গীতিকার তানজির আহমেদ সাকিব এর গান ভাবনা ও অন্তরালের গল্প

589
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এ সময়ের সম্ভাবনাময় তরুণ গীতিকবিদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার হলেন তানজির আহমেদ সাকিব। তিনি একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক ও প্রভাষক। লেখালেখি করেন সেই ছোটবেলা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ালেখার সময় থেকেই। প্রথমে ছড়া কবিতা ও গল্প দিয়ে শুরু বগুড়ার স্থানীয় দৈনিক আজ ও আগামীকাল এবং দৈনিক করতোয়া পত্রিকার কবিতাগুচ্ছ পাতায় নিয়মিত ছড়া কবিতা লিখতেন। তারপর ধীরে ধীরে তাঁর কলমের শাণিত লেখনী বেশ কিছু জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে নিয়মিতভাবে।বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য ও সংস্কৃতির পাতায় নিজের ক্ষুরধার লেখনী দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সর্ব মহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।তিনি উন্মুক্ত গানচর্চার জন্য একক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাউলিয়ানা গানবাজনা একাডেমি।
নিয়মিত তিনি সেখানে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের প্রতিভাবান কন্ঠ শিল্পীদের বিনা পয়সায় গান শেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রকাশিত কবিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, স্বাধীনতা মিশে আছো তুমি,নারী,একদিন হঠাৎ, ভ্রান্তি,একুশ আমার, বিজয়ের চেতনা,জীবন বোধ, নকল,ঈপ্সিত স্বাধীনতা,সমাজ ও সভ্যতা। উপন্যাস ভালোবাসা দাও হারিয়ে যেওনা,ভ্রান্তি, ফ্রেমে বাঁধা জীবন ও ভালোবাসার লাল গোলাপ উল্লেখযোগ্য।পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে লেখালেখির নেশায় এক সময় সাংবাদিকতা শুরু করেন। যা অদ্যাবধি চলমান আছে, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় তিনি আপোষহীন। বর্তমান সমাজের অনেক অসংগতি ও সামাজিক কুসংস্কার এবং আর্থ সামাজিক অবকাঠামোগত টেকসই উন্নয়নে এবং বিভিন্ন আপামর জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নিরলসভাবে লিখে যাচ্ছেন। গল্প কবিতার পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে গানের ভুবনে যাত্রা শুরু করেন সদা হাস্যোজ্জ্বল মেধাবী এ গীতিকবি। দেশাত্মবোধক,আধুনিক,আধ্যাতিক, মহাজনী,দরবারী,ইসলামিক গজল,ফোক বিচ্ছেদ, রোমান্টিক,ডুয়েট, জারীগানসহ সব মিলে প্রায় দুই সহস্রাধিক গান লিখেছেন।তাঁর লেখা প্রত্যেকটি গানই বাণীপ্রধান ও অসাধারণ শব্দ চয়নে ভাবাবেগ মিশ্রিত যা সহজেই অনুমেয় দক্ষতায় ভাবগাম্ভীর্যে ভরপুর।
ইতিমধ্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রায় শতাধিক গান বিভিন্ন সুনামধন্য কোম্পানি থেকে রিলিজ হয়েছে। গানগুলোর মধ্যে বাউল কিরণের কন্ঠে ফিরিয়ে দাও প্রেম,দুঃখ কষ্টের জনম,ও সজনী,ভালোবাসা এই দুচোখে,ভালোবাসা ভাঙ্গে কেন মন,কষ্টের স্মৃতি, আনমনা, কিশোরী কন্যা,পাঠাইলো যে আমারে,দেহ খাঁচা,পিরীতি ভালা না,বনের পাখি,আদরে আদরে, জনপ্রিয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মহিদুল হাসান মন এর কম্পোজিশন ও কন্ঠে সুনীল আকাশ,আর নয় করোনা সচেতনতামূলক গান,শিল্পী নিপা আক্তার মীম এর কন্ঠে নিদয়া বন্ধু, চ্যানেল আই সেরাকন্ঠ শাহীন খান এর কন্ঠে মিস করি জানিস কি তুই,বাউল রাজু মন্ডলের কন্ঠে উত্তরে যাইবার পালা,একদিন যমে ধরবে তোরে,শুদ্ধচিত্তে,সীমা সরকারের কন্ঠে মনের