শহর কক্সবাজারে রেলের যাত্রা

63
শহর কক্সবাজারে রেলের যাত্রা

বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে এখন ট্রেনে করেই যাওয়া যাবে। রেললাইনের দুই পাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে কক্সবাজারে পৌঁছে যাবেন পর্যটকেরা। ভাড়াও থাকবে সহনীয় পর্যায়ে। এত দিন ধরে এই শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল সড়কপথ। সরু মহাসড়ক হওয়ায় সে পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত যাত্রীদের। ছিল দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের ঝুঁকি ও ঝক্কিঝামেলা। নতুন রেললাইনের মাধ্যমে যাত্রা হবে এখন আগের চেয়ে আরও স্বস্তির, আনন্দের।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আজ শনিবার নতুন নির্মিত রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্য ১৫ কোচের একটি বিশেষ ট্রেন ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদরের আইকনিক স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত হবে কক্সবাজার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের (ফার্স্ট ট্র্যাক) অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকল্প।

Pop Ads

পর্যটকদের আকর্ষণে ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদরে ‘ঝিনুক’-এর আকৃতিতে আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ফুটে উঠেছে কক্সবাজারের ঐতিহ্য। পর্যটকেরা চাইলে নিজেদের লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সৈকতে ঘুরে আসতে পারবেন।

ট্রেন চলাচল শুরু হলে কক্সবাজারের পর্যটন খাতের চিত্র পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে নতুন রেলপথটি।

নতুন রেলপথে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ডিসেম্বরে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। অবশ্য ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর রেলপথে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার। শুরুতে অবশ্য ট্রেন চলবে ৬০ কিলোমিটার গতিতে। চট্টগ্রাম থেকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগবে। আর ঢাকা থেকে যাতায়াতে লাগবে ৮ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে বাণিজ্যিক দূরত্ব হচ্ছে ১৮৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেনে করে যেতে লাগবে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা।

এখন বছরজুড়ে পর্যটকের ভিড় থাকে কক্সবাজারে। বছরে ঘুরতে আসেন প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক। সমুদ্রসৈকতের এই শহরে রয়েছে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস এবং সাত শতাধিক রেস্তোরাঁ। পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নতুন রেলপথ।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তা অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। কেননা, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছরই বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। তাঁদের বেশির ভাগই যাতায়াত করেন বাসে। অনেকে উড়োজাহাজে চলাচল করেন, তবে এ রকম পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম।

আবার বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সরু হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় পর্যটক ও যাত্রীদের। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে অনেকেই ট্রেনে করে যাওয়া-আসা করবেন। পর্যটকদের আকর্ষণে ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদরে ‘ঝিনুক’-এর আকৃতিতে আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ফুটে উঠেছে কক্সবাজারের ঐতিহ্য। পর্যটকেরা চাইলে নিজেদের লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সৈকতে ঘুরে আসতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে বাণিজ্যিক দূরত্ব হচ্ছে ১৮৯ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেনে করে যেতে লাগবে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এসি বার্থ (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) শ্রেণির জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৬ টাকা। শোভন চেয়ারের জন্য ভাড়া ২০৫ টাকা। এসি চেয়ারের জন্য ৩৮৬ টাকা এবং এসি সিটের জন্য ৪৬৬ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৮ টাকা। আর এসি বার্থের জন্য ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৭২৫ টাকা, এটা এই রুটে সর্বোচ্চ ভাড়া। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান রেলসচিব মো. হুমায়ুন কবীর। এই সময় তিনি জানান, ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে।

লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির আসন) চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা। মেইল ট্রেনের জন্য তা ৭০ টাকা। এ ছাড়া কমিউটার ট্রেনে করে গেলে দিতে হবে ৮৫ টাকা।

ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ছাড়বে বেলা ১টায়, আর ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে।

বাসের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক সহনীয়, অনেক ক্ষেত্রে বাসের তুলনায় অর্ধেকের কম। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নন-এসি বাসের ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সম্প্রতি আনা নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা থেকে একটি বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এই ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ছাড়বে বেলা ১টায়, আর ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫৫, সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা
দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. সবুক্তগীন প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন শহর কক্সবাজারকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে ট্রেনের মাধ্যমে যুক্ত করছে। কক্সবাজারে আগে রেললাইন ছিল না। এই প্রকল্পের আলাদা কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এটি নতুন একটি জেলাকে সংযুক্ত করল। দ্বিতীয়ত, পর্যটন নগরকে যুক্ত করল এবং পরবর্তী সময়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকেও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।