জয়ের দ্বারপ্রান্তে জো বাইডেন, ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে হাতে পাবেন হোয়াইট হাউসের চাবি !!

জয়ের দ্বারপ্রান্তে জো বাইডেন, ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে হাতে পাবেন হোয়াইট হাউসের চাবি !! ছবি-সংগ্রহ

সুপ্রভাত বগুড়া (আন্তর্জাতিক): ভোটপ্রাপ্তির রেকর্ড গড়ে হোয়াইট হাউসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। অন্যদিকে ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা। ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত মিশিগান ও উইসকনসিনে জেতার পর বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ২৬৪ টিতে পৌঁছেছে। একই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২১৪। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যাসিনোর শহর লাস ভেগাস যে রাজ্যে, সেই নেভাদার মাত্র ৬টি ইলেকটোরাল ভোট এখন নিয়ামকের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে।

সেখানে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাইডেন জয়ী হতে পারলেই ম্যাজিক ফিগার ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে হাতে পাবেন হোয়াইট হাউসের চাবি। মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজন ২৭০টি। মার্কিন নির্বাচনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন জো বাইডেন। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। ভেঙেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রেকর্ড। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামা ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়েছিলেন।

Pop Ads

গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জো বাইডেন ৭ কোটি ২১ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ৮৬ লাখেরও বেশি ভোট। ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরের সমর্থকরা। অন্যদিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে বিশ্ব অপেক্ষা করছে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন জানার জন্য। জো বাইডেন জয়ের পথে থাকলেও চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। করেছেন চার মামলা।

বিপরীতে জো বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ট্রানজিশন কাজের জন্য ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের মামলা মোকাবিলার জন্য ডেমোক্র্যাট দলের প্রচার শিবিরের বিশাল আইনজীবী দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে মামলার ব্যয় সামাল দিতে দাতাদের কাছে অর্থ চাওয়া হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যে ফল জানা গেছে তা একাধারে ঠিক, আবার ঠিক নয়। যখন তথ্যে কোনো প্রার্থীর এগিয়ে থাকা দেখা যায়, তখন মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে তাকে বিজয়ী বলা হয়।

ভোটের পরদিন সকাল থেকে এ ধারা চলতে দেখা যায়। কিন্তু এগুলো চূড়ান্ত ফল নয়। পূর্বাভাস মাত্র। চূড়ান্ত ফল আসতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যায়। এ বছর ব্যাপকভাবে ডাকযোগে ভোট আসায় গণনার ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। মূল ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোতে নির্বাচনের আগে এসব ভোট গণনার অনুমতি নেই। তাই নির্বাচনের পরই এসব ভোট গণনা করতে হয়। এসব ভোট গণনায় সময় লাগে বেশি। বিপার্টিশান পলিসি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ম্যাথু উইল বলেন, যদি নির্বাচনে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হয় এবং কোনো প্রার্থীর জয় বিবেচনা করার মতো না হয়, তবে পোস্টে আসা ভোট গণনা চালিয়ে যেতে হবে। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই ৪৪ অঙ্গরাজ্যে পোস্টাল ভোট ও আগাম ভোট নিয়ে ৩০০টি মামলা হয়েছে।

ব্যালট পোস্ট করার ও গ্রহণের সময়সীমার মতো বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে এসব মামলা হয়েছে। রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলো বলেছে, ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে আগে থেকেই বিধিনিষেধের প্রয়োজন ছিল। তবে ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্য, এসব বিধিনিষেধ নাগরিক অধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা। নির্বাচনের পর জো বাইডেন বলেন, রাতভর গণনার পর এটা স্পষ্ট, ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে যে পরিমাণ ভোটের দরকার, তার থেকে বেশি ভোট পাব আমরা। আমরা জিতে গেছি তা ঘোষণা করতে আসিনি আমি। তবে একটা কথা বলতে চাই, গণনা যখন শেষ হবে, আমরাই জয়ী হব।

আইনি অনিশ্চয়তা ও জনগণের বিশ্বাসকে দুর্বল করার নজিরবিহীন চেষ্টা মার্কিন নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশন দ্য অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯-এর কারণে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নির্বাচনটি প্রতিযোগিতামূলক এবং ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণ নীতিগত বিতর্ককে আড়াল করে ফেলেছে এবং পদ্ধতিগত কারচুপির ভিত্তিহীন অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বিবৃতিতে ওএসসিই বলছে, পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ, বিশেষ করে বর্তমান প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে; সেটিও আবার নির্বাচনের রাতে।

এ ধরনের বিষয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে জনগণের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নির্বাচনের পরের রাতে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন ট্রাম্পবিরোধীরা। সহিংসতার আশঙ্কায় অনেক শহরে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মিনিয়াপোলিস শহরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় পুলিশ অন্তত শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনা বন্ধের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছেন এই বিক্ষোভকারীরা। পশ্চিমাঞ্চলীয় ওরিগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডে শেষ রাতে বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, হাতুড়ি এবং রাইফেলও উদ্ধার করা হয়।

পোর্টল্যান্ডের পুলিশ বলছে, পোর্টল্যান্ডের একটি এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে দাঙ্গা ঘোষণার পর পুলিশ অন্তত ১০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পোর্টল্যান্ড পুলিশের এক মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, শহরের উপকণ্ঠে অনেক মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের স্থানে দাঙ্গা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বলছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ থেকে প্রায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আটলান্টা, ডেট্রোয়েট, নিউইয়র্ক, অকল্যান্ড, ওরিগন শহর ছাড়াও আরও বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনার পক্ষের সমর্থকদের সঙ্গে বিপক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। ডেট্রোয়েট শহরে ট্রাম্পপন্থিরা একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ভোটকেন্দ্রের দরজা-জানালায় আঘাত করেন এবং ‘ভোট গণনা বন্ধ কর’ সেøাগান দেন। অ্যারিজোনার ফোনিক্স শহরেও ভোট গণনাবিরোধীরা বিক্ষোভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা এবং শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের অন্তত ১৬৫টি সংস্থার একটি জোট দেশজুড়ে শতাধিক সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। বুধবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছে এ জোট।