এখন চাল আমদানির প্রয়োজন নেই

2
এখন চাল আমদানির প্রয়োজন নেই
  • দেশের ধান উৎপাদন পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, ধান উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় কোন ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন এবং কৃষক পর্যায়ে করণীয় বিষয়ে আলাপ করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইদ শাহীন

কালের কণ্ঠ : দেশের ধান উৎপাদন রূপান্তর প্রক্রিয়াকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মো. শাহজাহান কবীর : দেশের বেশির ভাগ জমিতে এখন ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, ধানের ফলন বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং গড় ফলন বিশ্বমানের। খাদ্য নিরাপত্তার জন্যই ধান উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন।

Pop Ads

তাই সরকার থেকে শুরু করে কৃষক—সব পর্যায়েই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ওপর নজর থাকে।
চালের উৎপাদন বাড়াতে ব্রি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা এখন ১১৫টি।

দেশের কৃষক এখন উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদে ঝুঁকছেন। গত অর্থবছরে দেশের মোট ধানিজমির প্রায় ৮১ শতাংশে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ হয়েছে, যা এক যুগ আগে ছিল ৭৩ শতাংশ। দেশের প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে এখন হাইব্রিড ধানের আবাদ বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে বলা যায়, দেশের ধান উৎপাদন একটি সঠিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : দেশজুড়ে দাবদাহ পরিস্থিতির কারণে কি চালের উৎপাদন কম হবে?

মো. শাহজাহান কবীর : গত ৪ এপ্রিল হাওরাঞ্চলে প্রবাহিত গরম হাওয়া (লু হাওয়া) বা ‘হিট শক’ আমাদের কৃষির ওপর নতুন ধরনের অভিঘাত। এই হিট শক চাল উৎপাদনে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। তবে এতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আমরা দেশের হাওরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখেছি। কোনো নেতিবাচক প্রভাবের খবর পাওয়া যায়নি।

এখন খুলনা অঞ্চলের মাঠ পর্যবেক্ষণ করে ব্রিতে ফিরছি। সেখানেও ফলন কমেনি, উল্টো বেড়েছে।
তবে দেশের কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা বা ‘হিট শক’। এটি অস্বস্তি তৈরি করলেও চাল আমদানির দরকার নেই। চাল আমদানি করা হলে দেশের কৃষক পরবর্তী বছরে উৎপাদনে আগ্রহ হারাতে পারেন।

কালের কণ্ঠ : চালের উৎপাদন যথেষ্ট থাকার পরও কেন আমদানি করতে হচ্ছে?

মো. শাহজাহান কবীর : মাথাপিছু দৈনিক চাল গ্রহণের হিসাব বিবেচনায় নিলে ১৭ কোটির মানুষের প্রয়োজন হয় প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ টন চাল। শুধু ভাত হিসেবে এ চাল মানুষ গ্রহণ করে। এর বাইরে বিভিন্ন পোলট্রি ফিড, বীজসহ অন্যান্য প্রয়োজনে চাল ব্যবহার হয় এক কোটি টন। কিন্তু গত বছর উৎপাদন হয়েছে চার কোটি ১৩ লাখ টন। ফলে চাল আমদানির প্রয়োজন নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে চাল আমদানি করতে হয় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে। বিশেষ করে যেকোনো ঝুঁকি মোকাবেলা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার চাল আমদানি করে থাকে।

কালের কণ্ঠ : ধান উৎপাদনে ভর্তুকির অর্থ কি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে?

মো. শাহজাহান কবীর : অতীতে সরকার প্রতিবছর সারের জন্য প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে এবং এখন তা ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এটি এখন ভর্তুকি নয়, সরকারের বিনিয়োগ। এটা কৃষকের প্রয়োজনেই বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই অর্থ সঠিকভাবেই কৃষককের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এর বেশির ভাগই যাচ্ছে সার ব্যবস্থাপনায়, যার সরাসরি সুফল পাচ্ছেন কৃষক। তবে দেশে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমানো গেলে ভর্তুকি অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব। এ জন্য মিউরেট অব পটাশ সারের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : চাল উৎপাদনে সামনের দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

মো. শাহজাহান কবীর : বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়াসহ নানা কারণে ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় বেশ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি কেজি ধানে উৎপাদন খরচ পড়ছে গড়ে প্রায় ৩০ টাকা, চাল উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া বীজের দাম, কৃষি শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। বৃষ্টির অভাবে গত আমন এবং চলতি বোরো মৌসুমে সেচে বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে সরকার কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে ভর্তুকি বা বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধি করছে।