জ্বালা, পাষাণ বন্ধু থাকে বৈদেশে,পাগলও বানাইলারে বন্ধু, নিশীথে নির্জনে আইসো,আবেগী ইমরান এর কন্ঠে বাউলিয়ানা গানবাজনা নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ,মাগো লোকে বলে বাবা নেই, সোনা বন্ধুরে, মায়া দেখায় মিছে, মন পিঞ্জিরায়,বিদায় দেওয়া যায়না,আমার মা,তুইও তো দিলিনা মুছে,মওলার অসীম কারিগরি, বাউলিয়ানা গানবাজনা থিম সং, বলবোনা বলবোনা তোরে,তোর পিরীতে যত পুড়ি, হৃদয় বাড়ি, মাহে রমজান এছাড়াও নিজের কন্ঠে কালের ফল ধরে অকালে, আযান সুর শুনে, পাগল বিধান এর কন্ঠে জীবন গাড়ি, দেহ গাড়ি, পাপী বানাইলে,কলঙ্ক না মাখিলে গায়, পিঞ্জরও ছাড়িয়া,জেগে আছি ভালোই আছি, বিয়াই করতাম না, তোর লাগিয়া কাঁন্দি আজও, অন্ধ বেলাল বয়াতির কন্ঠে মহাস্থানের গান,লইবোনা আর এ সংসারের ভার, আশরাফ আলীর কন্ঠে তুমিই তো কান্ডারী,ওহে রাসুল কইরো মোরে পার,ঐ পারের কান্ডারী,আশেকান,দয়াল বাবা,ভালোবেসে আঘাত সয়ে ও রুমা সরকারের কন্ঠে যাই মুর্শিদের দরবারে, গোরস্থান,আকতার আলমের কন্ঠে দয়াল মুর্শিদ, কি আগুন জ্বালাইলা,গোপন পিরীতি,কুলমান হারাইলাম ও আশিকের কন্ঠে ভালোবেসেছিলে বলে ভালোবেসেছি এবং ঐশী ও আবেগী ইমরান এর কন্ঠে সখি জলসা ঘরে, কালারে, মজা লুটে যাবু কি ছাড়ি উল্লেখযোগ্য। প্রকাশিতব্য দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে ভাষার গান,একুশের গান, রাষ্ট্রভাষা বাংলা আমার গান, স্বাধীনতা কি আর এমন, স্বাধীনতার গান,বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ,স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, মাদকের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য।তিনি যদিও পেশায় একজন সরকারি কলেজ শিক্ষক কিন্তু বাংলা গান নিয়ে তাঁর স্বপ্ন সুদূরপ্রসারী।
শিকড়ের সন্ধানে মাটির টানে সুর আর গান ভাবনা যেন তাঁর নিত্য ধ্যান সাধনা।শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু অবসরে অবকাশে গান নিয়ে লিখতে বসেন ও সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে থাকতে ভালোবাসেন।বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন নিরন্তর। বিশেষ করে শিকড়ের টানে মাটির গানে তথা বাংলা লোকগান কে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে লিখে যাচ্ছেন অসাধারণ কিছু গান।তাঁর লেখা গানে বিরহ কাতরতা,প্রেম ও মানবতা, বাস্তবতা,আধ্যাতিকতার পরিস্ফুটন, সামাজিক অসংগতি, মহাজনী ভাব সুস্পষ্টভাবে বিরাজমান। প্রতিটি গানের গল্প বুননে কোন না কোন মেসেজ পরিলক্ষিত হয়। বাংলা গানের ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে আবেগী আত্মপ্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন,” গান আমার আত্মার খোরাক, মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাই।গান লিখি পেশা হিসেবে নয় নেশা হিসেবে বলতে পারেন আত্মতুষ্টি ও আত্মশুদ্ধির জন্য।”অনেকটা প্রচারবিমুখ এ গীতিকবি প্রতিটি গানের গল্পের অন্তরালে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। গান নিয়ে বাঁচতে এবং চলতে চান আজীবন। আগামীতে তাঁর শাণিত লেখনীর জাদুকরী ছোঁয়ায় আরও ভালো কিছু কালজয়ী গান ভক্ত শ্রোতা ও দর্শকদের উপহার দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৮৫ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তেলিহার গ্রামে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে চতুর্থ। বাবা আফতাব উদ্দিন মন্ডল ও মাতা সুফিয়া বেগম।
সুপ্রভাত বগুড়া/ এম রাসেল আহমেদ