বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যাংক খাত

10
বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যাংক খাত

ব্যাংক খাত হলো অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু সীমাহীন অস্বস্তি, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর অনিশ্চয়তার গভীর অন্ধকারে কেটেছে এই খাতের পুরো একটি বছর। করোনা আর ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হলেও তা ছাপিয়ে নিজস্ব দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে সময়ের সঙ্গে।

মুদ্রার মজুত আর ডলারের দর নিয়ে আগের বছরের জের টানতে টানতেই শুরু হয় ২০২৩। যেখানে রোগ সারাতে নানামুখী দাওয়াই নিয়ে হাজির হয় আইএমএফ। শর্তের লম্বা ফর্দ আর শাসন-অনুশাসনের চোখ রাঙানির মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয় পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ। যাতে কিছুটা হাসি ফোটে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

Pop Ads

ঋণ অনুমোদনের মাস খানেক পর অব্যাহতভাবে ক্ষয় হতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে জমা হয় আইএমএফের প্রথম কিস্তি। যেনো ডুবতে থাকা জাহাজকে টেনে তোলার সামান্য চেষ্টা। তবুও রক্ষা হয় না সম্পদ। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় মাসে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার হারে বিক্রি করতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

এমন অবস্থার মধ্যে নতুন দুঃসংবাদ নিয়ে হাজির হয় ব্যাংকখাতের ক্যান্সারখ্যাত খেলাপি ঋণ। যা কমাতে উদ্যোগের বদলে উল্টো উৎসাহ অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুনত্ব আসে না ব্যাংক কোম্পানি আইনেও।

বছরজুড়ে চড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে পারার ব্যর্থতায় আঙুল তোলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে। নয়-ছয়ের বৃত্তে আটকে থাকার সমালোচনাও হয় সমানতালে। তাই বহুমুখী চাপে থাকা গভর্নর বাক্স থেকে বের হয়ে সাহসী সিদ্ধান্তের আভাস দেন মুদ্রানীতি ঘোষণায়। কিন্তু তাতেও বদলায় না পরিস্থিতি।

সংকট উত্তরণে একগুচ্ছ প্রত্যাশার খবর নিয়ে সংসদে হাজির হন অর্থমন্ত্রী। উচ্চাভিলাষী হিসাব দেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলারের দর আর বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের। বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ভারতের সঙ্গে চালু করা হয় দু-দেশের মুদ্রায় বাণিজ্য। নতুন উৎসের খোঁজে ছুটাছুটি চলে এদিক-ওদিক।

আগস্টে হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় নগদ ডলার। চাহিদা আর জোগানের সংকটে প্রতি ডলারের জন্য গুণতে হয় ১২৫ টাকা পর্যন্ত। বাতিল করা হয় ৭ মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স। একে অপরের ওপর দোষারোপ আর দর বেঁধে দেয়ার প্রতিযোগিতা চলে দিনের পর দিন।

সংকট বাড়তে থাকায় বছরের শেষ প্রান্তিকে আবারো উত্তপ্ত হয় ডলারের বাজার। বেশি দামে কেনাবেচার অভিযোগে জরিমানা করা হয় ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে। এসবের মধ্যে অক্টবরের শেষে অনুমোদন দেয়া হয় ৮টি ডিজিটাল ব্যাংকের।

আর্থিক টানাটানি আর অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিন পার করতে করতে সময় ঘনিয়ে আসে আইএমএফ দলকে জবাবদিহি করার। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে থাকে দলটি। রাজস্ব আয়, রিজার্ভসহ নানা শর্ত পূরণ না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয় দিন দিন। এমন আশঙ্কার মধ্যেও ছাড় হয় প্রায় ৬৯ কোটি ডলারের দ্বিতীয় কিস্তি।

বছরজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়া ইসলামী ব্যাংকগুলোর ঋণ কেলেঙ্কারির ধারা অব্যাহত থাকে শেষ দিকে এসেও। টাকার অভাবে ধুঁকতে থাকা পাঁচ ব্যাংককে দেয়া হয় শর্তপূরণের নোটিশ। ১১ বছরের মধ্যে নতুন উচ্চতায় উঠে যায় কলমানির সুদহার। আর শেষদিকে এসে ডুবে যাওয়া ন্যাশনাল ব্যাংককে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে ভেঙে দেয়া হয় পরিচালনা পর্ষদ। এর মাধ্যমেই শেষ হয় আলোচিত খাতের আরেকটি সমালোচিত বছর