কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ!

54
কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ!

আকাশে মেঘ দেখলেই ডিএনডি ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার আতঙ্কে ভোগেন। গত সপ্তাহে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ডিএনডির বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানিতে চরম বিপাকে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকায় ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। বসতবাড়ির চারপাশে পানি থাকায় অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার সম্ভাবনা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানায়, ডিএনডি বাঁধের ভেতরের এসব এলাকাগুলো সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি বের হতে প্রতিবন্ধকতা থাকায় বছরে বেশির ভাগ সময়ে এসব এলাকার কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা থাকে। সম্প্রতি সময়ে বৃষ্টির কারণে পুরো এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ডিএনডি অভ্যন্তরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বসতি স্থাপনের ফলে এ অঞ্চলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে। দীর্ঘদিনের জঞ্জাল অল্প সময়ে দূর করা সম্ভব নয়। ফলে ভোগান্তি সহসাই শেষ হচ্ছে না।

Pop Ads

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফতুল্লার কুতুবপুরের দৌলতপুর, আদর্শনগর, মুন্সীবাগ এলাকার বসতবাড়ীতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পানি বন্দী জীবনযাপন করছে। বাড়ীর আঙিনা, রান্না ঘর, টিউবওয়েল, বাথরুম পানির নিচে তলিয়ে আছে। এখানেই শেষ নয়, এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ভাড়াটে শূন্য এসব এলাকার বসতবাড়ি। কৃত্রিম জলাবদ্ধতার ফলে প্রভাব পরেছে এলাকার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডেও।

দৌলতপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, ‘আমরা সারা বছরই পানি বন্দী থাকি। এলাকায় চলাচলের রাস্তা পানির নিতে তলিয়ে থাকে। বসতবাড়ি এমনকি বসত ঘরেও পানি প্রবেশ করে। পচা, দূর্গন্তময় পানির সাথে আমাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এসব দেখার এখন আর কেউ নেই। ফলে বাধ্য হয়েই আমরা পানি বন্দী জীবনযাপন করছি। আদর্শনগরের বাসিন্দা মিজান জানায়, আমাদের এলাকায় বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের রাস্তা, বসতবাড়ি কিংবা বসতঘরেও পানি উঠে যায়। এসব পানি পঁচে দুর্গন্ত সৃষ্টি হয়। ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পানি বন্দী মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমড়া এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তার কোথায় কোমর পানি, কোথাও হাঁটু পানির নিচে চলে গেছে। এছাড়া বসতবাড়ী, বসতঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। শুধু রাজধানীর এসব এলাকাতেই নয়, পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এই ইউনিয়নের শহীদ নগর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শ নগর, নূরবাগ, পিলকুনী, তক্কার মাঠ সহ আশপাশের প্রায় বেশ কয়েকটি গ্রামে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পানিতে।

ঘরবন্দী মানুষ জীবন যাপন করে চলেছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। কুতুবপুর ইউনিয়নে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। ড্রেন ব্যবস্থা না থাকার কারণে অল্প সময়ে তলিয়ে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। নয়ামাটি থেকে পাগলা যাওয়ার প্রধান সড়কটি নয়ামাটি এবং পাগলা স্কুল কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সামনে প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ, প্রতিদিনের চলাচলের প্রধান সড়ক একটু বৃষ্টি হলেই এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই রাস্তায় যাতায়াতরত স্কুল কলেজে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষদের। অন্যদিকে ফতুল্লা পৌষারপুকুর পাড়, গাবতলী তাগারপার, আজমেরীবাগ, সস্তাপুর, লালখাঁ এলাকা জুড়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ডোবা, নালা ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে বের হতে পারছে না।

ফলে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় এসব এলাকা। বসতবাড়িতেও পানি থাকে বছর জুড়ে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক এলাকায়। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে ময়লা পানিতে। এলাকায় গিয়ে মানুষের বসতবাড়িতে পানি দেখা গেছে। ময়লা পানিকে সঙ্গী করেই এই এলাকার মানুষের বসবাস করেন। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

কয়েক মাস আগে ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতার খবরে এলাকাবাসীর কাছে ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘পানিটা সাদা হলে ব্যাপার ছিল না। এটা পানি না, এটা হচ্ছে একটা বিষাক্ত পদার্থ। এই পানির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ময়লা থেকে আরম্ভ করে এমন কোন বিষাক্ত পদার্থ নাই এই পানির সঙ্গে মিশে না আছে। আমার এলাকার ৩০-৪০ লাখ লোক এই পানির ভেতরে থাকে ও তারা পানি বন্দী অবস্থায় আছেন।

এই পানি যদি কমপ্লিটলি (সম্পূর্ণভাবে) অপসারণ না করা যায় এবং করা না হয় তাহলে আমার একটাই পথ থাকবে, আমি এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে ওই ময়লা পানির বর্জ্যের মধ্যে নেমে অবস্থান ধর্মঘট করবো। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আমার প্রত্যাশা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। ডিএনডি প্রজেক্টের জন্য ১২০০ ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানান, পানি নিষ্কাশনে এরই মধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যভাগে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।