করোনার প্রভাবে কমেছে রোজগার; সংসার চালাবেন কিভাবে ভাবছেন কিছু ?

করোনার প্রভাবে কমেছে রোজগার; সংসার চালাবেন কিভাবে ভাবছেন কিছু। ছবি-প্রতিকী

এই সময়ে সংসার চালাতে প্রয়োজন পরিকল্পনা: 

সুপ্রভাত বগুড়া (জীবন-জীবীকা): করোনাভাইরাসের কারণে দুঃস্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে কর্মীদের কাছে। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কাজ করছেন বাসায় বসে। এ অবস্থায় আয় কমেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। সংকটপূর্ণ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই করছে, অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। বেতন কাটছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে এক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে, আর কর্মীরা পড়েছেন নানা রকমের বিপাকে।

বেতন কাটছে অনেক প্রতিষ্ঠান:

এই লকডাউনের সময় কর্মী ছাটাই এবং নিয়মিত বেতন পরিশোধের জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এমন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন দেশেই বিরাজ করছে এই অবস্থা। তবে এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। আবার অনেকের বেতন কাটা হচ্ছে, যেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানে আবার চলছে কর্মী ছাটাই।
কারণ হিসেবে ‘অর্থনৈতিক মন্দার’ কথা বলা হচ্ছে। কর্মীরা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। যাদের চাকরি চলে যাচ্ছে তারা পড়ছেন ঘোর বিপদে। নতুন কর্মসংস্থানের চিন্তায় বিভোর তারা। কিভাবে চলবে সংসার, পরিবারের কি হবে, এসব ভেবে গভীর সংকটে তারা। তবে সৌভাগ্যক্রমে যাদের চাকরি টিকে যাচ্ছে তাদেরও কষ্টের আছে। বেতন কাটা হচ্ছে তাদের। তবে বেতন কালেও এই সংকটে পরিকল্পনা করে চলতে হবে। কম আয়ে চালিয়ে নিত হবে সংসার।
আবার সম্ভব হলে কিছু সঞ্চয়ও করতে হবে ভবিষ্যত সংকট মোকাবিলার জন্য। এক্ষেত্রে কিছু কৌশলের কথা জানিয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া। প্রয়োজনীয়তা এবং চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ লকডাউন আমাদের একটি মূল্যবান বিষয় শিক্ষা দিয়েছে, তা হলো আমরা কম জিনিস দিয়েও চালিয়ে নিতে পারি। কিন্তু আমরা এতকিছু সংগ্রহ করি বা জমা করি যে তার অনেককিছুই ব্যবহার করিনা।
এটিই প্রয়োজনীয়তা এবং চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য। চাওয়া হলো এমনকিছু যার অনেককিছু্ই বাড়িতে অব্যবহৃত থেকে যায়, আর প্রয়োজনীয়তা হলো যা প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করি। যেমন, আপনার পরিবারে সবার জন্য একটি গাড়ি হলেই চলে, কিন্তু আপনার টাকা আছে তাই আপনি পরিবারের সবার জন্যই একটি করে গাড়ি কিনলেন। আপনি যদি আপনার খরচ কমাতে চান এবং সঞ্চয় করতে চান তাহলে সেভাবেই ব্যয় করুন যা আপনার নিতান্তই প্রয়োজন।

খরচের আগে সঞ্চয়:

কঠিন সময়ে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়। এই সময়ে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেটের একটি কথা অনুসরণ করা জরুরি। তিনি বলেছেন, “খরচের পর যা থাকে তা সঞ্চয় করো না, কিন্তু সঞ্চয়ের পর যা থাকে তাই খরচ করো”। আপনি যদি এই খারাপ সময় পার করতে চান এবং বেতন কাটাকে ক্ষতির কারণ করতে না চান তাহলে বাফেটের এই উক্তিকে আর্থিক স্লোগান করুন।

স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ:

আপনি যেভাবে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে স্বল্প এবং ধীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন, খরচের বেলাতেও তাই করুন। কোনকিছু কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আজ কি এটি সত্যিই আপনার দরকার? কিংবা এর জন্য কি কয়েকমাস অপেক্ষা করা যায়? আপনার উত্তর এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অতিরিক্ত খরচ থেকে আপনাকে বাঁচাবে।

বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা:

আপনি যদি আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হিমশিম খান তখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠত হবে। যখন একটু দরজা বন্ধ হয়ে যায় তখন আলো জ্বালানোর জন্য আরেক দরজা খুলে যায়, বিশেষ করে আর্থিক ক্ষেত্রে। স্থায়ী আয়ের উৎসের পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতে হবে। নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অবসর সময়ে কোনো কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই বাড়তি আয় ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা যেতে পারে।

সময়মতো ধার বা লোন পরিশোধ:

আর্থিক সংকটের কারণে সবাই যে বড় ভুলটি করে থাকে তা হলো নিজেদের ধার বা লোন পরিশোধ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে এই লোন একসময় ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। এবং তখন একসঙ্গে অনেক বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সবসময় চেষ্টা করুন কিস্তি, লোন বা ধার সময়মতো পরিশোধের।

ধৈর্য ধারণ এবং ইতিবাচকতা:

এখন খুব খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি আমরা। এ অবস্থায় সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং ইতিবাচক হতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে, এই অবস্থা চিরস্থায়ী নয়। এটি শেষ হবেই। আপনি যখন খারাপ সময়ের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছাবেন, যখন আর ভার নিতে পারবেন না, তখন অন্যের সহায়তা চাইবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here