আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা খারকিভে

41
আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা খারকিভে

রুশ হামলা থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিনব পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। এমতাবস্থায় দেশটিতে প্রথম বারের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুল নির্মাণের চিন্তা করছে সরকার। এদিকে ইউক্রেনে আরো মার্কিন সামরিক সহায়তার কঠোর সমালোচনা করেছে মেক্সিকো।

রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে খারকিভ শহরের অবস্থান। পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরটিতে এ ধরনের স্কুল নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। শহরের মেয়র ইহোর তেরেকোভ বলেন, রুশ বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতেই এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে কারণে প্রায় প্রতিদিনই শহরটিতে হামলা চালাচ্ছে মস্কো। অনেক সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রেও যাওয়ার সময় পায় না স্থানীয় নাগরিকরা। মেয়র ইহোর তেরেকোভ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেন, আমরা ইউক্রেনে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুল তৈরি করার পরিকল্পনা করেছি।

Pop Ads

তিনি বলেন, এই আশ্রয়স্থল খারকিভের হাজার হাজার শিশুকে ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি থেকে নিরাপদ রাখবে এবং তারা শিক্ষাগ্রহণ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে স্কুলটি কবে নাগাদ খুলবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি ইহোর তেরেকোভ। তিনি আরো জানান, তহবিলের ঘাটতি থাকলেও খারকিভ কর্তৃপক্ষ ২০২৩ থেকে ২০২৪ সময়কালে শিক্ষার ব্যয় কমাবে না। যুদ্ধের কারণে সম্মুখ সারিতে অবস্থিত বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলো অনলাইনে পাঠদানে বাধ্য হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর নতুন বছরের ক্লাস শুরুর আগে মেট্রো স্টেশনগুলোতে প্রায় ৬০টি আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করেছে খারকিভ। এতে ১ হাজারেরও বেশি শিশু নিরাপদে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে।

ইউক্রেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর থেকে ৩৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ৩ হাজার ৮০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী জনসংখ্যা ছিল ১৪ লাখের বেশি। খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনেহুবভ বলেন, রাশিয়ার গোলাবর্ষণ এবং রকেট হামলার ফলে সোমবার এক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার কঠোর সমালোচনা করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসন প্রতিরোধে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে তহবিল বরাদ্দসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এই সহায়তা ইউক্রেনকে বেশ সহায়তাও করছে। তবে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার কঠোর সমালোচনা করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। এমনকি এই সহায়তাকে তিনি ‘অযৌক্তিক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর সোমবার ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার তীব্র সমালোচনা করেন। এটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে যুদ্ধ চেষ্টার সমালোচনাও করেন তিনি। এছাড়া কিয়েভের পরিবর্তে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য ওয়াশিংটনকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান লোপেজ ওব্রাডোর। প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডোর দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসী চাপ কমাতে মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আরো তহবিল বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে লোপেজ ওব্রাডোর ইউক্রেনকে সহায়তায় বাধা সৃষ্টি করা স্টপগ্যাপ তহবিল বিল নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, আমি শুধু দেখছিলাম কীভাবে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সাহায্য অনুমোদন করছে। এতদিন তারা ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সেখানে পাঠিয়েছে? তিনি আরো বলেন, তাদের নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে এবং অন্যদের সম্মান করা শিখতে হবে। এখন মেক্সিকান কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করা উচিত নয় তাদের। মেক্সিকোতে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাত্ক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই বামপন্থি লোপেজ ওব্রাডোর মেক্সিকোকে নিরপেক্ষ রাখতে চেয়েছেন এবং কিয়েভে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তার সমালোচনা করেছেন। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি আলোচনারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।