আতিকের প্রতারণার তথ্য পেল পুলিশ!

আতিকের প্রতারণার তথ্য পেল পুলিশ!

সুপ্রভাত বগুড়া (নিজস্ব প্রতিবেদক): রাজনৈতিক নেতা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গল্প সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে মামলা দায়েরের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন কথিত ডিজিটাল প্রতারক আতিকুর রহমান ঘটক আতিক। অনলাইনে আলোচিত এই প্রতারক রাজধানীর শাহবাগ থানায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারী একটি জিডি করার পরপরই পুলিশের কাছে অপকর্মের তথ্য আসতে শুরু করেছে।

সে নিজ এলাকা পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ছোটশিবা এলাকায় সবুজ নামেও পরিচিত। তার পিতা গ্রাম্য চৌকিদার হাবিবুর রহমান। অথচ সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেও পরিচয় দেয়। তবে আতিকুর রহমান যে জিডি করেছে, তার সত্যতা পায়নি পুলিশ।

Pop Ads

বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ জানান,  জিডির বাদী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য পেয়েছি। তাতে আমারও ধারণা, সে প্রতারক! আতিকুর রহমানের জিডিতে উল্লেখিত ঘটনার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতর থেকে অপহরণের চেষ্টা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করেছে আতিকুর রহমান। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা কেউই ঘটনার সময় প্রেস ক্লাব এলাকায় ছিলেন না।
সাংবাদিক নেতারা বলছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতর কেন! বাইরেও যদি এমন ঘটনা ঘটে সেসময় পুলিশ কি চুপ ছিল? সিসি ফুটেজ দেখুন।

এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ এবং প্রেস ক্লাব নেতারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতেন। সাংবাদিকরা কি কাউকে অপহরণ বা কারো ওপর হামলা করতে প্রেস ক্লাবে আসে? সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জিডি নেওয়ার আগে খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বলেন, জিডি করেছে! প্রমাণ তো পাইনি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া না গেলে আতিকুরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্যমতে, ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বা সংস্থা নামে সংগঠনের সরকারি অনুমোদন নেই। নামমাত্র নামের আবেদন করে আবেদন নম্বরকেই রেজিষ্ট্রেশন নম্বর হিসেবে ব্যবহার করছে। ভুয়া ঠিকানা সহ ভুয়া সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক পরিচয়ে জিজিটাল প্রতারক আতিকুর রহমান ২০১৫ সাল থেকে সারাদেশে অপকর্ম করে চলেছে।

সংগঠন ও পত্রিকার আইডি কার্ড বিক্রি করাই বড় ধান্দা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নামেও বখরা আদায় করে এই ঘটক আতিক। গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগে প্রতারক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। প্রতারকদের ব্যবহৃত ঠিকানা রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের বুশরা ক্লিনিকের ৫ম তলা। অথচ সেখানে তাঁদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে মানবাধিকার চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক সংগঠনের চেয়ারম্যান পরিচয়ে ফোন করে আতিকুর রহমান অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলেও প্রমাণ মিলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আতিকের ফোন রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে।

আতিকুর রহমান সবুজ পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার একটি অপহরণ মামলা ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার একটি মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক। নওগাঁয় রয়েছে অপহরণ মামলা এবং এক সংবাদকর্মী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক মামলা করেছেন। রাজধানীর মিরপুর, কদমতলী, তুরাগ, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, কুমিল্লার হোমনা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানা সহ সারাদেশে প্রায় দুই ডজন জিডি রয়েছে এই প্রতারকের বিরুদ্ধে।

এসব নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করায় সংবাদকর্মীদের বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করছে ডিজিটাল প্রতারক চক্র। রাজনৈতিক নেতা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গল্প সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে মামলা দায়েরের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। সংবাদকর্মীদের ছবি ব্যঙ্গ, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সহ নানাভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

অপপ্রচারের সাথে যাঁরা সম্পৃক্ত রয়েছে প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আসবে জানিয়েছেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাসান শামীম ইকবাল। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার চিংলা মোড়ের নুর ইসলামের ছেলে মামুন হোসেন বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা বলে মিরপুর-১০ নম্বরের বুশরা ক্লিনিকের ৫ম তলায় ডেকে নিয়ে আমার কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা ও কয়েকটি সাদাস্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে প্রতারক আতিকুর ও তার সহযোগীরা।

কয়েকদফায় ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই সাদাস্ট্যাম্পে আমার সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার হুমকি সহ মিথ্যা মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়েছে। ফোনের অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। এ ঘটনায় ০৫/০২/২০২০ ইং তারিখে আমি দামুড়হুদা থানার জিডি নং ২৩৪ দায়ের করেছি।

প্রতারণার একাধিক বিয়েসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে গেলেও এই প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতারা।

আওয়ামী মটর শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রাজু বলেন, আমি নিজেই ভুক্তভোগী। করোনার সংকটময়ের শুরুতে মানুষকে সহায়তা করার কথা বলে আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতারক আতিকুর রহমান। এইটাকা পুরোটাই খেয়ে ফেলেছে। এইভাবেই ওরা প্রতারণা করে। এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আতিকুর রহমানের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাগোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।