্ত্রীলোকের পক্ষ থেকে কর্তব্য পালনের ব্যপারে কিছুটা গাফেলতীও হয়ে যায়, তবে তারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তা সহ্য করে নেবে এবং স্ত্রীলোকের প্রতি কর্তব্য পালন করার ব্যাপারে মোটেই অবহেলা করবে না। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন, কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে যেন শত্রæ না ভাবে। কেননা যদি সে তার একটি কাজে অপছন্দ করে, তাহলে অপর কাজকে পছন্দ করবেই। (মুসলিম)

(৮) ভরণ-পোষণ দেওয়াঃ হালাল মাল দ্বারা স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর উপর ওয়াজিব। স্বামীর স্বচ্ছলতা যেরূপ সেই মানের ভরণ-পোষণ দেওয়া কর্তব্য। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজে¦র সময় বলেছেন, হে মুমিনগণ তোমাদের উপর স্ত্রীদের হক হল তোমরা ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে বাসস্থানসহ। (মুসলিম)

স্বামীর হকসমূহঃ (১) স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করাঃ স্বামীর অনুগত হওয়া এবং তাঁর খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজিব। আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পরে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকারই সবচেয়ে বেশী। স্বামীকে কি পরিমাণ মান্য করা দরকার তা নিচের হাদিস দ্বারা অনুমেয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে প্রত্যেক স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। স্বামী যদি তাকে হলুদ পাহাড় থেকে কালো পাহাড়ে এবং কালো পাহাড় থেকে সাদা পাহাড়ে পাথর স্থানান্তর করতে বলে তবে তার তা-ই করা উচিত। (তিরমিজি) অন্য বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, স্ত্রীলোক যখন পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়বে, রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং নিজের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে ও স্বামীর অনুগত থাকবে, তখন সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে। (মিশকাত) তবে স্ত্রী কোন পাপ কাজে স্বামীর আনুগত্য করবে না।

(২) স্বামীর অপছন্দনীয় কিছু না করাঃ স্বামী অপছন্দ করে এমন কোন কথা বা কাজ না করা উচিত। স্বামী পছন্দ করে না এ রকম কোন পুরুষ বা নারীকে ঘরে না আনা এবং না আসতে দেওয়া কর্তব্য। বিদায় হজে¦ বিশ^নবী (সাঃ) বলেন, তোমরা নরীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর কালেমা পড়ে তাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের হক হল, তারা যেন তোমাদের অন্দর মহলে অপর কাউকে যেতে না দেয়, যা তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা তা করে, তবে তাদেরকে মারবে, হাল্কা মার। (মুসলিম)

(৩) সতীত্ব রক্ষা ও স্বামীর মাল হিফাজত করাঃ স্বামীর ধন-সম্পদ হিফাজত ও সংরক্ষণ করা এবং নিজের বিষয়ে খিয়ানত না করা স্ত্রীর দ্বায়িত্ব। স্ত্রীর সতীত্ব স্বামীর সম্পদ, সুতরাং সতীত্ব রক্ষা না করলে যিনার মত জঘণ্য অপরাধ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে আছে স্বামীর অধিকার লংঘনের মারাত্মক অপরাধ। হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মুমিন বান্দা তাকওয়া অর্জনের পর নেক স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম কোন জিনিস সে লাভ করতে পারে না। স্বামী যদি তার নিকট থেকে দূরে চলে যায়, তবে সে নিজের বিষয়ে ও স্বামীর মালের বিষয়ে মঙ্গল কামনা করে। (ইবনে মাজাহ) অর্থাৎ কোন রকম খিয়ানত করে না।

(৪) স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণ করাঃ স্বামী সংগমের জন্য আহবান করলে এবং শরীয়তসম্মত ওজর না থাকলে স্ত্রীর জন্য তাতে সাড়া দেওয়া অবশ্য কর্তব্য-ফরজ। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যে কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তা অস্বীকার করে, তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনি তার প্রতি নারাজ থাকেন, যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়। (মিশকাত) হযরত তালক ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের প্রয়োজনে ডাকে, তখন সে যেন তার ডাকে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলার কাছে থাকে। (তিরমিজি)

(৫) সেজে-গুজে, হাসি-খুশি থাকাঃ স্বামীর উদ্দেশ্যে সেজে-গুজে পরিপাটি হয়ে থাকা এবং হাসি-খুশি থাকা বাঞ্জনীয়। এটা স্বামীর হক। হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, উত্তম নারী সেই, যার দিকে স্বামী তাকালে সে তাকে খুশী করে দেয়, আর যদি তাকে লক্ষ্য করে কোন শপথ করে তবে সে তা র্পূণ করে। (মিশকাত)

(৬) সন্তানাদি লালন-পালন করাঃ বাচ্চাদের লালন-পালন করা স্ত্রীর কর্তব্য এবং স্বামীর অধিকার। সন্তানকে দুধ পান করানো মায়ের উপর ওয়াজিব। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন, আরবের নারীদের মধ্যে উত্তম নারী হল কুরাইশী নারী। কারণ, তারা সন্তানদের শিশুকালে বাচ্চাদের প্রতি হয় বড়ই ¯েœহশীল। আর স্বামীর মালের প্রতি হয় রক্ষক। (বুখারী, মুসলিম)

(৭) অন্যায় আবদার না করাঃ স্বামীর নিকট তাঁর সাধ্যের বাইরে কোন খাবার অথবা পোশাকের আবদার না করা। স্বামীর সামর্থের প্রতি খিয়াল রেখে সংসারের ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। বরং স্বামীর সাধ্য সমর্থ থাকলেও কোন কিছুর আদেশ-ফরমায়েশ না করাই উত্তম। স্বামী নিজের থেকেই তার খাহেশ জিজ্ঞাসা করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা করবে-এটাই সুন্দর পন্থা। এতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। যা সকলেরই আকাংখা। (কিতাবুল ফিকাহ্)

(৮) অসম্মান না করাঃ স্বামীর আদব-সম্মান রক্ষা করে চলা এবং বে-আদবী না করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীকে শক্ত ও ঝাঁঝালো কন্ঠে কথা না বলা। বরং নরম-কোমল ভাবে কথা বলা। স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া স্বামীর মেজায ও মানসিক অবস্থা বুঝে চলা। স্বামীর ঘরের রান্না করা, কাপড় পরিস্কার করা ইত্যাদি স্ত্রীর নৈতিক কর্তব্য। (আহকামে যিন্দেগী)